প্রতিনিধি ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৩:৫৩:১০ প্রিন্ট সংস্করণ
ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রতিনিধি।।এক মাস ১০ দিন পর ব্রাহ্মণবাড়িয়া আদালতে ফিরেছেন আইনজীবীরা।এর মধ্য দিয়ে বিচারপ্রার্থীদের মাঝে স্বস্তি ফিরেছে।মঙ্গলবার (১৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে আদালতে ফিরেছেন আইনজীবীরা।তবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক ছুটিতে রয়েছেন।তিনি স্বেচ্ছায় ছুটিতে গেছেন নাকি পাঠানো হয়েছে,তা নিশ্চিত করতে পারেননি আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা।
এদিকে,বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালত বর্জন অব্যাহত রেখেছেন আইনজীবীরা। তার আদালতে অর্থাৎ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ থাকা প্রায় তিন হাজার মামলা পরিচালনার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক রবিউল আলমকে।
আদালতে ফেরার বিষয়ে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা বলেন,সোমবার সাধারণ সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী আমরা আদালতে যোগ দিয়েছি।আইনমন্ত্রী ও আইনসচিবের প্রতি শ্রদ্ধা ও বিশ্বাস রেখে আদালতের বিচারকাজে অংশ নিয়েছি আমরা।’
এর আগে গত রবিবার (১২ ফেব্রুয়ারি) জেলা সার্কিট হাউসে জেলা জজসহ একাধিক বিচারক,স্থানীয় প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে আইনজীবীদের সঙ্গে বিচারকদের বিরোধ মিটিয়ে দেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক।ওই দিন আইনমন্ত্রী বলেছিলেন, ‘আইনজীবীরা সোমবার থেকে আদালতে ফিরবেন।তবে মঙ্গলবার ফিরেছেন আইনজীবীরা।
ওই দিন বৈঠক শেষে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞা বলেছিলেন,বৈঠকে আইনমন্ত্রী আমাদের প্রস্তাব দিয়েছেন,নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারকের বিষয়টি তিনি দেখবেন।অচিরেই তার বিষয়টি সুরাহা করবেন।পাশাপাশি জেলা জজের বিষয়টি আমাদের বিবেচনা করার অনুরোধ করেছেন।মঙ্গলবার থেকে আদালতে যাওয়ার কথা ভাবছি আমরা।কারণ বিচারপ্রার্থীরা ভোগান্তিতে আছেন।’
আদালত সূত্র জানায়,শীতকালীন ছুটি শুরুর আগে গত ১ ডিসেম্বর তিনটি মামলা গ্রহণ না করায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের সঙ্গে অশোভন আচরণ করেন আইনজীবীরা।এ নিয়ে বিচারকের সঙ্গে আইনজীবীদের বাগবিতণ্ডা হয়েছিল।এ ঘটনায় আদালত বন্ধ থাকাকালীন ২৬ ডিসেম্বর আইনজীবী সমিতির কার্যালয়ে বিশেষ বৈঠক করে বিচারক ফারুকের আদালত বর্জনের সিদ্ধান্ত নেন আইনজীবীরা।
১ জানুয়ারি আদালত খোলার পর মোহাম্মদ ফারুক বিচারকাজ পরিচালনার জন্য এজলাসে ওঠেন।২ জানুয়ারি জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি তানভীর ভূঞাসহ একদল আইনজীবী ওই বিচারকের এজলাশে গিয়ে তাকে নেমে যেতে বলেন।এ সংক্রান্ত একটি ভিডিও ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়ে।এ নিয়ে আলোচনা-সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
বিচারককে এজলাস থেকে নামতে বলার প্রতিবাদে ৪ জানুয়ারি আদালতের সব গেটে তালা দিয়ে প্রতিবাদ করে বিচার বিভাগীয় কর্মচারী অ্যাসোসিয়েশন।সেইসঙ্গে কর্মবিরতি পালন করেন আদালতের কর্মচারীরা।জেলা দায়রা জজ শারমিন নিগারের ইন্ধনে তারা কর্মবিরতি দিয়েছেন অভিযোগ এনে ৫ জানুয়ারি থেকে জেলার সব আদালত বর্জনের ডাক দেন আইনজীবীরা।এ অবস্থায় ১২ জানুয়ারি ঢাকায় আইনমন্ত্রীর বাসভবনে বৈঠকের পর বিচারক মোহাম্মদ ফারুক এবং জেলা জজ শারমিন নিগারের আদালত ছাড়া সব আদালতে ফেরেন আইনজীবীরা।
পাশাপাশি জেলা জজ শারমিন নিগার,ও বিচারক মোহাম্মদ ফারুক এবং আদালতের নাজির মোমিনুল ইসলাম চৌধুরীর অপসারণ দাবিতে আদালত বর্জনের লাগাতার কর্মসূচি চালিয়ে যান আইনজীবীরা।দাবি পূরণ না হওয়ায় ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে আবারও দ্বিতীয় দফায় সব আদালত বর্জন করেন তারা।
১২ ফেব্রুয়ারি জেলা সার্কিট হাউসে জেলা জজসহ একাধিক বিচারক,স্থানীয় প্রশাসন ও আইনজীবী সমিতির নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন আইনমন্ত্রী।বৈঠকে বিষয়টি সমাধান করে দেন মন্ত্রী।তবে আইনজীবীদের দাবির মুখে বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের বিষয়ে পরে সিদ্ধান্ত দেবেন বলে জানান।সেইসঙ্গে আইনজীবীদের আদালতে ফিরতে বলেন আইনমন্ত্রী।
আদালত সূত্র জানায়,মঙ্গলবারও বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের আদালতে যাননি আইনজীবীরা।বিচারক মোহাম্মদ ফারুক ছুটিতে আছেন।তার আদালতের মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক পরিচালনা করবেন।
জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদক সামসুজ্জামান চৌধুরী কানন বলেন,আদালতের অচল অবস্থা নিরসনে আইনমন্ত্রীর সঙ্গে আইনজীবীদের বৈঠক হয়।তার আশ্বাসের পরিপ্রেক্ষিতে সোমবার সাধারণ সভা করে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক ছুটিতে না যাওয়া পর্যন্ত ওই আদালত ছাড়া সব আদালত বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার করা হয়।’
তিনি বলেন,বিষয়টি সমাধান হওয়ায় আদালতে ফিরেছেন আইনজীবীরা।আমাদের দাবি ছিল,বিচারক মোহাম্মদ ফারুকের অপসারণ।বিষয়টি সমাধানের আশ্বাস দিয়েছেন আইনমন্ত্রী। তবে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এ আমরা যাবো না।সেখানের মামলাগুলো নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এ পরিচালিত হবে।আমরা ওই আদালতে যাবো।’
আইনজীবীরা আদালত বর্জন কর্মসূচি প্রত্যাহার করায় বিচারকাজ শুরু হয়েছে বলে জানালেন জেলা জজ আদালতের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোস্তফা কামাল।তিনি বলেন, ‘নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-১-এর বিচারক ছুটিতে আছেন।তার আদালতে ২৯৪৩টি মামলা আছে।তিনি ছুটিতে থাকায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনাল-৩-এর বিচারক রবিউল আলম ওসব মামলার শুনানি করবেন।তবে বিচারক ফারুক স্বেচ্ছায় ছুটিতে গেছেন,নাকি ছুটিতে পাঠানো হয়েছে,তা আমার জানা নেই।’
আদালতে আসা বিচারপ্রার্থী রেখা আক্তার বলেন,প্রায় দেড় মাস পর আদালত চালু হলো।আশা করছি,এখন আমাদের মামলার শুনানি হবে।’
তানিয়া আক্তার নামে আরেক বিচারপ্রার্থী বলেন, প্রায় দেড় মাস আদালত বন্ধ থাকায় আমরা হয়রানির শিকার হয়েছি। আদালতে এসে ফিরে গেছি।এখন যেহেতু আদালত চালু হয়েছে,আমরা প্রত্যাশা করছি,আমাদের মামলার বিচারকাজ দ্রুত সমাধান হবে।’