অর্থনীতি

আইএমএফ’র কথা শুনলে মুদ্রার দাম পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যেত-গভর্নর

  প্রতিনিধি ৮ ডিসেম্বর ২০২৫ , ৫:৫৪:৫৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেছেন-মুদ্রার বিনিময় হারের ক্ষেত্রে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) কথা শুনলে বাংলাদেশের মুদ্রার দাম পাকিস্তান বা শ্রীলঙ্কার মতো হয়ে যেত।

সোমবার (৮ ডিসেম্বর) পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের এনইসি সম্মেলন কক্ষে ‘টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য মাত্রা অর্জনে বাংলাদেশের অগ্রগতি’ শীর্ষক প্রতিবেদন উপস্থাপন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।

গভর্নর বলেন,বৈদেশিক মুদ্রার বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত ডলারের দাম আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের পরামর্শ অনুযায়ী বাজারভিত্তিক করার পথে বাংলাদেশ এগোয়নি।সেটা হলে মুদ্রার দাম শ্রীলঙ্কা বা পাকিস্তানের মতো দ্রুত ঊর্ধ্বমুখী হতে পারতো।বর্তমানে হয়ত ১৯০-২০০ টাকায় পৌঁছাত।আমরা সব ক্ষেত্রে তাদের কথা শুনিনি।অনেকেই এ সিদ্ধান্তের সমালোচনা করেছেন।তবে আজ আমাদের মুদ্রার বিনিময় হার নিয়ন্ত্রণে আছে।

তিনি আরও বলেন,আগে সাড়ে ৩ বিলিয়ন ডলার বিদেশি দায় পরিশোধে জোর দেয়া হয়েছিল।কারণ এ দায়ের জন্য এলসি খোলার গ্যারান্টির সুবিধা কম ছিল।মুদ্রাবাজার স্থিতিশীলতা ছিল প্রয়োজন,যাতে মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে থাকে। যখন দায়িত্ব নিয়েছিলাম,ডলার দর ছিল ১২০ টাকা; এখন প্রায় ১২২ টাকা।রিজার্ভও বেড়েছে।

সুদহার কমানোর বিষয়ে সরকারের ভেতরে-বাইরে আলোচনা হচ্ছে জানিয়ে গভর্নর বলেন,সরকারের ভেতরে-বাইরে আলোচনা চলছে।তবে সুদহার বাড়ানোর ফলে মূল্যস্ফীতি কমেছে।বর্তমানে মুদ্রাবাজারে কোনো হস্তক্ষেপ করা হচ্ছে না। আমানত হার বেড়েছে,বাজেট সহায়তার জন্য টাকা ছাপানো বন্ধ করা হয়েছে এবং ডলার বেচা বন্ধ হয়েছে।এনবিআর রাজস্ব বাড়ালে সরকারের ঋণের চাপ কমবে এবং আমানত আরও বাড়বে।

এদিকে,রাজস্ব আদায় চলতি বছরে ১৫ শতাংশ বেড়েছে তবু কর-জিডিপি অনুপাত কমছে,যা ভাবনার বিষয় বলে মন্তব্য করেছেন এনবিআর চেয়ারম্যান আবদুর রহমান খান।তিনি বলেন,জিডিপি হিসাবের কোথাও ঘাটতি আছে কি না তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন।ভ্যাট আইন কার্যকরভাবে বাস্তবায়ন করা হয়নি।এখন থেকে করছাড় আর এনবিআর স্বয়ং দেবে না,এজন্য সংসদ থেকে অনুমোদন নিতে হবে।চলতি বছরের প্রথম তিন মাসে রাজস্বে ২০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হলেও ভ্যাট ও অন্যান্য কর কোথায় হারাচ্ছে,তা শনাক্ত করার ওপর জোর দেয়া হচ্ছে।এছাড়া,ডিজিটাইজেশনের মাধ্যমে রাজস্ব সংগ্রহ বাড়ানোর পরিকল্পনাও আছে।

তিনি আরও জানান,রাজস্ব আয় বাড়াতে শুল্ক কমানো হবে, ভ্যাট ও অন্যান্য কর বাড়ানো হবে,নগদ টাকার ব্যবহার কমানো হবে।এতে কর আদায় সহজ হবে এবং ভ্যাট হারের জটিলতা দূর হবে।বর্তমান সরকারের মেয়াদেই এনবিআরের দুই বিভাগে দুইজন সচিব নিয়োগ দেয়া হবে।

বাংলাদেশে বিশ্বব্যাংকের সাবেক মুখ্য অর্থনীতিবিদ ড. জাহিদ হোসেন বলেন,অর্থনীতির বিভিন্ন সূচক বিশ্লেষণে নেতিবাচক দিক এখনো ইতিবাচক দিকের চেয়ে বেশি।তবে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারতো।৫ আগস্টের পর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে শূন্যতার পরিপ্রেক্ষিতে সামষ্টিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থায় অনিয়ম দেখা দিয়েছে।গত দেড় বছরের সংস্কার অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নেয়া গেছে,তবে বড় ধরনের বাস্তবায়ন এখনও হয়নি। সংস্কারের জন্য স্ট্যামিনা এবং রাজনৈতিক ইচ্ছা প্রয়োজন।’

সিপিডির সম্মাননীয় ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে সুদের হার বাড়ানো হয়েছে,যার ফলে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমেছে এবং আয় বৈষম্য বেড়েছে। ব্যবসা সহজীকরণে প্রাতিষ্ঠানিক সংস্কার এবং দুর্নীতি দমন জরুরি ছিল,যা এখনো হয়নি।’

আরও খবর

Sponsered content