অপরাধ-আইন-আদালত

ড. মুহাম্মদ ইউনূস মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় জামিন পেলেন

  প্রতিনিধি ৩ মার্চ ২০২৪ , ৪:৫৭:৩৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনের মামলায় জামিন পেলেন শান্তিতে নোবেলজয়ী অর্থনীতিবিদ ড. মুহাম্মদ ইউনূস। ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন আজ রোববার এ আদেশ দেন।

এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল।

আদেশের আগে ড. মুহাম্মদ ইউনূস আদালতে আত্মসমর্পণ করে জামিনের আবেদন করেন।অপর দিকে দুদকের পাবলিক প্রসিকিউটর ড. ইউনূসের জামিন আবেদনের বিরোধিতা করেন। উভয় পক্ষের শুনানি নিয়ে আদালত ড. ইউনূসের জামিন মঞ্জুর করেন।

গ্রামীণ টেলিকমের কর্মীদের লভ্যাংশের ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে করা মামলায় গত ১ ফেব্রুয়ারি ড. ইউনূসসহ ১৪ জনের বিরুদ্ধে আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় দুদক।

ড. ইউনূস ছাড়া অভিযোগপত্রে গ্রামীণ টেলিকমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. নাজমুল ইসলাম,প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক ও সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. আশরাফুল হাসান, পরিচালক পারভীন মাহমুদ,নাজনীন সুলতানা, মো. শাহজাহান,নূরজাহান বেগম এবং এস এম হাজ্জাতুল ইসলাম লতিফী,আইনজীবী মো. ইউসুফ আলী ও জাফরুল হাসান শরীফ,গ্রামীণ টেলিকম শ্রমিক কর্মচারী ইউনিয়নের সভাপতি মো. কামরুজ্জামান,সাধারণ সম্পাদক ফিরোজ মাহমুদ হাসান,ইউনিয়নের প্রতিনিধি মো. মাইনুল ইসলাম এবং জাতীয় শ্রমিক ফেডারেশনের দপ্তর সম্পাদক মো. কামরুল হাসানকে আসামি করা হয়।

অভিযোগপত্রভুক্ত আসামিদের মধ্যে কামরুল হাসানের নাম তদন্তের পর অন্তর্ভুক্ত করা হয়।অপর ব্যক্তিদের নাম এজাহারে ছিল।

মামলায় ড. ইউনূস ও পারভীন মাহমুদ জামিনে আছেন। অন্য ১২ জনের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত।

দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান বাদী হয়ে গত বছরের ৩০ মে ওই মামলা করেন।মামলার তদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে,আসামিরা ২৫ কোটি ২২ লাখ টাকা আত্মসাৎ করেছেন।অবৈধভাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়েছে;যা মানি লন্ডারিং প্রতিরোধ আইনে অপরাধ।

দুদক জানায়,গ্রামীণ টেলিকমের চেয়ারম্যান ড. ইউনূস ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক নাজমুল ইসলামসহ প্রতিষ্ঠানটির বোর্ড সদস্যদের উপস্থিতিতে ২০২২ সালের ৯ মে গৃহীত এক সিদ্ধান্ত মোতাবেক ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৮ মে একটি ব্যাংক হিসাব খোলা হয়।গ্রামীণ টেলিকমের কর্মচারীদের পাওনার লভ্যাংশ বিতরণে শ্রমিক ইউনিয়ন ও গ্রামীণ টেলিকমের মধ্যে একই বছরের ২৭ এপ্রিল একটি সমঝোতা চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল।চুক্তিতে ৮ মে ব্যাংক হিসাব খোলা হয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়, যা বাস্তবে অসম্ভব। কাগজপত্র নকল করে এটা করা হয়েছে।

দুদকের পক্ষ থেকে বলা হয়,চুক্তি অনুযায়ী ও ১০৮তম বোর্ড সভার (গ্রামীণ টেলিকম) সিদ্ধান্ত মোতাবেক ২০২২ সালের ১০ মে গ্রামীণ টেলিকমের ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংকের মিরপুর শাখা থেকে ঢাকা ব্যাংকের গুলশান শাখায় ৪৩৭ কোটি ১ লাখ ১২ হাজার ৬২১ টাকা স্থানান্তর করা হয়। কর্মচারীদের লভ্যাংশের টাকা বিতরণ না করে তা আত্মসাৎ করা হয়।

অবশ্য ড. ইউনূসের আইনজীবী আবদুল্লাহ আল মামুন প্রথম আলোকে বলেছেন,কর্মীরা লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা চেয়ে আদালতে গেলে তাঁদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়।সমঝোতার ভিত্তিতে আইনজীবীদের খরচ বাবদ কর্মীরা ওই ২৫ কোটি টাকা অগ্রিম চেয়েছিলেন।সেটিই দেওয়া হয়েছে।এ বিষয়ে কর্মীদের লিখিত সম্মতি আছে।তিনি আরও বলেন, কর্মীরা ব্যাংক হিসাব খুলতে দেরি করায় চুক্তিতে সেই জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছিল।পরে দুই পক্ষ সেখানে ব্যাংক হিসাব নম্বর বসায়।সেটি সম্মতির ভিত্তিতে হয়েছে।

লভ্যাংশের ভাগ বাবদ পাওনা টাকা চেয়ে গ্রামীণ টেলিকমের ১৭৬ কর্মী শতাধিক মামলা করেছিলেন।তাঁরা হাইকোর্টেও গিয়েছিলেন।পরে তাঁদের সঙ্গে গ্রামীণ টেলিকমের সমঝোতা হয়।ড. ইউনূসের আইনজীবীরা বলছেন,সমঝোতার মাধ্যমে পাওনা পেয়ে কর্মীরা ২০২২ সালের মে মাসে মামলাগুলো প্রত্যাহার করেন।এরপর পাওনা পরিশোধের বিষয়টিকেই অর্থ আত্মসাৎ হিসেবে ধরে দুদক মামলা করে।

আইনজীবী বদুল্লাহ আল মামুন বলেন,সরকারের নির্দেশে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান অধিদপ্তর দুদকে চিঠি দিয়েছে;যা তারা পারে না।আর ড. ইউনূস যখন এ বিষয়ে মুখ খুলেছেন,তখন তড়িঘড়ি করে দুদক তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দিয়েছে।এর মাধ্যমে ড. ইউনূসকে হেয়প্রতিপন্ন করা হয়েছে।’

প্রসঙ্গত,আজ সকালেই ড. ইউনূস শ্রম আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের করা মামলায় কাকরাইলে শ্রম আপিল ট্রাইব্যুনালে হাজির হয়ে জামিন নেন।পরে বেলা আড়াইটায় পুরান ঢাকায় তিনি ঢাকা মহানগরের জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতে হাজির হয়ে জামিন চান।

আরও খবর

Sponsered content