জাতীয়

ভূমি অধিগ্রহণ ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জটিলতায় থমকে গেছে বরিশাল ভোলা মহাসড়কে নির্মাণ কাজ

  প্রতিনিধি ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৭:১১:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।ভূমি অধিগ্রহণ ও উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জটিলতায় থমকে গেছে বরিশাল ভোলা মহাসড়কে নির্মাণ কাজ।বরিশাল- ভোলা ও লক্ষীপুর মহাসড়কের সার্বিক উন্নয়ন। প্রায় ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ এ মহাসড়কটি বর্তমানের ১৮ ফুট প্রস্থ থেকে ১২ ফুট হার্ডসেল্ডার সহ ৩৬ ফুটে উন্নীতকরনের পাশাপাশি ক্যারেজওয়ের মান উন্নয়ন করার লক্ষ্যে অনুমোদিত প্রকল্পটি গত ২০২১ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা থাকলেও নানামুাখি জটিলতায় এখনো আটকে আছে কাজের উল্লেখযোগ্য অংশ।

ভোলা-বরিশাল সেতু মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি প্রতিশ্রুতিি অগ্রাধিকার প্রকল্প। ১২ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করা হবে।এ প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে দেশের কি লাভ হবে তার বিশেষ কিছু তুলে ধরছি যা আমাদের প্রত্যেক ভোলাবাসীর অন্তরে থাকা দরকার বলে মনে করি যেন প্রয়োজন দেখা দিলেই আমরা সবাই যৌক্তিকতাগুলো প্রচার করতে পারি।
১) এ সেতুটি শুধুই ভোলার সাথে বরিশালের কানেক্টিভিটি নয় এটি হল পুরো চট্টগ্রাম বিভাগের সাথে ভোলা হয়ে বরিশাল ও খুলনা বিভাগের ২১ টি জেলার কানেক্টিভিটি। এ ২১টি জেলার ৬ কোটি মানুষের আন্তযোগাযোগে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন সাধিত হবে এ সেতু হলে আর সাথে ভোলা-লক্ষ্মীপুর নৌ-পথের সমস্যা দূর হলে অর্থাৎ মতির হাটে ফেরিঘাট হলে। পরবর্তীতে ভোলা-লক্ষ্মীপুর সেতুর সম্ভব্যতাও রয়েছে বিবেচনায়।
২) দেশের প্রধান সমুদ্র বন্দর চট্টগ্রাম হতে মালামাল নিয়ে ঢাকা হয়ে দেশের দক্ষিণ পশ্চিমাঞ্চলে এখন যাতায়ত করতে হয়। অথচ প্রস্তাবিত সেতুটি হলে দেশের প্রধান দুই সমুদ্র বন্দরের দূরত্ব প্রায় ২০০ কি মি কমে যাবে। ঢাকার উপর চাপ কমবে। জ্বালানী, সময় ও অর্থ সাশ্রয় হবে বহুগুণে।
৩) ভোলার উদ্বৃত্ত খাদ্য শষ্য, মৎস্য, নারকেল, সুপারী, বাদাম, ডাল, অতি স্বল্প সময়ে দেশের ভিভিন্ন স্থানে নেওয়া যাবে।
৪) ভোলায় প্রাপ্ত গ্যাস রিজার্ভকে কাজে লাগিয়ে এবং উৎপাদিত বিদ্যুৎ ব্যবহার করে ভোলাতে বৃহৎ, মাঝারী ও ক্ষুদ্র শিল্প গড়ে তুলে দেশের অর্থনীতিকে গতিশীল করা যাবে।
৫) ভোলার বিভিন্ন পর্যটন স্পট বিশেষ করে মনপুরা, চর কুকড়ী মুকড়ী এর পর্যটন সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনীতিতে বড় ভূমিকা রাখা যাবে।

মহাসড়কটি প্রশস্ত করা সহ মান উন্নয়নের মূল ডিপিপি তৈরীর সময় সড়ক অধিদপ্তরের জমি কতটুকু রয়েছে, তা বিবেচনায় নেয়া হয়নি। ফলে নির্মান প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেয়া হলেও জমি বুঝিয়ে দিতে না পারায় মহাসড়কটির বরিশাল সড়ক বিভাগের ১৩ কিলোমিটারের বেশীরভাগ অংশে তৈরি হয়েছে জটিলতা। ফলে থেমে থেমে ও বাদ দিয়ে দিয়ে কাজ করতে হচ্ছে ঠিকাদারকে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মহিউদ্দিন বাঁশি ও ওয়াহিদ কনস্ট্রাকশনের পক্ষে উজ্জ্বল প্রতিনিধি জানান, এখানে বরিশাল অংশে বেশিরভাগ সড়ক ব্যাক্তি মালিকানার জমিতে। ফলে জমি অধিগ্রহণ জটিলতা রয়েছে। আমরা রোডস এন্ড হাইওয়ের সড়ক যেটুকু পেয়েছি সেটুকুই কাজ করছি। এতে কোথাও ৩৬ ফুট, কোথাও ১২ ফুট হবে। কাজের মান ঠিক রাখার যথাযথ চেষ্টা করছি আমরা। তবে জমি অধিগ্রহণ না হলে কিছু অংশে কাজ শুরুই করতে পারিনি।এই জটিলতায় এখন মহাসড়কটির বরিশাল অংশে প্রায় ২৫.৪২ হেক্টর জমি হুকুম দখল করতে আরো প্রায় ১৮৭ কোটি টাকার বাড়তি বরাদ্দ যুক্ত হয়ে প্রায় ৫শ কোটি ছুঁতে চলেছে প্রকল্পের মোট ব্যায়।

অপরদিকে, ভোলা সড়ক বিভাগের আওতাধীন ১৬.৪৭ কিলোমিটার মহাসড়কটি নির্মানকালে এর দু পাশে যেসব গাছ লাগান হয়েছিল, প্রশস্তকরণ প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে তার একটি বড় অংশই কেটে ফেলতে হয়েছে। সরকারী নীতিমালার অলোকে এসব গাছ অপসারণ করে মহাসড়কটি প্রশস্ত করার উদোগে নেয়া হলেও একটি বেসরকারী সংস্থার আবেদনে বিষয়টি নিয়ে উচ্চ আদালতের নিষেধাজ্ঞার কারনেও প্রকল্পটি বাস্তবায়নে জটিলতার সৃষ্টি হয় ও দীর্ঘসূত্রতা তৈরি হয়।

স্থানীয়রা অনিয়মের প্রতিবাদ করলেও তা কানে নেয়নি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। অভিযোগ উঠেছে, তদারকির দায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীর সঙ্গে ঠিকাদারের সু সম্পর্কসহ নানাবিধ সুবিধা গ্রহণেরও। আর এ কারণেই হয়তো ঠিকাদারের পক্ষে পাওয়া গেল বরিশালের স ও জ কর্তৃপক্ষের বক্তব্য।
সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ) সূত্র জানা গেছে, বরিশাল- ভোলা- লক্ষ্মীপুর জাতীয় মহাসড়কের (এন-৮০৯) বরিশালের চরকাউয়া থেকে ভোলার ইলিশা ফেরিঘাট হয়ে লক্ষ্মীপুর পর্যন্ত যথাযথ মান ও প্রশস্ততায় উন্নীতকরণ প্রকল্পের কাজ এখন দ্রুত গতিতে চলছে।

সড়ক ও জনপদ কর্মকর্তা জানান, বরিশাল অংশের ১৩ কিলোমিটারের কিছু অংশ অধিগ্রহণ জটিলতায় আটকে আছে। লক্ষ্মীপুর অংশে রয়েছে মজু চৌধুরীহাট ফেরিঘাট থেকে লক্ষ্মীপুর আন্তঃজেলা বাস টার্মিনাল পর্যন্ত সাড়ে ১০ কিলোমিটার সড়ক সংস্কার ও প্রশস্তকরণ কাজ প্রায় শেষের পথে।

ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মো. মঈনউদ্দিন (বাঁশি) লিমিটেড এর পক্ষে ভোলা লক্ষীপুর অংশে কাজটি স্থানীয়ভাবে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বসুরহাটের ইস্কান্দার মির্জা শামীম এবং বরিশাল অংশে উজ্জ্বল সমন্বয়কারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।

সওজ বরিশালের প্রকৌশলী মাসুদ মাহবুব সুমন জানালেন, সড়কের কাজ দিনারের পুল অংশে এই মূহুর্তে বন্ধ রয়েছে কারণ এখানে জেলা পরিষদের উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করার কথা ছিলো। এজন্য বেশ কয়েকবার নোটিশও দেয়া হয়েছে।
আর জেলা পরিষদের নির্বাহী কর্মকর্তা আহসান হাবীব জানালেন, এ বিষয়ে আমরা কিছুই জানিনা। এটা খুব সম্ভব জেলা প্রশাসন কার্যালয়ের বিষয়।

আরও খবর

Sponsered content