বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংবাদ

২০০ জন ফ্রিল্যান্সারের আয় মাসে প্রায় ১ লাখ ডলার,যা বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি টাকার বেশি

  প্রতিনিধি ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:৩৪:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।গত কথা হয় চট্টগ্রামের ২০০ জন ফ্রিল্যান্সারের সঙ্গে।এই ২০০ জন ফ্রিল্যান্সারের মধ্যে কেউ গৃহিণী,কেউ শিক্ষক,কেউ শিক্ষার্থী আবার কেউ চাকরি ছেড়ে যুক্ত হয়েছেন এই পেশায়।তাঁদের কেউ মাসে ১০০ ডলার,কেউবা ১০ হাজার ডলারও আয় করেন।গড়ে তাঁদের প্রত্যেকের আয় মাসে প্রায় ৫০০ ডলারের মতো।অর্থাৎ এই ২০০ জন ফ্রিল্যান্সারের আয় মাসে প্রায় ১ লাখ ডলার,যা বাংলাদেশি টাকায় ১ কোটি টাকার বেশি।

চট্টগ্রাম নগরের লালখান বাজার এলাকার বাসিন্দা জুথিকা দাশ।একসময় একটি টেলিকম কোম্পানিতে কাজ করতেন। সেই চাকরি ছেড়ে তিনি এখন একজন মুক্ত পেশাজীবী বা ফ্রিল্যান্সার। ০১৫ সাল থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ে যাত্রা শুরু তাঁর। বর্তমানে ফ্রিল্যান্সিংয়ের পাশাপাশি একটি আইটি প্রশিক্ষণকেন্দ্রের প্রশিক্ষক হিসেবেও কাজ করছেন তিনি।

নভেম্বর মাসের শুরুর দিকে কথা হয় জুথিকা দাশের সঙ্গে। তিনি জানান,স্বামী ও এক সন্তান নিয়ে সংসারের পাশাপাশি ফ্রিল্যান্সিং–জগৎও সামলে নিচ্ছেন তিনি।সব মিলিয়ে গড়ে মাসে এক হাজার ডলারের মতো আয় হয়।সব মাসে আয় একই থাকে না।কখনো কখনো কমবেশি হয়।

চট্টগ্রাম তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, সরকারিভাবে চট্টগ্রামে নিবন্ধিত ফ্রিল্যান্সারের সংখ্যা এখন পর্যন্ত ১ হাজার ৮৩১ জন।এর বাইরেও কাজ করছেন হাজারো ফ্রিল্যান্সার। তাঁদেরও নিবন্ধনের আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে।

ঘর সামলে কাজও সামলান
চট্টগ্রামের লোহাগাড়া উপজেলার বাসিন্দা রিনা আক্তার। ২০১৯ সালে স্থানীয় একটি প্রশিক্ষণকেন্দ্র থেকে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ে একটি এবং গ্রাফিক ডিজাইনের ওপর আরেকটি প্রশিক্ষণ নেন।রিনা আক্তার বলেন,শুরুতে বন্ধুর প্রতিষ্ঠান থেকে বাকিতে ল্যাপটপ নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি।এখনো সেই ল্যাপটপেই কাজ করেন।সামনে দ্রুতগতির ল্যাপটপ কেনার ইচ্ছা আছে তাঁর।

নগরের চকবাজার এলাকার বাসিন্দা শেখ খাদিজা খানম। তিন ছেলে আর স্বামী নিয়ে তাঁর সংসার।কৌতূহল থেকে ফ্রিল্যান্সিংয়ের যাত্রা শুরু খাদিজার।ফ্রিল্যান্সিং করে প্রতি মাসে আয় করেন প্রায় দুই হাজার ডলার।কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পেয়েছেন জাতীয় পর্যায়ে সফল ফ্রিল্যান্সার হিসেবে সম্মাননা।

চট্টগ্রামে শুরুর দিকের ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে একজন হারুন উর রশিদ। ২০১৫ সালে চাকরি ছাড়ার পর ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন তিনি।এসইও,মার্কেটিং,ড্রপ শিপিং,পেইড মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করেন তিনি।বর্তমানে হারুনের আয় চট্টগ্রামের অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের থেকে অনেকটাই বেশি।গড়ে হারুন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার ডলারের কাছাকাছি আয় করেন শুধু ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকেই।

একই গল্প নগরের হালিশহর এলাকার বাসিন্দা মাকসুদা খানমের।ফ্রিল্যান্সিং–জগতে পার করছেন প্রায় এক যুগ। ২০১২ সালে কনটেন্ট রাইটিং দিয়ে শুরু করেন ফ্রিল্যান্সিং। বর্তমানে বিশ্বের বৃহত্তম অনলাইন শপ অ্যামাজনের অ্যাফিলিয়েট মার্কেটিং করেন তিনি।পাশাপাশি আছে নিজের একটি ওয়েবসাইট।সব মিলিয়ে মাসে আয় করেন প্রায় ৫০০ ডলারের মতো।

মাকসুদা খানম বলেন,তাঁর ওয়েবসাইটে অ্যামাজনের বিভিন্ন পণ্যের রিভিউ দেওয়া থাকে।সেখান থেকে ক্রেতারা রিভিউ দেখে পণ্য অর্ডার করেন অ্যামাজনে।এ থেকে তিনি কিছু কমিশন পান পণ্যভেদে।এর পাশাপাশি একটি ইউটিউব চ্যানেলও রয়েছে তাঁর।

আগে শিখেছেন,এখন শেখাচ্ছেন:-!
২০১৭ সালে বন্ধুদের কাছ থেকে মাস হিসেবে ল্যাপটপ ভাড়া নিয়ে ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন চট্টগ্রামের আতুরার ডিপো এলাকার বাসিন্দা জুনায়েদ আমান।ছবি এডিটিং,পোস্টার ডিজাইন,থাম্বনেইল ডিজাইন ও ভিডিও এডিটের কাজ করতেন সে সময়।২০১৮ সালে এক লাখ টাকার বেশি দামে নিজের প্রথম কম্পিউটার কেনেন তিনি।

জুনায়েদ আমান বলেন,ফ্রিল্যান্সিং খাতের পাশাপাশি বর্তমানে অন্যান্য ব্যবসার দিকে কাজ করছেন এখন।ফ্রিল্যান্সিং থেকে বর্তমানে গড়ে প্রতি মাসে এক হাজার ডলারের মতো আয় হয় তাঁর।এ ছাড়া নিজের একটি অনলাইন লার্নিং প্ল্যাটফর্মও রয়েছে তাঁর।সেখান থেকে নতুন ফ্রিল্যান্সাররা বিভিন্ন স্কিল শিখছেন।

চট্টগ্রামে শুরুর দিকের ফ্রিল্যান্সারদের মধ্যে একজন হারুন উর রশিদ।২০১৫ সালে চাকরি ছাড়ার পর ফ্রিল্যান্সিং শুরু করেন তিনি।এসইও,মার্কেটিং,ড্রপ শিপিং,পেইড মার্কেটিং ইত্যাদি বিষয়ে কাজ করেন তিনি।বর্তমানে হারুনের আয় চট্টগ্রামের অন্যান্য ফ্রিল্যান্সারদের থেকে অনেকটাই বেশি। গড়ে হারুন প্রায় ৮ থেকে ১০ হাজার ডলারের কাছাকাছি আয় করেন শুধু ফ্রিল্যান্সিং খাত থেকেই।বর্তমানে হারুনের নিজেরই একটি ফ্রিল্যান্সিং এজেন্সি রয়েছে।

ফ্রিল্যান্সারদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে চট্টগ্রাম ফ্রিল্যান্সার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নজরুল ইসলাম বলেন, বাংলাদেশে এখনো পেপল চালু হয়নি।অধিকাংশ ক্লায়েন্ট পেপলের মাধ্যমে পেমেন্ট করতে চান।বারবার আশ্বাস দিলেও বাংলাদেশে এখনো তা চালু হয়নি।এর ফলে অনেক কষ্টে পেমেন্টের টাকা আনতে হয় ফ্রিল্যান্সারদের।সরকারের পক্ষ থেকে এই বিষয়গুলো দেখা হলে তাঁদের কাজ আরও গতিশীল হবে।

জানতে চাইলে চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. সাদি উর রহিম বলেন, ইতিমধ্যে একটি প্রকল্পের আওতায় ৫০০ জন ফ্রিল্যান্সারের প্রশিক্ষণের জন্য আবেদন গ্রহণ শেষ হয়েছে। এ ছাড়া তাঁদের বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আইসিটি বিভাগে আলোচনা করা হচ্ছে।

আরও খবর

Sponsered content