প্রতিনিধি ১২ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৫:৫২:২৮ প্রিন্ট সংস্করণ
গুরুদাসপুর (নাটোর)প্রতিনিধি।।হামিদুলের বাম পায়ে শিকল পরানো।লম্বা শিকলে তালা ঝুলিয়ে বেঁধে রাখা হয়েছে গাছের সঙ্গে।সেখানেই ভেজা মাটিতে খাওয়া-ঘুমানো।বসে থাকা। চিকিৎসার সার্মথ্য না থাকায় হামিদুলের পায়ের সেই শিকল আর খোলা হয়নি।এভাবেই কেটেছে হামিদুলের শিকলবন্দি পাঁচ বছর।
মানসিক রোগী হওয়ায় ১৯ বছরের তরুণ হামিদুল এখানো শিকলবন্দি।হামিদুলের বাড়ি নাটোরের নলডাঙ্গা উপজেলার পশ্চিম মাধনগড়ের বামনপাড়া গ্রামে।একই গ্রামে হামিদুলের নানার বাড়ি।মূলত নানা বাড়ির আঙ্গিনার একটি আম গাছের গোড়ায় শিকলে বেঁধে রাখা হয় হামিদুলকে।
হামিদুলের পিতা জহুরুল ইসলাম একজন দরিদ্র দিনমজুর। তিনি বলেন,দশ বছর বয়সি শিশু হামিদুল ২০১৪ সালে একটি নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়েছিল।ওই সময় ব্রহ্মপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রতিবেশী উজ্জ্বল হোসেন ২ নম্বর ওয়ার্ড থেকে সদস্যপদে প্রার্থী হয়েছিলেন।পরিবারের লোকজনের অগোচরে হামিদুল নির্বাচনী প্রচারণায় গিয়ে সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হয়।সেই দুর্ঘটনায় মাথায় গুরুতর আঘাত পায় হামিদুল।স্থানীয় চিকিৎসায় হামিদুলের কাটা-ছেঁড়া সেরে উঠলেও মাথা ব্যথায় কাতর হয়ে পড়ে শিশু হামিদুল।
তিনি বলেন,দুর্ঘটনার চার বছরের মাথায় ১৮ সালের দিকে মানসিক রোগী হয়ে যায় হামিদুল।প্রতিবেশীদের সঙ্গে উদ্ভট আচরণ করতে থাকে।ভাঙচুর মারধর করতে শুরু করে। নিরুপায় হয়ে সেই থেকে ছেলেকে শিকল পড়িয়ে বেঁধে রাখেন তারা।
প্রতিবেশীরা জানান,শিকলবন্দি হামিদুল কখনো অট্টহাসিতে ফেটে পড়ে।কখনো অঝরো কাঁদে।দুই ভাইয়ের মধ্যে হামিদুল বড়। ছোট বেলায় সে পড়ালেখার প্রতি মনোযোগী ছিল।ছিল দুরন্ত।
হামিদুলের মা হাজরা বেগম ইত্তেফাককে বলেন,দিনের বেলায় বুকের ধনকে গাছের সঙ্গে শিকলে বেঁধে রাখতে তার বুক ফেটে যায়।রাতে ঘুম থেকে উঠে ছোটাছুটি করায় পালা করে তারা স্বামী-স্ত্রী মিলে ছেলেকে পাহারা দেন।বয়সের সঙ্গে হামিদুলে মানশিক সমস্যাও বেড়েছে।খাবার সামনে কখনো খায় আবার কখনো ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখে।উন্নত চিকিৎসা করানো গেলে হামিদুলকে ভালো করা যেত।কিন্তু তাদের আর্থিক স্বচ্ছলতা নেই।এ কারণে চিকিৎসাও করাতে পারছেন না।
তিনি বলেন,অসুস্থ ছেলে হামিদুলকে দেখাশোনার জন্য এখন আর কাজে যেতে পারেন না তার স্বামী।নিরুপায় হয়ে স্বামী-সন্তান নিয়ে তিনি বাপের বাড়িতে থাকেন।সেখানেও চরম টানাপোড়েন চলছে।তারা সরকারি কোনো সহায়তা পান না। প্রতিবন্ধী ভাতার জন্য ইউনিয়ন পরিষদে ঘুরেও কোনো লাভ হয়নি।
নলডাঙ্গার সমাজসেবা কর্মকর্তা সুমন সরকার ইত্তেফাককে বলেন,হামিদুলের অসহায়ত্বের কথা তারা জেনেছেন। হামিদুলের নামে প্রতিবন্ধী ভাতার কার্ড দেওয়ার সিদ্ধান্তও হয়েছে।
যার নির্বাচনী প্রচরণায় গিয়ে হামিদুল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছিল,সেই সদস্যপদপ্রার্থী উজ্জ্বল হোসেন বলেন, সেবারের নির্বাচনে তিনি জয়ি হতে পারেননি।এতে করে আর্থিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েন।হামিদুল প্রচারণায় গিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করছেন।
নলডাঙ্গা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা দেওয়ান আকরামুল হক ইত্তেফাককে বলেন,অসুস্থ্য হামিদুলের খোঁজ নিয়ে সহায়তা দেওয়া হবে।