সারাদেশ

মাতারবাড়ী বন্দর চালুর আগেই সেখানে আগামী মার্চে কয়লাবাহী বড় জাহাজ ভেড়ানো হবে

  প্রতিনিধি ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ , ২:৩৯:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।মাতারবাড়ী বন্দর চালুর আগেই সেখানে আগামী মার্চে কয়লাবাহী বড় জাহাজ ভেড়ানো হবে।কয়লাবিদ্যুৎকেন্দ্র চালু হবে আগামী বছর।এ ছাড়া আগামী জুলাই-আগস্ট থেকে প্রকল্পটির আওতায় মাতারবাড়ী টার্মিনাল থেকে চট্টগ্রাম-কক্সবাজার মহাসড়ক পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার সংযোগ সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হবে।

লবণের মাঠ খনন করে বানানো হয়েছে সাগর থেকে পণ্যবাহী জাহাজ চলাচলের পথ।এটিই হবে মূল টার্মিনালে জাহাজ আসা–যাওয়ার মূল নৌপথ।কৃত্রিম এই চ্যানেল বা নৌপথে যাতে ঢেউ না আসে,সে জন্য তীর থেকে সাগরের দুই কিলোমিটার পর্যন্ত বাঁধও নির্মাণ করা হয়ে গেছে।

এর ফলে জাহাজ জেটিতে থাকলে দুলবে না।পণ্য খালাস করা যাবে সহজে।এখন জেটিতে পণ্য খালাসের যন্ত্রপাতি বসানো হচ্ছে।নৌপথটি তীরে মেশার একটু আগে ডান দিকে গড়ে উঠবে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল।এটি নির্মাণের জন্য ভারী সব যন্ত্রপাতিও তৈরি। এখন শুধু যন্ত্রগুলোর আওয়াজ শোনার অপেক্ষা।

নৌপথ আরও প্রশস্ত করার কাজ এখন শেষ পর্যায়ে রয়েছে। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম খননযন্ত্র ‘ক্যাসিওপিয়া–ফাইভ’ দিয়ে সেখানে বালু–মাটি খোঁড়া হচ্ছে।সরেজমিনে গত রোববার চট্টগ্রাম বন্দর থেকে সাগরপথে ৭০ কিলোমিটার দূরে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনাল নির্মাণ প্রকল্প এলাকায় গিয়ে এমন চিত্রই দেখা গেছে।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের কর্মকর্তারা জানান,গেল নভেম্বরে টার্মিনাল নির্মাণের দরপত্র খোলা হয়েছে।এখন তার মূল্যায়ন চলছে। ঠিকাদার নিয়োগের পরই নির্মাণকাজ শুরু হবে।দুই টার্মিনালে মোট ৭৬০ মিটার লম্বা জেটি নির্মাণ হবে।সেখানে ৪৬০ মিটার দীর্ঘ জেটিতে ভিড়বে ৩৫০ মিটার লম্বা কনটেইনার জাহাজ।আর ৩০০ মিটার লম্বা জেটিতে ভিড়বে ২০০ মিটার লম্বা সাধারণ জাহাজ। নৌপথে এখন পানির গভীরতা ১৬ মিটার।এই গভীরতা ব্যবহার করে ১৪ থেকে সাড়ে ১৪ মিটার গভীরতার জাহাজ ভেড়ানো সম্ভব হবে।২০২৬ সালের ডিসেম্বরে চালু হবে জাহাজ থেকে কনটেইনার ও পণ্য ওঠানো–নামানোর এই টার্মিনাল।

বাংলাদেশে এখন কোনো গভীর সমুদ্রবন্দর নেই।ফলে কনটেইনারে পণ্য আমদানি–রপ্তানির জন্য ছোট জাহাজের ওপর নির্ভর করতে হয়।দেশে এখন চট্টগ্রাম বন্দরের মূল জেটিতে সর্বোচ্চ দুই হাজারের কমবেশি একক কনটেইনার পরিবহনের উপযোগী জাহাজ ভিড়তে পারে।মাতারবাড়ীতে ভিড়তে পারবে আট হাজার একক কনটেইনার পরিবহনের উপযোগী বড় জাহাজ।এখন সাগরে কনটেইনারবিহীন বড় জাহাজ থেকে ছোট জাহাজে পণ্য স্থানান্তর করা হয়। মাতারবাড়ীর জেটিতে এ ধরনের জাহাজ ভেড়ানো যাবে। যেসব পণ্য জেটিতে নামানো দরকার,সেগুলো মাতারবাড়ী টার্মিনালে খালাসের সুযোগ থাকবে।

নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়–সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি রফিকুল ইসলামের নেতৃত্বে কমিটির সদস্যরা রোববার মাতারবাড়ীর বন্দর উন্নয়ন প্রকল্পের কার্যক্রম দেখতে যান। দেশের অর্থনৈতিক সংকটে এ প্রকল্পের বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হবে কি না,জানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,মাতারবাড়ীর কার্যক্রম ভালোভাবেই এগিয়ে যাচ্ছে। সংকটের কারণে কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত হবে না।কারণ,এটি সরকারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প।

মাতারবাড়ী হতে যাচ্ছে দেশের প্রথম গভীর সমুদ্রবন্দর।২০২০ সালের মার্চে ১৭ হাজার ৭৭৭ কোটি টাকার এ প্রকল্প একনেকে অনুমোদিত হয়।এর মধ্যে প্রায় ১২ হাজার ৮৯৩ কোটি টাকা ঋণ দিচ্ছে জাপান।আর সরকার ২ হাজার ৬৭১ কোটি টাকা ও চট্টগ্রাম বন্দর ২ হাজার ২১৩ কোটি টাকা জোগান দেবে।

বন্দর কর্মকর্তারা জানান,মাতারবাড়ীর গভীর সমুদ্রবন্দরের টার্মিনালকে দেশের ও প্রতিবেশী দেশগুলোর পণ্য পরিবহনের কাজে লাগানো যাবে।শুরুতে নৌপথের পাশাপাশি সড়কপথে যোগাযোগ–সুবিধা থাকবে।এরপর চট্টগ্রাম–কক্সবাজার রেললাইন মাতারবাড়ী বন্দরের সঙ্গে যুক্ত হলে রেলপথেও যোগাযোগ–সুবিধা পাওয়া যাবে।

মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দর হল চট্টগ্রাম বন্দরের অধীন প্রকল্প।চট্টগ্রাম বন্দরের চেয়ারম্যান রিয়ার অ্যাডমিরাল এম শাহজাহান বলেন,মাতারবাড়ী চালু হলে এটি এ অঞ্চলে সমুদ্রপথের বাণিজ্যের কেন্দ্রবিন্দুতে পরিণত হবে।মাতারবাড়ী থেকে সরাসরি বিশ্বের বিভিন্ন বন্দরে বড় জাহাজ চলাচল করতে পারবে।

আরও খবর

Sponsered content