আন্তর্জাতিক

সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে একের পর এক এলাকা দখল করে নিচ্ছে-আরকান আর্মি

  প্রতিনিধি ৪ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ৩:৩৭:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।ডিসেম্বর থেকে গুরুত্বপূর্ণ সীমান্ত অঞ্চলে বিদ্রোহী জাতিগোষ্ঠীর যোদ্ধাদের সামনে দাঁড়াতে পারছে না মিয়ানমারের সেনাবাহিনী।যুদ্ধে এথনিক আর্মড অর্গানাইজেশনগুলো (ইএও) সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে একের পর এক এলাকা দখল করে নিচ্ছে।তারা দখল করেছে লাউক্কাইং।এটি চীন সীমান্তের কাছে কোকাং সশাসিত জোনের রাজধানী।এ অপারেশনে নেতৃত্ব দিয়েছে মিয়ানমার ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক অ্যালায়েন্স আর্মি (এমএনডিএএ)। যা আসলে হানভাষী জাতিগত কোকাং সংখ্যাগরিষ্ঠদের নিয়ে গড়ে উঠেছে। এই অপারেশনে সমর্থন দিয়েছে অন্য দুটি বিদ্রোহী সংগঠন। লাউক্কাইং হলো সীমান্ত শহর।মিয়ানমারে লোভনীয় অবৈধ বাণিজ্যিক পণ্য প্রবেশ নিয়ন্ত্রণ করে এই শহর।এসব অপকর্মের যে নেটওয়ার্ক এবং মানবপাচার হয় এই শহর দিয়ে এসব বিষয়ে উদ্বিগ্ন চীন।

এ কারণে মিয়ানমারের ভিতরে অনলাইনে অপকর্মে জড়িত হতে উদ্বুদ্ধ হয় চীনা নাগরিকরা।অনলাইন স্টেটসম্যানে প্রকাশিত এক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে।এতে বলা হয়,এই শহর যেহেতু চীনা পণ্যের অবৈধ ব্যবসার কেন্দ্র,তাই এ শহর বিদ্রোহীরা দখল করে নেয়ার পর চীন তাদের ওপর ক্ষিপ্ত হতে পারে।এ কথাটি মাথায় রেখে এসব অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করার জন্য প্রতিশ্রুতি দিয়েছে থ্রি ব্রাদারহুড অ্যালায়েন্স (টিবিএ)।এটি হলো তিনটি বিদ্রোহী সংগঠনের একটি জোট। এতে যুক্ত আরাকান আর্মি,এমএনডিএএ এবং তাং ন্যাশনাল লিবারেশন আর্মি (টিএনএলএ)।টিএনএলএ এই জোটে যোগ দেয় ২০১৯ সালে।

শান রাজ্যে সীমান্ত শহর দখলে এমএনডিএএ’কে সহায়তা করেছে মূলত টিএনএলএ।ন্যাশনাল ইউনিটি গভর্নমেন্ট উদ্বুদ্ধ হওয়ার পর বামার পিপলস লিবারেশন আর্মি (বিপিএলএ) এবং মান্দালয় পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্ট সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে লড়াই করতে যোগ দেয় টিবিএ’তে।সম্মিলিতভাবে এসব শক্তি মিয়ানমার সেনাবাহিনীকে পরাজয়ের মুখে ফেলেছে।গত ২৭শে অক্টোবর থেকে তাদের দুর্দান্ত আক্রমণের ফলে সেনাবাহিনী প্রায় ২০০ আউটপোস্ট হারিয়েছে।এসব হামলার সঙ্গে অন্য গ্রুপগুলোও যুক্ত হয়েছে।তারাও চায় সেনাবাহিনীকে ক্ষমতা থেকে সরাতে।

পিডিএফের ব্যানারে লড়াই করে কাচিন ইন্ডিপেন্ডেন্ট অর্গানাইজেশন (কেআইও)।তারা সাগাইং রিজিয়নের কাওলিন শহর দখল করে নেয়। বিদ্রোহী গ্রুপগুলোর কাছে আত্মসমর্পণ করে অনেক সেনা সদস্য।রাজ্যের রাজধানী লোইকাওয়া দখলে নিতে কারেনি ন্যাশনালিটিজ ডিফেন্স ফোর্স এবং কারেনি ন্যাশনাল পিপলস লিবারেশন ফ্রান্ট কায়া রাজ্যে একইভাবে অপারেশন ১১১১ শুরু করে।

অন্যদিকে পশ্চিমাঞ্চলীয় সীমান্ত বরাবর রাখাইন রাজ্যে অব্যাহত লড়াই করে যাচ্ছে আরাকান আর্মি।বাংলাদেশ সীমান্তের কাছে চিন ও রাখাইন রাজ্যের বিপুল এলাকা তারা নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নিয়েছে।কুকি ইন্ডিপেন্ডেন্ট আর্মি,কুকি ন্যাশনাল আর্মি এবং চিন ল্যান্ড ডিফেন্স ফোর্স ২০২১ সালের সম্পাদিত ন্যাশনওয়াইড সিজফায়ার এগ্রিমেন্ট (এসসিএ) ভেঙে ফেলে।তারপর মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর অনেক সেনা নভেম্বরে পালিয়ে ভারতে গিয়ে শরণার্থী হয়।মিজোরামে চলে গিয়েছেন প্রায় ৬০০ সেনা সদস্য।তাদেরকে সফলতার সঙ্গে প্রত্যাবর্তন করা হয়েছে।এর আগে ২০২১ সালে মিয়ানমার পুলিশের কিছু সদস্য ভারতে আশ্রয় প্রার্থনা করে।

বিদ্রোহীদের সঙ্গে সেনাবাহিনীর এই যুদ্ধে বাস্তুচ্যুত হয়েছেন প্রায় ৬০ হাজার সাধারণ মানুষ।কারণ,সামরিক জান্তা হামলায় মর্টার ও বোমা ব্যবহার করে।এক্ষেত্রে তারা ব্যবহার করে বিমান বাহিনীকে।কেটে দেয় খাদ্য ও জ্বালানি সরবরাহ ব্যবস্থা। ২০২৩ সালের ডিসেম্বরে একটি যুদ্ধবিরতি চুক্তিতে মধ্যস্থতা করে চীন।তা সত্ত্বেও বিদ্রোহীদের অ্যালায়েন্স দেশের স্বৈরাচারকে উৎখাতে বদ্ধপরিকর।তারা যুদ্ধবিরতি মানতে নারাজ। ফলে এ বছর জানুয়ারিতে আরেকটি যুদ্ধবিরতিতে মধ্যস্থতা করতে বাধ্য হয় চীন।

সেনাবাহিনী এবং বিদ্রোহীদের মধ্যে এই চলমান যুদ্ধে সীমান্ত অঞ্চল অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে।সেখানে বসবাসকারী লোকজন বাস্তুচ্যুত হয়ে পড়েছে।চীনের সঙ্গে বাণিজ্যে প্রভাব পড়েছে। আঘাত লাগছে মিয়ানমারের অর্থনীতিতে।

এখানে উল্লেখ্য,মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর ওপর বড় রকম প্রভাব আছে চীনের।কোকাং চারটি পরিবাবারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে চীন।অনেকেই যুক্তি দিচ্ছেন যে, সামরিক জান্তা সেনাবাহিনীর ওপর নিয়ন্ত্রণ হারাচ্ছেন। অবসরপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা তার জবাবদিহিতা চাইছেন। ইএও’র কাছে হারানো এবং সেনাবাহিনীকে লজ্জায় ফেলার জন্য তার বিরুদ্ধে এমন দাবি উঠছে।গত ৭৫ বছরের মধ্যে প্রথমবারের মতো সেনাবাহিনী বিপুল এলাকা হারাচ্ছে ইএও’র কাছে।এ বছরের মধ্য জানুয়ারি উগ্রপন্থি বৌদ্ধ ভিক্ষু অশ্বিন আরিউয়ন্থা তার সামরিক জান্তা মিন অং হ্লাইংয়ের পদত্যাগ দাবি করেন। সেনাবাহিনীপন্থি একটি র‌্যালিতে তিনি ভাষণে ভাইস সিনিয়র জেনারেল শয়ে উইনের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয়ার দাবি জানান।

জেনারেল মিন অং হ্লাইং এবং জেনারেল শয়ে উইনের মধ্যে সামরিক অপারেশন নিয়ে মারাত্মক দ্বিমত আছে বলে খবর প্রকাশিত হয়েছে।যদিও ওই বৌদ্ধ ভিক্ষুকে গ্রেপ্তার করা হয়, তবে সেনাবাহিনীর ভিতরে অসন্তোষের কারণে পরে তাকে ছেড়ে দেয় জান্তা সরকার।আর এখন ক্রমাগত শক্ত ঘাঁটিগুলো হারাচ্ছে সেনাবাহিনী।তা দখল করে নিচ্ছে বিদ্রোহীরা। আত্মসমর্পণ করা সেনাদেরকে মুক্ত করে দিচ্ছে তারা। তাদেরকে আটক না রেখে চলে যাওয়ার অনুমতি দিচ্ছে। আত্মসমর্পণ করেছেন ৬জন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল।সামরিক আদালত তাদেরকে শাস্তি হিসেবে মৃত্যুদণ্ড ঘোষণা করেছে। এখন দেখা যাচ্ছে ইএও’র কাছে বিভিন্ন এলাকা হারানোর পর আর যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত নয় সেনাবাহিনীর অনেক সদস্য। গ্রামবাসীর ওপর হেলিকপ্টার গানশিপ থেকে বোমা ফেলা এটাই নির্দেশ করে যে সেনাবাহিনী বেপরোয়া অবস্থায় আছে।

আরও খবর

Sponsered content