প্রতিনিধি ৪ জুন ২০২৩ , ৪:২৮:১৭ প্রিন্ট সংস্করণ
অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।শাংরি-লা নিরাপত্তা সম্মেলনের মধ্যেই সপ্তাহান্তে সিঙ্গাপুরে বিশ্বের প্রায় দুই ডজন বড় বড় গোয়েন্দা সংস্থার শীর্ষ কর্তারা গোপনে বৈঠক করেছেন।
এ বিষয়ে অবগত পাঁচ ব্যক্তি শনিবার বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
তারা বলেছেন,কয়েক বছর ধরেই ওই নিরাপত্তা সম্মেলনের পাশাপাশি পৃথক একটি ভেন্যুতে গোয়েন্দা প্রধানদের এই ধরনের বৈঠক হয়ে আসছে;সিঙ্গাপুরের সরকারই বৈঠকটি আয়োজন করে থাকে।
এবারের আগে এ ধরনের বৈঠকের খবর কখনোই প্রকাশ্যে আসেনি।
বৈঠকে যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর প্রধান,মার্কিন জাতীয় গোয়েন্দা সংস্থার পরিচালক এভ্রিল হেইনস তার দেশের প্রতিনিধিত্ব করেছেন।
দুই পরাশক্তির মধ্যে অনেক বিষয়ে দ্বন্দ্ব ও উত্তেজনা চললেও সিঙ্গাপুরে এই গোপন বৈঠকে চীনও উপস্থিত ছিল বলে জানিয়েছে সূত্রগুলো।
ভারতের গোয়েন্দা সংস্থা রিসার্চ অ্যান্ড অ্যানালিসিস উইংয়ের শীর্ষ কর্মকর্তা সামন্ত গোয়েলও বৈঠকে ছিলেন,জানিয়েছে ভারতীয় এক সূত্র।
“গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর মধ্যে একটি অব্যক্ত রীতি আছে,তা হল- তারা তখনই একে অপরের সঙ্গে কথা বলবে,যখন আনুষ্ঠানিক ও সরাসরি কূটনীতি কঠিন থাকে।উত্তেজনার সময়ে এগুলো খুবই গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে।সিঙ্গাপুরের বৈঠকটি সেই সুযোগই করে দিয়েছে,” বলেছেন বৈঠক সম্বন্ধে অবগত এক ব্যক্তি।
সংবেদনশীল বিষয় হওয়ায় বৈঠক সম্বন্ধে জানানো পাঁচজনই তাদের নাম পরিচয় প্রকাশে রাজি হননি।
“শাংরি-লা সম্মেলনে অংশ নেওয়া গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা তাদের নিজ নিজ কাউন্টারপার্টের সঙ্গে বসার সুযোগও কাহে লাগান।সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ ধরনের দ্বিপাক্ষিক বা বহুপাক্ষিক বৈঠকের আয়োজনও করতে পারে। সম্মেলনের সাইডলাইনে হওয়া এই ধরনের বৈঠকে অংশ গ্রহণকারীরা উপকৃতও হন,” বলেছেন সিঙ্গাপুরের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র।
সিঙ্গাপুরের মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে,এ ধরনের কোনো বৈঠকের তথ্য তাদের কাছে নেই।
বৈঠক প্রসঙ্গে মন্তব্য চাইলেও ভারত ও চীন সরকারের কাছ থেকে তাৎক্ষণিকভাবে সাড়া পাওয়া যায়নি,বলেছে রয়টার্স।
যুক্তরাষ্ট্র,ব্রিটেন,কানাডা,অস্ট্রেলিয়া ও নিউ জিল্যান্ডের গুপ্তচরদের একত্রে ‘ফাইভ আই নেটওয়ার্ক’ নামে পরিচিত; দেশগুলোর গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কর্মকর্তারা নিয়মিতই বৈঠকে বসেন এবং নিজেদের মধ্যে বিস্তৃত তথ্য আদান-প্রদান করেন।
এর বাইরে গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর বড় বৈঠক বিরল,আর হলেও সেগুলো কখনোই প্রকাশ্যে আসে না।
সিঙ্গাপুরের বৈঠকে কী কী নিয়ে আলোচনা হয়েছে সে বিষয়ে সুনির্দিষ্টভাবে জানা যায়নি।তবে শুক্রবারের আলোচনায় ইউক্রেইনে রাশিয়ার যুদ্ধ এবং মানবপাচার,চোরাচালানিসহ সীমান্ত টপকে করা অপরাধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে বলে বৈঠক সম্বন্ধে অবগত এক ব্যক্তি জানিয়েছেন।
এর বাইরে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় গোয়েন্দা প্রধানরা অনানুষ্ঠানিকভাবে মিলিত হন, বলেছেন তিনি।
বৈঠকে রাশিয়ার কোনো প্রতিনিধি ছিল না বলে জানিয়েছে একটি সূত্র।সাংরি-লা নিরাপত্তা সম্মেলনে অংশ নিতে ইউক্রেইনের উপ-প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভলোদিমির ভি হাভ্রিলভ সিঙ্গাপুরে থাকলেও তিনিও বৈঠকটিতে ছিলেন না।
বৈঠকে আলোচনার সুর ছিল সহযোগিতামূলক,দ্বন্দ্বমুখর নয়, বলেছে আরেকটি সূত্র।
মূল নিরাপত্তা সম্মেলনের তিনদিনের প্লেনারি অধিবেশনে ৪৯ দেশের ছয়শর বেশি প্রতিনিধি অংশ নিয়েছেন।এর বাইরে অনেকগুলো দ্বিপাক্ষিক এবং একাধিক বহুপাক্ষিক বৈঠক হয়েছে।
অধিবেশনে অস্ট্রেলিয়ার প্রধানমন্ত্রী অ্যান্থনি আলবানিজ মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন।মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী লয়েড অস্টিন, চীনা প্রতিরক্ষামন্ত্রী লি শাংফু এবং তাদের ব্রিটিশ,জাপানি, কানাডীয়,ইন্দোনেশীয় ও দক্ষিণ কোরীয় কাউন্টারপার্টরাও কথা বলেন।
এই সম্মেলনে মার্কিন প্রতিনিধিদলে হেইনসও আছেন।মূল অধিবেশনে সাইবার নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনায় চীনের এক সামরিক কর্মকর্তার প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,বিভিন্ন দেশের মধ্যে সহযোগিতা খুবই জরুরি।
“এটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ,এমনকি যখন অবিশ্বাস থাকে, যখন আপনি প্রবল প্রতিপক্ষের মুখোমুখি হন,তখনও আপনি পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে কাজ ও সহযোগিতার চেষ্টা করেন এবং উত্তেজনা প্রশমনের সম্ভাবনা বাড়াতে চেষ্টা করেন,” বলেছেন তিনি।
শুক্রবার মার্কিন কর্মকর্তারা জানান,সিআইএ-র পরিচালক উইলিয়াম বার্নস গতমাসে চুপিসারে চীন সফরে গিয়ে তার চীনা কাউন্টারপার্টের সঙ্গে দেখা করেছেন।
বেইজিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ জোরদারে জো বাইডেন প্রশাসনের আগ্রহে এই সফর হয়েছে,বলেছেন তারা।