জাতীয়

সাহাবুদ্দিনের কোনো ধরনের অযোগ্যতা নেই-সিইসি,কাজী হাবিবুল আউয়াল

  প্রতিনিধি ১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৩:২১:৫৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে মো: সাহাবুদ্দিনের কোনো ধরনের অযোগ্যতা নেই বলে জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের নির্বাচনি কর্তা ও প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল।সংবিধান,আইন,বিধি বিধান ও আদালতের রায় পর্যালোচনা করার কথা উল্লেখ করে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন,রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হতে মো: সাহাবুদ্দিনের কোনো ধরনের অযোগ্যতা নেই।আদালতের রায় ও সংবিধান অনুযায়ী দুদক কমিশনের রাষ্ট্রপতি হতে আইনি কোনো বাধা নেই।

বুধবার আগারগাঁওয়ে নির্বাচন কমিশন ভবনে এক ব্রিফিংয়ে সিইসি এসব কথা বলেন।সম্প্রতি কয়েকটি সংবাদমাধ্যমে রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন ওঠায় সিইসি এসব কথা বললেন।

একইসাথে কাজী হাবিবুল আউয়াল জানালেন,মো: সাহাবুদ্দিনকে নিয়োগ দেয়া হয়নি;বরং তিনি নির্বাচতি হয়েছেন।এখানে আইনের কোনো ব্যত্যয় হয়নি।তিনি বলেন, রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির প্রশ্নে অবান্তর বিতর্ক সৃষ্টি করা হলে সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত।

এ বিষয়ে সংবিধানের বিভিন্ন অনুচ্ছেদ এবং ১৯৯৬ সালের সাহাবুদ্দীন আহমদ বনাম আবু বকর সিদ্দিক মামলাটির রায়ের আদেশ পড়ে শোনান সিইসি।

তিনি বলেন,গত ১২ তারিখে আমরা রাষ্ট্রপতি পদে মনোনয়ন পেয়েছিলাম।দুইজন সংসদ সদস্য তা প্রস্তাব ও সমর্থন করেছেন।রাষ্ট্রপতি প্রার্থী ওটায় সম্মত হয়ে তার স্টেটম্যান্ট দিয়েছেন।

সিইসি জানান,নিয়ম অনুযায়ী,সংবিধান,সহায়ক আইন এবং সংশ্লিষ্ট বিধি অনুযায়ী আমাদের এই নির্বাচনটি পরিচালনা করতে হয়। আমরা তফসিল করেছিলাম।তফসিল অনুযায়ী ১২ তারিখে মনোনয়ন পেয়েছি।বাছাইয়ের জন্য নির্ধারিত ছিল। বাছাইয়ের কাজটি প্রধান নির্বাচন কমিশনার তথা নির্বাচনি কর্তার একক এবং অবিভাজ্য কাজ।এটায় কমিশনের কোনো দায়িত্ব ছিল না।দায়দায়িত্ব,ভুলভ্রান্তি সবকিছুর দায়ভার প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে এককভাবে নিতে হবে।সেজন্যই যেহেতু বিষয়টি প্রধান নির্বাচন কমিশনারের ওপর অর্পিত একটি একক ও অবিভাজ্য দায়িত্ব ছিল,তাই আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাম নির্বাচনি কর্তা হিসেবে কিছু কিছু উত্থাপিত বিষয়ে বিভ্রান্তি নিরসনের সুবিধার্থে কিছু বক্তব্য উপস্থাপন আবশ্যক মনে করছি।

একটি প্রশ্ন উঠেছে যে, প্রার্থীর সাংবিধানিক বা আইনগত অযোগ্যতা রয়েছে।এটা সত্য যে দুদক আইনে ৯ ধারায় বলা হয়েছে যে কর্মাবসানের পর কোনো কমিশনার প্রজাতন্ত্রের লাভজনক কোনো পদে নিয়োগ লাভে যোগ্য হবেন না।এটা আছে।এটার আলোকে বিষয়টি বিবেচ্য।এতে করে অনেকে বলতে চেয়েছেন যে,রাষ্ট্রপতির পদটি একটি লাভজনক পদ।

আমি প্রধান নির্বাচন কমিশনার এবং নির্বাচনী কর্তা হিসেবে ওই রায়টি সম্পর্কে সম্পূর্ণ অবগত ছিলাম।কারণ পরীক্ষা করার সময় যেটাকে বাছাই বলে সেটা কিন্তু একটা দায়সারা গোছের দায়িত্ব নয়।প্রধান নির্বাচন কমিশনারকে পরীক্ষা নিরীক্ষা করে দেখতে হবে,প্রার্থী যাই বলুক কমিশনারেরও দায়িত্ব আছে বাছাই করে দেখা যে,প্রার্থীর কোনো সাংবিধানিক বা আইনগত অযোগ্যতা রয়েছে কিনা।আমরা দেখলাম প্রথমত স্পষ্টত কোনো আইনগত অযোগ্যতা নেই। এই কারণে,৯ ধারায় (দুদক আইনের) বলেছে,কোনো লাভজনক পদে নিয়োগ লাভে যোগ্য হবেন না।আমরা কিন্তু এখান থেকে প্রার্থীকে নিয়োগ দান করিনি।মাননীয় প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ দান করেননি।প্রধান বিচারপতিও নিয়োগ দান করেননি।কেউ নিয়োগ দান করেননি এবং কেউ নিয়োগ দান করতে পারেন না।উনি নির্বাচিত হয়েছেন।আইন তাকে নির্বাচিত করেছে প্রচলিত প্রথা অনুসরণ করে।

নির্বাচন ও নিয়োগের মধ্যে যে পার্থক্য এটা বুঝতে হবে জানিয়ে সিইসি বলেন,এটাকে আলোচনায় না এনে উনাকে লাভজনক পদে বসানো হয়েছে বা হতে যাচ্ছে,এ বিষয়ে আমাদের নির্বাচন এবং নিয়োগের মধ্যে পার্থক্যটা বুঝতে হবে। তাকে যদি এখান থেকে নিয়োগ দান করা হতো তাহলে সেটি অবশ্যই অবৈধ হতো।কারণ নিয়োগ দানের কর্তৃপক্ষ বা কর্তৃত্ব আমাদের নেই,কারোই নেই।

তিনি বলেন,যেমন আমাদের জাতীয় সংসদের সদস্যগণ নিয়োগপ্রাপ্ত হন না।তারা নির্বাচিত হন।সেটাই তাদের নিয়োগের সমতুল্য।অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমেদ সাহেব যখন রাষ্ট্রপতি পদে নির্বাচিত হয়েছিলেন,তখন দায়িত্ব নেয়ার আগেই এই বিষয়ে রিট মামলা হয়েছিল।সেই মামলায় বিষয়টি বিস্তারিত আলোচনা হয়েছে।সেখানে স্পষ্ট বলা হয়েছে যে,সাহাবুদ্দীন আহমেদের রাষ্ট্রপতি নির্বাচন সম্পূর্ণ বৈধ। এতে কোনো অবৈধতা হয়নি।

আর আলোচনায় তিনি বলেছেন,পদটি অফিস অব প্রফিট হলেও এটা অফিস অব প্রফিট ইন দ্য সার্ভিস অব দ্য রিপাবলিক নয়।সেখানে বিভাজন করে দেখানো হয়েছে যে, অফিস অব প্রফিট অব দ্য রিপাবলিক আর কোনগুলো কনস্টিটিউশনাল পদ আলাদা করে দেখা হয়েছে।

সিইসি আরো বলেন,আমরা সেই প্রশ্নে না গিয়ে যেহেতু সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের চূড়ান্ত একটি রায় বলে দিয়েছে যে,অবসরপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতির মতো তেমনি দুদকের অবসরপ্রাপ্ত একজন কমিশনার রাষ্ট্রপতি পদে কোনোভাবেই অবৈধ নয়।সেই দিক থেকে এই প্রশ্নে বিভ্রান্তি সৃষ্টি বিভিন্ন ধরনেরর মতামত দিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিটা অনাবশ্যক বা সমিচিত হবে না বলে আমি মনে করি।

উনি নির্বাচিত হয়েছেন পরোক্ষভাবে পুরো দেশবাসীর পক্ষে, প্রত্যক্ষভাবে জাতীয় সংসদের সদস্যদের দ্বারা। যেহেতু একজনমাত্র প্রার্থী ছিলেন এবং তার দুইটি মনোনয়নপত্র ছিল। আমি সেটি পুঙ্খানুপুঙ্খুভাবে দেখেছি এবং প্রচলিত যে আইন কানুন সংবিধান সবকিছু বিবেচনা করে দেখেছি।তার (মো: সাহাবুদ্দিন) এই পদে নির্বাচিত হতে কোনো ধরনের অযোগ্যতা নেই।

তিনি বলেন,রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ ব্যক্তির প্রশ্নে যদি এই ধরনের অবান্তর বিতর্ক সৃষ্টি করা হয় সেটা হবে অনাকাঙ্ক্ষিত।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন,বিচারপতি সাহাবুদ্দীন নির্বাচিত হয়েছিলেন,নিয়োগপ্রাপ্ত হননি।

সাংবিধানিক পদে তো আপনারাও,অবসরে যাওয়ার পর আপনাদের কি রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ পদে যেতে বাধা থাকছে? জানতে চাইলে সিইসি বলেন,আপনি আমাকে একটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট দিয়ে দেখেন,তখন আমি দেখবো সেটা গ্রহণ করতে পারবো কি পারবো না।আমি ওই পদে নিয়োগ লাভে যোগ্য হবো না।আমাদের ক্ষেত্রেও বলা হয়েছে যে,নির্বাচন কমিশনার যারা আছেন তাদের ক্ষেত্রে শুধু একটা অপশন আছে যে উনারা প্রধান নির্বাচন কমিশনার পদে নিয়োগ লাভ করতে পারবেন।কিন্তু প্রধান নির্বাচন কমিশনারের কর্মাবসানের পর তিনি প্রজাতন্ত্রের কর্মে কোনো লাভজনক পদে পুনঃনিয়োগ লাভে অযোগ্য হবেন।

তাহলে কি নির্বাচন করতে পারবেন?সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন,আমি মনে করি আমি নির্বাচন করতে পারবো। আমার ব্যক্তিগত মত।সেই ক্ষেত্রে ওখানে যদি বলে আমি নিয়োগের অযোগ্য তো আমি একটি যুক্তি নিতে পারি যে, আমি নিয়োগের অযোগ্য।কিন্তু নির্বাচনের অযোগ্য নই।

আরও খবর

Sponsered content