অপরাধ-আইন-আদালত

সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমারের অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগ প্রমাণ পাওয়া গেছে-দুদক

  প্রতিনিধি ১১ এপ্রিল ২০২৩ , ১১:৪৭:৩৫ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় বিভাগের সাবেক সচিব ড. প্রশান্ত কুমার রায়ের নামে অবৈধ সম্পদের প্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।তাঁর বিরুদ্ধে ক্ষমতার অপব্যবহার, অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধান শেষে কমিশনে প্রতিবেদন পেশ করা হয়েছে।কমিশনের অনুমোদন পেলে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগে মামলা করা হবে।

দুদক সূত্র জানায়,অনুসন্ধানে প্রশান্ত কুমারের নামে ১ কোটি ৩৪ লাখ ৯২ হাজার টাকার অবৈধ সম্পদ থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।অনুসন্ধান প্রতিবেদনে বলা হয়,প্রশান্ত কুমার ২০২০ সালের ২ ফেব্রুয়ারি কমিশনে সম্পদ বিবরণী পেশ করেন।এতে জমি, প্লট কেনাসহ ১ কোটি ৬৪ লাখ ৮০ হাজার টাকার স্থাবর সম্পদ দেখানো হয়।উপহারের স্বর্ণালংকার ছাড়াও ব্যাংকে জমানো টাকা,আসবাবপত্র,ইলেকট্রনিক সামগ্রী,বিনিয়োগ,হাতে নগদ ও অন্যান্য খাতে মোট ১ কোটি ১৩ লাখ ৮৭ হাজার টাকার অস্থাবর সম্পদের হিসাব দেওয়া হয়।

অর্থাৎ তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ২ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার টাকার।তবে তাঁর সম্পদ বিরবণী যাচাই ও অনুসন্ধানে পিতার কাছ থেকে পাওয়া সম্পদ ছাড়া পাকা ভবন নির্মাণ, জমি,প্লট-ফ্ল্যাট ক্রয়সহ বিভিন্ন খাতে ২ কোটি ৮৫ লাখ ২৯ হাজার ৮৮১ টাকার স্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া গেছে।এ ছাড়া ব্যাংকে নগদ,সঞ্চয়পত্র,এক্সক্যাভেটর (খনন যন্ত্র), আসবাবপত্র,ইলেকট্রনিক সামগ্রী,হাতে নগদ অর্থসহ ১ কোটি ১৮ লাখ ৮৭ হাজার ৫৪০ টাকার অস্থাবর সম্পদের তথ্য পাওয়া যায়।অর্থাৎ স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ৪ কোটি ৪ লাখ ১৭ হাজার টাকার।এ হিসাবে তিনি ১ কোটি ২৫ লাখ ৪৯ হাজার টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

প্রতিবেদনে আরও বলা হয়,তাঁর পারিবারিক খরচের হিসাব পাওয়া যায় ২ কোটি ৫ লাখ ৭৮ হাজার টাকার।এই হিসাব অনুযায়ী তাঁর মোট অর্জিত অর্থসম্পদ ৬ কোটি ৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকার।তাঁর ২০২০-২১ অর্থবছরের আয়কর নথিতে ১ কোটি ৮৬ লাখ ৯৬ হাজার ৬৭১ টাকার নিট সম্পদ উল্লেখ করা হয়েছে।বেতন-ভাতা,ব্যাংক সুদ,কৃষি থেকে আয়,কর অব্যাহতি ও করমুক্ত আয়সহ সর্বমোট ৪ কোটি ৭৫ লাখ ৩ হাজার ২৮৭ টাকার গ্রহণযোগ্য আয়ের তথ্য পাওয়া যায়।বৈধ উৎসের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ ১ কোটি ৩৪ লাখ ৯২ হাজার টাকার সম্পদ পাওয়া গেছে।এই সম্পদ ভোগদখলে রেখে শাস্তিযোগ্য অপরাধ করেছেন।অনুসন্ধান প্রতিবেদনে তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করার সুপারিশ করা হয়েছে।

অভিযোগটি অনুসন্ধান করেছেন দুদকের প্রধান কার্যালয়ের উপপরিচালক মো. মশিউর রহমান।

স্থাবর সম্পদ: প্রশান্ত কুমার রায়ের স্থাবর সম্পদ যাচাই করে দেখা গেছে, খুলনার বটিয়াঘাটায় ৫.২১ একর জমির একাংশে ১০ থেকে ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে দোতলা ভবন নির্মাণ করেছেন।এ ছাড়া বটিয়াঘাটায় ৫০ শতাংশ জমি দেড় কোটি টাকায় কিনেছেন,জেলার পাইকগাছায় ১.৭২ একর জমি আছে।ঢাকার সাভার উপজেলায় ২ লাখ টাকা মূল্যের ৮ শতাংশ জমি আছে।ঢাকার মোহাম্মদপুরে কাদেরাবাদ হাউজিংয়ে ১০৭০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে,যার মূল্য ৪০ লাখ ৫০ হাজার টাকা।মোহাম্মদপুরের পূর্ব জাফরাবাদে ১২০০ বর্গফুটের একটি ফ্ল্যাট আছে, যার মূল্য ৫০ লাখ টাকা।গ্রিন রোডে গ্রিন সুপারমার্কেটের তৃতীয় তলায় ৩০০ বর্গফুটের একটি কক্ষ ১১ লাখ টাকায় কিনেছেন।

অস্থাবর সম্পদ: প্রশান্ত কুমার ২০১৩ সালে ২৩ লাখ টাকায় একটি গাড়ি কিনেছেন।২০১৮ সালে ১৬ লাখ টাকায় একটি এক্সক্যাভেটর (খননযন্ত্র) ক্রয় করেন।সোনালী ব্যাংকের ঢাকার কারওয়ান বাজার শাখার হিসাবে ১ লাখ ৪৪ হাজার টাকা, এনবিএল ব্যাংকের ঢাকায় দিলকুশা শাখায় ৫ লাখ ১০ হাজার টাকা আছে।এ ছাড়া অন্যান্য ব্যাংক হিসাবের তথ্য পাওয়া গেছে।

বিদেশে অর্থ প্রেরণ: অনুসন্ধানকালে জানা যায়,প্রশান্ত কুমার তাঁর দুই মেয়ের লেখাপড়ার খরচ বাবদ ৩৫ লাখ ৯৫ হাজার ৬০৭ টাকা ব্যাংকিং চ্যানেলে বিদেশে পাঠিয়েছেন।তাঁরা অস্ট্রেলিয়ায় পড়াশোনা করেন।

মানি লন্ডারিংয়ের তথ্য: অনুসন্ধানে জানা গেছে,প্রশান্ত কুমার খুলনার বটিয়াঘাটায় ভাগনে মনোজ কুমার বিশ্বাসের কাছ থেকে ৫.৮০ একর জমির মালিক হন পাওয়ার অব অ্যাটর্নি মূলে।পরে স্থানীয় নুরুল আলমের কাছ থেকে বায়না চুক্তি করে ২৫ লাখ টাকা গ্রহণ করেন।এর পর জমির একটি অংশ ১ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার টাকায় বিক্রি করেন।এর মধ্য থেকে ৫০ লাখ টাকা মনোজ কুমারকে প্রদান করেছেন।অথচ মনোজ কুমার ৩০-৩৫ বছর ধরে ভারতে স্থায়ীভাবে বসবাস করছেন।তিনি একটি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করেন।বিদেশি ব্যক্তির কাছ থেকে পাওয়ার অব অ্যাটর্নি গ্রহণ এবং তাঁকে ৫০ লাখ টাকা প্রদান মানি লন্ডারিং অপরাধ।

দুদকের চিঠির পরও পদোন্নতি: প্রশান্ত কুমার রায় ২০১৬ সালের ১৪ মার্চ ভারপ্রাপ্ত সচিব হিসেবে পদোন্নতি পেয়েছিলেন।২০১৭ সালের ১৪ এপ্রিল তিনি অবসরে যান।এর আগেও তাঁর বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ দেওয়া হয় দুদকে। ২০১৫ সালে তাঁর বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য দুদক থেকে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে চিঠি দেওয়া হলেও পরবর্তী সময়ে তাঁকে সচিব পদে পদোন্নতি দেওয়া হয়।পরে তাঁর বিরুদ্ধে অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে দুদকে আরও একটি অভিযোগ দেওয়া হয়।এই অভিযোগটি অনুসন্ধান করে কমিশনে মামলার সুপারিশ করে প্রতিবেদন দেওয়া হয়েছে।

সাবেক সচিব প্রশান্ত কুমার রায় সাংবাদিকদের বলেন,তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ সম্পূর্ণ মিথ্যা। দুদকের অনুসন্ধানে অবৈধ সম্পদের তথ্য পাওয়া প্রসঙ্গে প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, তারা (দুদক) পেতে পারে।তারা কোন দিক দিয়ে মিলিয়েছে সেটা তারা জানে।তাঁর এমন কোনো অর্থসম্পদ নেই, যেগুলোর বৈধ উৎস নেই।

আরও খবর

Sponsered content