বিনোদন

সাংসারিক তেতো আলাপের ভিড়ে হারিয়ে যায় মিষ্টি প্রেমের বাক্য

  প্রতিনিধি ১২ এপ্রিল ২০২৩ , ৬:২৪:০৩ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।সময় যত গড়ায়,সম্পর্কের মধুরতা নাকি ততই ফিকে হতে থাকে। ব্যতিক্রমও আছে।একটা মানুষের সঙ্গে সংসার করতে করতে একঘেয়েমি বোধ করেন কেউ কেউ।সংসারজীবনে পা না রাখলেই ভালো হতো ভেবে মাঝেমধ্যে আক্ষেপও করেন।একলা জীবনের স্বাধীনতার জন্য আফসোস করেন।সাংসারিক তেতো আলাপের ভিড়ে হারিয়ে যায় মিষ্টি প্রেমের বাক্য। দিনকে দিন কঠিন হয়ে পড়ে সম্পর্কের সতেজতা জিইয়ে রাখা।

কেমন হয় যদি একই সঙ্গে থাকে পরিণয়ের বন্ধন আর একলা জীবনের স্বাধীনতা?ভালোবাসাও পূর্ণতা পায়, ব্যক্তিজীবনের নিজস্বতাটাও অক্ষুণ্ন থাকে।আমি’ থেকে ‘আমরা’ হয়ে গিয়েও ‘আমি’ থেকে যাওয়ার এ ব্যাপারে সপ্তাহের ৭ দিন ২৪টি ঘণ্টা একই মানুষের সঙ্গে থাকার বাধ্যবাধকতা থাকে না।

জাপানি এক দম্পতির গল্প:-জাপানে এমন ভিন্নধারার সাংসারিক জীবনযাপনের প্রচলন বাড়ছে। ব্যবসা পরামর্শক হিদেকাজু তাকেদা আর একটি ফিটনেস জিমের স্বত্বাধিকারী ও প্রশিক্ষক হিরোমি তাকেদার সংসারটাই যেমন।বিবাহিত হয়েও আলাদা আলাদা বাসায় থাকেন তাঁরা।দুজনে দুজনকে ভালোবাসেন,বিশ্বাস করেন,সম্মান করেন।

তবে দুজনের জীবনধারা ভিন্ন।একজনের দিন শুরু হয় ভোর চারটায়,অন্যজনের বেলা সাতটায়।সন্তানকে নিয়ে থাকেন স্ত্রী হিরোমি।গাড়ি চালিয়ে যেতে এক ঘণ্টা লাগে—এমন দূরত্বে থাকেন স্বামী হিদেকাজু।দুজনেরই এটি দ্বিতীয় বিয়ে।স্ত্রীকে ঘরের কাজে এবং সন্তান পালনে সহায়তা করতে না পারাটা অবশ্য হিদেকাজুর মনে অপরাধবোধের সৃষ্টি করে।তিনি মনে করেন,পেশাগত ব্যস্ততায় ঠিকঠাক বাসায় ফিরতে না পারায় প্রথম স্ত্রী হয়তো অসুখী ছিলেন।তাঁর জন্য একা থাকাটা সহজ।হিরোমি প্রথম সংসারে বুঝেছেন,নারীর অর্থনৈতিক স্বাধীনতা ভীষণ জরুরি।কেবল স্বাবলম্বী না হওয়ার কারণে হিরোমির মায়ের মতো বহু নারী তো এ দেশেও মুখ বুজে পড়ে থাকেন সংসারের অন্ধকার ফাঁদে।

আবার নিজস্ব পেশাগত জীবন থাকলে সেই জীবনের সঙ্গে ব্যক্তিজীবনের সমন্বয় আনতেও নারীকে অনেক কিছুই খেয়াল রাখতে হয়।স্বামীর সঙ্গে থাকলে নিজের মতো করে সবদিক সামলাতে বাড়তি চাপ অনুভব করতেন বলে মনে করেন হিরোমি।কিন্তু প্রথম সংসারের মতো নিজের জীবনে বদল চাননি আর,তাই দ্বিতীয় বিয়ের কথা ভাবেনইনি আগে।

লোকের কথায় কান দেননি:-জাপানের মানুষ কীভাবে নিয়েছেন এমন ধারার দাম্পত্যকে?এই দম্পতি ভাগ করে নিলেন তাঁদের অভিজ্ঞতা।হিদেকাজুর জন্য অনেকের দুঃখও হয়েছে।ঘরের বউ যদি ঘরের কাজই না করল,তাহলে আর বিয়ে করে লাভ কী—এমনটা ভাবেন কেউ কেউ।নারীরা অবশ্য ঈর্ষান্বিত,তাঁরাও হিরোমির মত হতে চান।

কিন্তু এই দম্পতির ভাবনার বিস্তৃতি প্রথাগত বাধ্যবাধকতাকে ছাড়িয়েই কিন্তু সুখের সন্ধান পেয়েছে।ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্য তাঁদের জীবনের মূলমন্ত্র।একসঙ্গে থাকেন না তো কী হয়েছে? জীবনসঙ্গীকে ছাড়া কিন্তু নিজের জীবনটা কল্পনাই করতে পারেন না হিদেকাজু।আলাদা জীবন যাপন করেও আবেগপ্রবণ সমর্থন পাচ্ছেন,একসঙ্গে ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখছেন।বিয়ের মানে তো এটাই,তাই না?

ভিন্ন বাস্তব:-কারও কারও ক্ষেত্রে কিন্তু জীবনের কর্তব্য সমাধানের জন্যই এভাবে সংসার করতে হয়।হয়তো মা-বাবা অসুস্থ,তাঁর দেখভালের জন্য আপনাকে কাছে থাকতে হচ্ছে। কিন্তু আপনার জীবনসঙ্গী কর্মস্থল পরিবর্তন করতে না পারায় দূরে থাকতে বাধ্য হচ্ছেন সপ্তাহের পাঁচ দিন।অনেকেই গ্রামে পরিবার রেখে শহরে চাকরি করছেন,মাসে বা দুই মাসে একবার যান বাড়িতে।ব্যক্তিগতভাবে বিবাহিত হলেও আদতে বছরের পর বছর ‘ব্যাচেলর’ জীবন যাপন করছেন তাঁরা। বিদেশ–বিভুঁইয়ের এই দূরে থাকার সংস্কৃতি আমাদের দেশে আবার বহুল প্রচলিত।

কে কোথায় থাকলেন,কতটা সময় একসঙ্গে কাটালেন—এসবের চেয়ে জরুরি হলো বিশ্বস্ততা।একসঙ্গে থেকেও তো দানা বাঁধতে পারে অবিশ্বাস।কেউ রাত জেগে কাজ করেন,কেউ ভোরে হাঁটেন। কেউ কাজের শেষে আকাশ দেখেন,কেউ বই পড়েন। কেউ উচ্চ শব্দে অডিও ক্লিপ চালান।কেউ নিরামিষাশী,কারও আবার আমিষ ছাড়া চলে না,কেউ হয়তো রেস্তোরাঁর খাবার একেবারেই খান না।প্রত্যেকেরই রুচি ও পছন্দ আলাদা। শ্বশুরবাড়ির লোকেদের সঙ্গেও রুচির অমিল থাকে।তবু মিলেমিশেই গড়ে ওঠে একটি সংসার।পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে,ব্যক্তিস্বাধীনতা অক্ষুণ্ন রেখে যদি একসঙ্গে থাকাটা অশান্তি বা বিরক্তির উদ্রেক করে,তাহলে বিচ্ছেদই একমাত্র সমাধান নয়। ‘আলাদা’ থেকেও ‘একসঙ্গে’ থাকা যায়।

আরও খবর

Sponsered content