শিক্ষা

শিক্ষার্থীরা হলে উঠার প্রায় চার মাস পার হতে চললেও ডাইনিং চালু হয়নি!

  প্রতিনিধি ১৬ মে ২০২৩ , ১:৪৪:২৫ প্রিন্ট সংস্করণ

জাবি প্রতিনিধি।।জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীদের আবাসন সংকট নিরসনে পৃথক তিনটি করে মোট ছয়টি হলের নির্মাণকাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।প্রকল্প অফিস চারটি হলের দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে হস্তান্তর করেছে। দায়িত্ব বুঝে নেওয়ার পর দুটো হলে প্রভোস্ট নিয়োগ দিয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছে।তবে শিক্ষার্থীরা হলে উঠার প্রায় চার মাস পার হতে চললেও ডাইনিং চালু হয়নি। এ ছাড়া হলের দেখভালের জন্য পর্যাপ্ত লোকবল না থাকায় কাঙ্ক্ষিত সুযোগ-সুবিধাগুলো কাগজে কলমেই রয়ে গেছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকল্প অফিসের তথ্যমতে,১০ তলা বিশিষ্ট নতুন হলগুলোর প্রতিটিতে ছয়টি করে লিফট, বিনোদনের জন্য তিনটি করে কমন রুম,উন্নতমানের লাইব্রেরি,হল ছাত্র সংসদ,মসজিদ,দোকান,সেলুন,কাপড় ধোলাইয়ের দোকান, ডাইনিং,ক্যান্টিন,শিক্ষার্থীদের নিজস্ব রান্নার ব্যবস্থার জন্য প্রতি তলায় গ্যাসের চুলা,ব্যায়ামের জন্য জিমনেশিয়ামের ব্যবস্থা, নিরাপত্তার জন্য সিসি ক্যামেরাসহ ইন্টারনেটের ব্রডব্যান্ড লাইন সংযোগের সুবিধা থাকবে।এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিটি কক্ষে চৌকি,চেয়ার,টেবিল ও আলমারি থাকার কথা রয়েছে।

তবে চালু হওয়ার চার মাস পার হতে চললেও ১৮ ও ২১ নং হলে ডাইনিং চালু হয়নি।গত ৬ মে থেকে ২১ নং হলের ক্যান্টিন চালু হলেও সেখানে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ দেখিয়ে খাবারের অতিরিক্ত দাম রাখা হচ্ছে।ছাত্রীদের ১৮ নং হলের ক্যান্টিন নিয়েও একই অভিযোগ রয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের ২১ নং হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সাব্বির আহমেদ বলেন,হলে উঠেছি চার মাস হতে চললো।সম্প্রতি ক্যান্টিন চালু হয়েছে।অথচ সেখানে বটতলার দোকানের চেয়েও খাবারের দাম বেশি।এতো দামে শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের খাবার খাওয়া কঠিন হয়ে যাচ্ছে।’

ক্যান্টিনে খাবারের অতিরিক্ত দামের কারণ জানতে চাইলে ক্যান্টিন কর্তৃপক্ষ জানায়,হলে গ্যাস নেই।নিজেরাই গ্যাস ও লাকড়ি কিনে রান্না করতে হচ্ছে।অন্যান্য হলে গ্যাসের ব্যবস্থা আছে। এজন্য সেখানে খাবারের দাম কম,এখানে একটু বেশি।

জানা যায়,হলগুলোতে অত্যাধুনিক মানের লিফট থাকলেও শিক্ষার্থীরা বেশ কয়েকবার লিফটে আটকে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে।নির্দিষ্ট ফি দিয়ে ইন্টারনেট ব্রডব্যান্ডের লাইন নিলেও তাতে পাওয়া যাচ্ছে না কাঙ্ক্ষিত স্পীড।জিমনেশিয়াম, কমনরুম,সেলুন,কাপড় ধোলাইয়ের দোকান কাগজে কলমে রয়েছে,বাস্তবে কোনও দেখা নেই।হলের টয়লেট, করিডোরগুলো প্রায়ই অপরিষ্কার থাকছে।এতে মারাত্মক স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ার আশঙ্কা করছেন শিক্ষার্থীরা।এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের থাকার জন্য শুধু চৌকি সরবরাহ করা হয়েছে। পড়ার জন্য চেয়ার-টেবিল ও আলমারি সরবরাহের কথা থাকলেও তাও কাগজে-কলমে রয়ে গেছে।ফলে অনেক শিক্ষার্থী নিজ অর্থায়নে এসব আসবাবপত্র কিনেছেন।

১৮ নং হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সামিহা আক্তার (ছদ্মনাম) বলেন,অনেক সুযোগ-সুবিধার কথা শুনে নতুন হলে উঠেছিলাম।কিন্তু ঘটেছে তার উল্টো।হলের টয়লেট,করিডোর প্রায়ই অপরিষ্কার থাকে।এক হাজার শিক্ষার্থীর জন্য প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা এখানে নেই।আমরা এখনও নিজেদের চেয়ার-টেবিলগুলো পর্যন্ত পাইনি।’

হল অফিস সূত্রে জানা যায়, ২১ নং হল চালু হওয়ার পর অন্যান্য হল ও অফিস থেকে ৩৬ জন কর্মচারী নিয়ে আসা হয়েছে।এদের মধ্যে জয়েন করেছে ৩০ জন।মাত্র ৪ জন গার্ড পাহারায় নিয়োজিত আছেন।১০ তলা এ হলের মোট ৯০টি টয়লেট পরিষ্কারের জন্য আছেন মাত্র তিনজন সুইপার। কমনরুম-টিভিরুমের জন্য কোনও কর্মচারী নেই।ডাইনিংয়ের জন্য কোনও নিয়োগ না হওয়ায় এখনো ডাইনিং চালু করা যায়নি।এমনকি লিফট পরিচালনায় অপারেটরও নিয়োগ দেওয়া হয়নি।অপরদিকে,১৮ নং ছাত্রীহলে মাত্র একজন হল সুপারসহ মোট ৪৬ জন কর্মকর্তা-কর্মচারী নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। ক্লিনার ৭ জন ও সুইপার ৬ জন যা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই নগণ্য। মেয়েদের অন্যান্য আবাসিক হলে যেখানে দুই জন করে হল সুপার ও প্রায় ৬০-৭০ জন কর্মচারী কাজ করে।

২১ নং হলের প্রভোস্ট ড. মো. তাজউদ্দিন সিকদার বলেন, ‘আমাদের লোকবলের সংকটের কারণে অনেক কাজ করা যাচ্ছে না।হলের আয়ের একটি ক্ষেত্র তৈরি হলে তখন ধীরে ধীরে জিমনেশিয়ামের সরঞ্জামাদি ক্রয় করতে পারবো। লোকবল সংকটের কারণে অনেক সময় ডেইলি বেসিসে লোক দিয়ে পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতার কাজ করাতে হচ্ছে।লোকবলের বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে জানিয়েছি,তারা দ্রুতই লোকবল নিয়োগ দেওয়ার কথা জানিয়েছে।’

প্রয়োজনীয় আসবাবপত্র সরবরাহ ও লিফটের বিষয়ে জানতে চাইলে পরিকল্পনা ও উন্নয়ন কার্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মো. নাসির উদ্দিন বলেন,‘হল যখন চালু হয়েছে তখন নতুন আসবাবপত্র ক্রয়ের বিষয়ে সরকারের নিষেধাজ্ঞা ছিল।নতুন করে অনুমতি দিলে সেগুলো সরবরাহ করা হবে।যারা লিফটের কাজ করছে তারা সবগুলো লিফট চালুর জন্য যে সময়ের প্রয়োজন ছিল তা পায়নি।আমাদের বিদ্যুৎ সংযোগ দিতে দেরি হয়েছে,এ জন্যই এই সমস্যাটি হয়েছে।’

সার্বিক বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মো. নূরুল আলম মুঠোফোনে বলেন,লোকবল নিয়োগের জন্য আমরা বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনে (ইউজিসি) যাবো।লোকবল হয়ে গেলে আমাদের হলগুলো দ্রুত খুলে দিতে সুবিধা হবে ও কাজগুলো সুষ্ঠুভাবে হবে।এ ছাড়া গ্যাসের ব্যবস্থার জন্য আমরা বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। আশা করি দ্রুতই এর সমাধান হবে।’

আরও খবর

Sponsered content