আবহাওয়া বার্তা

শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের যেভাবেই মূল্যায়ন

  প্রতিনিধি ১৪ জুন ২০২৪ , ৬:০৮:৩২ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।নতুন শিক্ষাক্রমে ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির ষান্মাসিক মূল্যায়ন শুরু হচ্ছে আগামী ৩ জুলাই থেকে। পরীক্ষা শেষ হবে ৩০ জুলাই।একটি কর্মদিবসে একটি বিষয়ের মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে বিরতিসহ ৫ ঘণ্টায়।মূল্যায়নে লিখিত অংশও থাকবে।

ষান্মাসিক মূল্যায়নে যুক্ত হবে শিক্ষার্থীর শিখনকালীন পারদর্শিতা,অর্থাৎ সে কতটুকু শিখতে পারলো।ছয় মাসের মূল্যায়নের পর বছর শেষে অনুষ্ঠিত হবে বার্ষিক মূল্যায়ন। বার্ষিক মূল্যায়ন শেষে পরবর্তী শ্রেণিতে উঠতে হতে না পারলেও শিক্ষার্থীকে দেওয়া হবে রিপোর্ট কার্ড।

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির মূল্যায়নের রিপোর্ট কার্ডে উল্লেখ থাকবে বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতার ক্ষেত্র (নির্ধারিত কোন ক্ষেত্রে কতটা দক্ষ),উপস্থিতির হার ও শিক্ষার্থীর আচরণগত মূল্যায়ন দক্ষতা। উল্লেখ থাকবে শিক্ষকের মন্তব্যের পাশাপাশি অভিভাবক ও শিক্ষার্থীর মন্তব্যও।

‘জাতীয় শিক্ষাক্রম ২০২২’ এর মূল্যায়ন কৌশল ও বাস্তবায়ন নির্দেশনায় ষষ্ঠ থেকে নবম ও দশম শ্রেণির পারদর্শিতার নির্দেশকসহ (পিআই) বিষয়ভিত্তিক বিভিন্ন বিষয় স্পষ্ট করা হয়েছে।

জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান এ বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,কোনও শিক্ষার্থী উত্তীর্ণ হতে না পারলেও রিপোর্ট কার্ড পাবে।কারণ,সব বিষয়ে তো আর অনুত্তীর্ণ হবে না। তাতে লেখাপড়া যদি সে নাও করে,তারপরও তার যোগ্যতা অনুযায়ী কোনও না কোনও কাজে যেন নিযুক্ত হতে পারে।’

তিনি বলেন,ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে উপস্থিতির হার উল্লেখ থাকবে।তবে দশম শ্রেণির রিপোর্ট কার্ডে উপস্থিতির হার থাকবে না।কারণ,এই শ্রেণিতে ৭০ শতাংশ উপস্থিতি না থাকলে তো মূল্যায়নেই অংশ নিতে পারবে না।’

আচরণগত মূল্যায়ন প্রসঙ্গে অধ্যাপক মো. মশিউজ্জামান বলেন,ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির রিপোর্ট কার্ডে শিক্ষার্থীর আচরণগত দক্ষতা কতটা অর্জন করতে পেরেছে, সেই বিষয়টি উল্লেখ থাকবে।’

শ্রেণি উত্তরণ

প্রতিটি শিক্ষার্থীর ১০টি বিষয়ে সামগ্রিক পারদর্শিতা যাচাই করে এক শ্রেণি থেকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণ নির্ধারিত হবে। ১০টি বিষয় হচ্ছে— বাংলা,ইংরেজি,গণিত,বিজ্ঞান,ইতিহাস ও সামাজিক বিজ্ঞান,ডিজিটাল প্রযুক্তি,জীবন ও জীবিকা, ধর্ম শিক্ষা,স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি।

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এক শ্রেণি থেকে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের বিষয়ে দুটি দিক হচ্ছে—শিক্ষার্থীর বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার এবং বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা বিবেচনা।

বিদ্যালয়ে উপস্থিতির হার

একজন শিক্ষার্থী বিদ্যালয়ে ৭০ শতাংশ কর্মদিবসে উপস্থিত না হলে সে পরবর্তী শ্রেণিতে উন্নীত হওয়ার জন্য বিবেচিত হবে না।তবে জরুরি বা বিশেষ পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে উপস্থিতির হার ৭০ শতাংশের কম হলেও সব বিষয়ের শিক্ষকরা প্রধান শিক্ষকের সঙ্গে সম্মিলিত আলোচনার মাধ্যমে কোনও শিক্ষার্থীকে শ্রেণি উত্তরণের জন্য বিবেচনা করতে পারবেন।তবে তার জন্য যথেষ্ট যৌক্তিক কারণ ও তার সপক্ষে যথাযথ প্রমাণ থাকতে হবে।

মূল্যায়নের সাতটি ধাপ

বিষয়ভিত্তিক মূল্যায়নের ক্ষেত্রে সাতটি স্কেল বা ধাপের কথা বলা হয়েছে। এগুলো হচ্ছে— প্রারম্ভিক (ইলিমেন্টারি), বিকাশমান (ডেভেলপিং),অনুসন্ধানী (এক্সপ্লোরিং), সক্রিয় (অ্যাকটিভেটিং),অগ্রগামী (অ্যাডভানসিং), অর্জনমুখী (এচিভিং) ও অনন্য (আপগ্রেডিং)।শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন করে কোন শিক্ষার্থী কোন ধাপে আছে,তা নির্ধারণ করতে এই সাতটি স্কেল বা ধাপ রাখা হয়েছে।

‘প্রারম্ভিক’ মানে হলো সবচেয়ে নিচের ধাপ। আর ‘অনন্য’ হলো সবচেয়ে ভালো।

প্রতিটি পারদর্শিতার ক্ষেত্রের জন্য আলাদাভাবে শিক্ষার্থীর অবস্থান নির্ধারণ করা হবে।প্রতিটি পারদর্শিতার ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট নির্দেশক (পিআই) শিক্ষার্থীর অর্জিত মাত্রাগুলো সমন্বয় করে ওই পারদর্শিতার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীর অবস্থান কী,তা বোঝানো হবে।

শিক্ষার্থী,অভিভাবক ও শিক্ষক সবাই যাতে শিক্ষার্থীর অবস্থান স্পষ্টভাবে বুঝতে পারে, এ জন্য এই সাতটি অবস্থানকে সাতটি স্তর বিশিষ্ট ‘মূল্যায়ন স্কেল’ দিয়ে প্রকাশ করা হয়েছে।

বিষয়ভিত্তিক পারদর্শিতা

ষষ্ঠ থেকে নবম শ্রেণির মূল্যায়নে যদি দুটি বিষয়ে পারদর্শিতার ক্ষেত্রে ‘বিকাশমান’, অথবা এর নিচের স্তরে থাকলে ওই শিক্ষার্থী ওই বিষয়ে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে না।
কোনও বিষয়ে একের বেশি পারদর্শিতার ক্ষেত্রে ‘প্রারম্ভিক’ স্তরে থাকলে শিক্ষার্থী ওই বিষয়ে উত্তীর্ণ হিসেবে বিবেচিত হবে না।

কোনও শিক্ষার্থী তিন বা ততোধিক বিষয়ে অনুত্তীর্ণ থাকলে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হবে না।তবে কোনও শিক্ষার্থী এক বা দুটি বিষয়ে অনুত্তীর্ণ হলে শর্ত সাপেক্ষে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ করা যাবে।এক্ষেত্রে পরবর্তী এক বছরের মধ্যে অনুত্তীর্ণ বিষয়গুলোতে উত্তীর্ণ হওয়ার শর্ত পূরণ করতে হবে।তবে এই শর্ত শিখনকালীন ও সামষ্টিক মূল্যায়ন উভয় ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে।

শ্রেণি উত্তরণে পারদর্শিতা ও উপস্থিতির হার দুটোই লাগবে

পারদর্শিতার বিবেচনায় কোনও শিক্ষার্থী যদি পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের জন্য বিবেচিত না হয়,তবে শুধু উপস্থিতির হারের ভিত্তিতে তাকে উত্তীর্ণ করানো যাবে না।পারদর্শিতার বিবেচনায় যদি শিক্ষার্থী শ্রেণি উত্তরণের জন্য বিবেচিত হয়,কিন্তু উপস্থিতির হার নির্ধারিত হারের চেয়ে কম থাকে,সেক্ষেত্রে বিষয়ভিত্তিক শিক্ষকদের সমন্বিত সিদ্ধান্তের ভিত্তিতে বিদ্যালয় প্রধান ওই শিক্ষার্থীর পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তরণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।

যদি কোনও শিক্ষার্থী শ্রেণি উত্তরণের জন্য ন্যূনতম উপস্থিতির শর্ত পূরণ করে কিন্তু অসুস্থতা,দুর্ঘটনা,প্রাকৃতিক দুর্যোগ, ইত্যাদি কোনও যৌক্তিক কারণে বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নে অংশ না নিতে পারে,সেক্ষেত্রে আগের পারদর্শিতার রেকর্ডের ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়-শিক্ষকের দেওয়া মতামত বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

শিক্ষার্থীর আগের পারদর্শিতার রেকর্ড বলতে ষান্মাসিক ট্রান্সক্রিপ্ট এবং শিখনকালীন মূল্যায়নের রেকর্ডকে বিবেচনা করতে হবে।

একইভাবে যদি কোনও শিক্ষার্থী উপস্থিতির শর্ত পূরণ করে যৌক্তিক কারণে ষান্মাসিক সামষ্টিক মূল্যায়নে অনুপস্থিত থাকে,কিন্তু বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়নে অংশ নেয়— সেক্ষেত্রেও শর্তগুলো প্রযোজ্য হবে।যদি কোনও শিক্ষার্থী উপস্থিতির শর্ত পূরণ করে,কিন্তু যৌক্তিক কারণে ষান্মাসিক ও বাৎসরিক সামষ্টিক মূল্যায়ন— দুই ক্ষেত্রেই অনুপস্থিত থাকে, সেক্ষেত্রে শিখনকালীন মূল্যায়নের পারদর্শিতার ভিত্তিতে সংশ্লিষ্ট বিষয়-শিক্ষকের দেওয়া মতামত বিবেচনায় নিয়ে প্রতিষ্ঠান প্রধান তার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।ঔউত্তরণের জন্য বিবেচিত না হলেও সব শিক্ষার্থী বছর শেষে তার পারদর্শিতার ভিত্তিতে ট্রান্সক্রিপ্ট পাবে।

যদি কোনও শিক্ষার্থী এক বা একাধিক বিষয়ে শিখন ঘাটতি নিয়ে পরবর্তী শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হয়,তাহলে সংশ্লিষ্ট শিক্ষক শিক্ষার্থীর জন্য পরবর্তী শিক্ষাবর্ষে বাস্তবায়নের জন্য একটি শিখন সমৃদ্ধকরণ পরিকল্পনা করে— সেটি পরবর্তী শ্রেণির সেই বিষয়ের শিক্ষককে অবহিত ও হস্তান্তর করবেন। এই পরিকল্পনার অংশ হিসেবে শিক্ষার্থীর নিজেরও একটি আত্মউন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করার সুযোগ থাকবে।

যেসব শিক্ষার্থী কোনও বিষয়ে বয়সের তুলনায় ‘অগ্রসরমান’ হয়,তাদের জন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিশেষ ব্যবস্থা নিতে পারবে।

একইভাবে দশম শ্রেণির মূল্যায়ন অনুষ্ঠিত হবে।উত্তীর্ণ বা শর্ত সাপেক্ষে উত্তীর্ণ কোনও শিক্ষার্থী মান উন্নয়নের জন্য এক বা একাধিক বা সব বিষয়ে পুনরায় পাবলিক মূল্যায়নে অংশ নিতে পারবে।

একজন নিবন্ধিত শিক্ষার্থী দশম শ্রেণির শিখনকালীন মূল্যায়নের শর্ত পূরণ সাপেক্ষে পরবর্তী যেকোনও পাবলিক মূল্যায়নে (এসএসসি মূল্যায়ন) অংশ নিয়ে রিপোর্ট কার্ড বা পারদর্শিতার সনদ নিতে পারবে।

আরও খবর

Sponsered content