সারাদেশ

রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্বদেশে ফেরার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন

  প্রতিনিধি ২৫ আগস্ট ২০২৩ , ৩:৫২:৫২ প্রিন্ট সংস্করণ

উখিয়া(কক্সবাজার)প্রতিনিধি।।সেনাবাহিনীর হত্যা-ধর্ষণ ও নিপীড়ণের মুখে রাখাইনের জন্মভূমি থেকে বাস্তুচ্যুত হওয়া রোহিঙ্গা শরণার্থীরা স্বদেশে ফেরার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের দৃষ্টি আকর্ষণ করেছেন।

রোহিঙ্গা ঢল নামার ছয় বছরের মাথায় শুক্রবার কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফের বিভিন্ন ক্যাম্পে হাজার হাজার শরণার্থী দ্রুত প্রত্যাবাসনের দাবিতে সমাবেশে এ দাবি উত্থাপন করে।

সকাল ১০টা থেকে বৈরী আবহাওয়া উপেক্ষা করে বিভিন্ন ক্যাম্পের ইউনিট থেকে সাধারণ রোহিঙ্গারা ছোট ছোট মিছিল নিয়ে এসব সমাবেশে যোগদান করেন।এ সময় তাদের হাতে ইংরেজি ও রোহিঙ্গাদের মাতৃভাষায় লেখা ছোট ছোট ব্যানার ছিল।

ব্যানারে লেখা ছিল- ‘আমরা জন্মগতভাবে মিয়ানমারের নাগরিক’,আমরা স্বদেশে ফিরতে চাই’,দ্রুত প্রত্যাবাসন চাই’, ‘রিফিউজি জীবন চাই না,মিয়ানামারে ফিরতে চাই’ ইত্যাদি।

রোহিঙ্গা নেতারা জানিয়েছে,উখিয়া ও টেকনাফের ৩৩টি নিবিন্ধত ক্যাম্পের মধ্যে ১৩টিতে শুক্রবার সামবেশ করেছেন তারা।

সমাবেশে রোহিঙ্গা নেতারা বলেন,তারা জন্মগতভাবে মিয়ানমারের নাগরিক।গণহত্যা ও জাতিগত নিধনযজ্ঞ থেকে বাঁচতে তারা বাংলাদেশ পালিয়ে এসেছেন,এখানে আশ্রয় নিয়েছেন।এটা রিফিউজি জীবন।এমন জীবন তারা চান না। তারা দ্রুত স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরতে চান।

এজন্য আন্তর্জাতিক সব মহলের সহযোগিতা চেয়েছেন রোহিঙ্গারা নেতারা।

২০১৭ সালের ২৫ অগাস্ট থেকে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে নির্যাতন ও গণহত্যার শিকার হয়ে রোহিঙ্গারা দেশ ছেড়ে কক্সবাজারের উপকূলবর্তী শরণার্থী শিবির গড়ে আশ্রয় নেন। ইতিহাসের সর্ববৃহৎ এই ঢলে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশ মানবিক বিবেচনায় আশ্রয় দেয়।এর আগে থেকে দেশে আরও চার লাখের রোহিঙ্গা বসবাস করে আসছিল।সব মিলিয়ে বাংলাদেশে এখন ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা রয়েছে বলে ধারণা করা হয়।

অনেকদিন ধরেই রোহিঙ্গাদের তাদের জন্মভূমি মিয়ানমারে পাঠানোর জন্য উদ্যোগ নেওয়া হলেও নানা প্রতিবন্ধকতার কারণে তা আর বাস্তবায়ন হয়নি।এখনও রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়টি ঝুলে আছে।রোহিঙ্গাদের দাবি,তাদের নাগরিকত্ব ও নিরাপত্তা নিশ্চিত করেই প্রত্যাবাসন সম্পন্ন করতে হবে মিয়ানমারকে।

অপরদিকে রোহিঙ্গাদের একটি অংশ মাদক পাচার,অপহরণ, মানবপাচারসহ নানা ধরনের অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে; ফলে শরণার্থী আশ্রয় শিবিরগুলোতে প্রতিনিয়তই খুন-সংঘর্ষের মতো ঘটনা ঘটছে।এটা স্থানীয় মানুষদের নিরাপত্তাকেও হুমকির মুখে ফেলেছে।

নিজেদের দেশে ফেরত যাওয়ার দাবি জানিয়ে রোহিঙ্গারা প্রতিবছরই এদিনে তাদের ক্যাম্পে সমাবেশের আয়োজন করে থাকে।২০১৯ সালের ২৫ অগাস্ট ক্যাম্পে প্রথম বড় সমাবেশ করা হয়,যার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন মাস্টার মুহিবুল্লাহ।পরে তিনি মিয়ানমারের সশস্ত্র সন্ত্রাসী গ্রুপ আরসার সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হন।

এরই ধারাবাহিকতায় শুক্রবার উখিয়ার লম্বাশিয়া ১ নম্বর ক্যাম্পে শিশু-কিশোরসহ হাজারো রোহিঙ্গাকে স্বদেশে ফিরে যাওয়ার স্লোগান দিতে দেখা গেছে।সেখানে গণহত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার দ্রুত শেষ করার দাবিও জানানো হয়।

লম্বাশিয়া ক্যাম্পের সমাবেশে সভাপতিত্ব করেন আরাকান রোহিঙ্গা পিস ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়ের।এতে আরও বক্তব্য দেন রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন,রোহিঙ্গা এফডিএমএন রিপ্রেজেনটেটিভ কমিটির বোর্ড সদস্য ছৈয়দ উল্লাহ,জমালিকা বেগম,মোহাম্মদ মুসা,মাস্টার শোয়াইব।

এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিউনিটির মুখপাত্র কামাল হোসেন বলেন,আমরা অধিকার নিয়ে নিজ দেশে ফিরে যেতে চাই।আমরা আর রিফিউজি জীবন চাই না।নিজ দেশে গিয়ে বাকি জীবন কাটাতে চাই।

“কারণ,আমরা বাংলাদেশের নাগরিক নই,আমরা মিয়ানমারের নাগরিক।আমাদের নাগরিকত্ব আর নিজ গ্রামের ভিটেমাটি ফেরত দিলেই আমরা দ্রুত দেশে ফিরে যাব।

তিনি হুমকি দিয়ে বলেন,প্রত্যাবাসন নিয়ে মিয়ানমার কালক্ষেপণ করছে।দ্রুত প্রত্যাবাসন শুরু না করলে আমরা যেভাবে দলবেঁধে বাংলাদেশে এসেছিলাম,ওইভাবে দলবেঁধে স্বদেশ মিয়ানমারে ফিরে যাব।”

এফডিএমএন রিপ্রেজেন্টেটিভ কমিউনিটির বোর্ড সদস্য মোহাম্মদ মুসা বলেন, “২০১৭ সালে গণহত্যার কারণে নিজেদের ভিটেবাড়ি ছেড়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছি।ছয় বছর হয়েছে আর না।পূর্ণ নাগরিক অধিকার দিয়ে মর্যাদাপূর্ণ প্রত্যাবাসন চাই।”

সমাবেশ থেকে পাঁচ দফা উপস্থাপন করেন আরাকান রোহিঙ্গা পিস ফর হিউম্যান রাইটসের চেয়ারম্যান মাস্টার মোহাম্মদ জোবায়ের।

দাবির মধ্যে রয়েছে-রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে দ্রুত প্রত্যাবাসন নিশ্চিত করা,জাতিগত পরিচয়ের স্বীকৃতি প্রদান,মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের জন্য সেফ জোন নিশ্চিত করা,রাখাইনের বাড়িজমি ফিরিয়ে দিয়ে নাগরিকত্ব প্রদান ইত্যাদি।

সমাবেশ থেকে রোহিঙ্গারা ২৫ অগাস্টকে গণহত্যা ও কালো দিবস আখ্যায়িত করে এর বিচার দাবি করেন।মানবিক দিক বিবেচনায় আশ্রয় দেওয়ায় রোহিঙ্গারা বাংলাদেশ সরকার ও জনগণের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

লম্বাশিয়া ছাড়াও উখিয়ার পালংখালীর জামতলী, ময়নারঘোনা,টেকনাফের লেদা ক্যাম্পে বড় সমাবেশ হয়েছে।

এসব সমাবেশে আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন-এপিবিএন, জেলা পুলিশসহ আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা উপস্থিত ছিলেন।

সমাবেশ শেষে রোহিঙ্গারা নিজেদের দেশে ফিরে যেতে মোনাজাতে অংশ নেন।

আরও খবর

Sponsered content