জাতীয়

রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে

  প্রতিনিধি ২০ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ২:২৮:৪৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিএনপি বলেছে নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকার ছাড়া আগামী নির্বাচনে তারা অংশগ্রহণ করবে না। অবাধ সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প নেই বলেও ঘোষণা করেছে।

এ নিয়ে তারা রাজপথে আন্দোলন জমাতে না পারলেও কূটনৈতিক অঙ্গনেও ঘটা করেই বৈঠক বিভিন্ন রকম বৈঠক করছেন। আর এই বৈঠকগুলোতে তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যৌক্তিকতা তুলে ধরার চেষ্টা করছেন। তবে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রসহ কোয়াডভুক্ত দেশগুলো জানিয়ে দিয়েছে যে, শুধুমাত্র তত্ত্বাবধায়ক সরকারের জন্য সংবিধান সংশোধনকে তারা সমর্থন করে না।

বরং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র বিএনপিকে সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যেই কোনো সমাধান খুঁজে বের করার জন্য পরামর্শ দিয়েছে। এই পরামর্শের আলোকেই বিএনপির আইনজীবীরা এখন সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের সম্ভাব্যতা যাচাই করছে এবং এ ব্যাপারে তারা তিনটি পথ খুঁজে পেয়েছে বলেও একাধিক দায়িত্বশীল সূত্র নিশ্চিত করেছে।

বিএনপি সূত্রে বলা হয়েছে, এই তিনটি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ফর্মুলা নিয়ে তারা আবার কূটনৈতিকদের সঙ্গে কথা বলবেন এবং কূটনীতিকরা যেটির ব্যাপারে সবুজ সংকেত দিবেন সেটিকে আরও পরিপূর্ণ করে আনুষ্ঠানিকভাবে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের রূপরেখা হিসেবে উপস্থাপন করবেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের যে তিনটি ফর্মুলা দেওয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে:

১. টেকনোক্র্যাট প্রধানমন্ত্রী: বিএনপি আইনজীবীরা মনে করছেন বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একজন নিরপেক্ষ ব্যক্তিকে প্রধানমন্ত্রী করা যায়। বর্তমান সংবিধানে এক-দশমাংশ টেকনোক্র্যাট মন্ত্রী রাখার সুযোগ রয়েছে। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে যেকোনো একজন সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিকে মন্ত্রী বানাতে পারেন এবং সেই মন্ত্রী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে পারেন এবং প্রধানমন্ত্রী ছুটিতে বা নিষ্ক্রিয় হয়ে থাকতে পারেন।

এই ফর্মুলায় বলা হয়েছে, এমনকি যদি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও প্রধানমন্ত্রী থাকেন কিন্তু তিনি যদি কোনো দপ্তর না রাখেন এবং টেকনোক্র্যাট ব্যক্তির কাছে যদি স্বরাষ্ট্র, জনপ্রশাসন, পররাষ্ট্র, প্রতিরক্ষার মত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয় দেয়া যায় তাহলে তার নেতৃত্বে একটি নির্বাচন করা সম্ভব। তবে এই মতের ব্যাপারে বিএনপির কোনো কোনো আইনজীবী বলছেন, সংবিধানে প্রধানমন্ত্রীকে নিরঙ্কুশ ক্ষমতা দেয়া হয়েছে।

কোনো মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে না থাকলেও তিনি সকল ক্ষমতার অধিকারী। কাজেই এটি করা হলেও শেষ পর্যন্ত শেখ হাসিনার অধীনেই নির্বাচন করা হবে। তাছাড়া এই দাবিটি বিএনপির দাবির সাথে সাংঘর্ষিক। তবে বিএনপির কোনো কোনো নেতা বলছে এটি মন্দের ভালো। একজন গ্রহণযোগ্য টেকনোক্র্যাট মন্ত্রীর হাতে যদি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়গুলো দেয়া হয় এবং প্রধানমন্ত্রী যদি নিষ্ক্রিয় থাকেন তাহলে বিএনপির দাবি আংশিক হলেও পূরণ হয়।

২. রাষ্ট্রপতির কর্তৃত্ব: বিএনপির নেতারা মনে করছেন যে, প্রধানমন্ত্রী এবং মন্ত্রিসভা থাকার পরও যদি রাষ্ট্রপতির হাতে নির্বাচনকালীন সময়ে কর্তৃত্ব রাখা হয় এবং রাষ্ট্রপতির পদকে যদি নির্বাচনকালীন সময়ে রাজনৈতিক ঐক্যের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ করা হয় তাহলে বর্তমান সরকারের অধীনে একটি নির্বাচন সম্ভব। তবে এটি নির্ভর করবে সরকার রাষ্ট্রপতি কাকে নিয়োগ করছে তার ওপর।

কারণ আগামী কয়েক মাসের মধ্যেই আওয়ামী লীগকে একজন নতুন রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত করতে হবে এবং এই রাষ্ট্রপতির নেতৃত্বে আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। একজন গ্রহণযোগ্য ব্যক্তি যদি রাষ্ট্রপতি হন তাহলে তাকে ক্ষমতায়ন করে বর্তমান সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব বলে অনেকে মনে করছেন।

৩. নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভাকে নিষ্ক্রিয় রাখা: বিএনপির তৃতীয় ফর্মুলা হচ্ছে নির্বাচনকালীন যে মন্ত্রিসভা থাকবে সে মন্ত্রিসভা নিষ্ক্রিয় থাকবে এবং এই নিষ্ক্রিয় মন্ত্রিসভায় আওয়ামী লীগ এবং অন্যান্য বিরোধী দলের সমপরিমাণ সদস্য সংখ্যা থাকবে। তবে তারা শুধু নামেই মন্ত্রী থাকবেন কিন্তু কোনো দায়িত্ব পালন করতে পারবেন না। বরং এই দায়িত্ব গুলো পালন করবে একটা উপদেষ্টামণ্ডলী যেটি প্রধানমন্ত্রী তৈরি করবেন। বর্তমান সরকারেরও বেশকিছু উপদেষ্টা আছেন। ওই নির্বাচনকালীন সময়ে প্রধানমন্ত্রী ১০জন উপদেষ্টা নিয়োগ দিবেন এবং উপদেষ্টারাই দেশ পরিচালনা করবেন, মন্ত্রীরা শুধুমাত্র নামে মন্ত্রী থাকবেন। এরকম একটি পদ্ধতি যদি শেষ পর্যন্ত হয় এবং এটি নিয়ে যদি রাজনৈতিক সমঝোতা হয় তবে সেভাবেও আগামী নির্বাচন হতে পারে।

তবে বিএনপির নীতিনির্ধারকরা বলছে যে, তারা এখন পর্যন্ত নির্দলীয় নিরপেক্ষ তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিকল্প ভাবছেন না। কিন্তু শেষ পর্যন্ত একটি সমঝোতার জায়গা হিসেবে এ বিষয়গুলো আলোচনা হতে পারে এবং আলোচনার পরই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে যে, কিভাবে নির্বাচন সুষ্ঠু করা যায় এবং কোন পদ্ধতিতে নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে।

আরও খবর

Sponsered content