জাতীয়

রমজান,সেচ মৌসুম এবং গরমের কারণে আগামী মাস থেকেই বাড়বে বিদ্যুৎ চাহিদা

  প্রতিনিধি ১০ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ , ২:৫৮:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।চলতি মৌসুমেও দেশের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাত বড় চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।রমজান,সেচ মৌসুম এবং গরমের কারণে আগামী মাস থেকেই বাড়বে বিদ্যুৎ চাহিদা।তাছাড়া চলতি মৌসুমে দৈনিক সর্বোচ্চ চাহিদা ১৭ হাজার মেগাওয়াট ছাড়ানোর পূর্বাভাস বিদ্যুৎ বিভাগের।এ পরিমাণ বিদ্যুৎ সরবরাহের সক্ষমতা থাকলেও ভাবনার কারণ জ্বালানি ও ডলার সংস্থান।

বৈশ্বিক প্রতিকূল পরিস্থিতি,চলমান ডলার সংকট,পুঞ্জিভূত বকেয়া,গ্যাস-কয়লাসহ জ্বালানির ঘাটতি,এবং পায়রার মতো সবচেয়ে বড় ও নির্ভরযোগ্য কেন্দ্র বন্ধ থাকা; এমন সব টালটামাল অবস্থার কারণে দেশের বিদ্যুৎ খাতকে গত দুই বছরই ধুঁকতে হয়েছে।যার ফলে চরম লোডশেডিংয়ে নাকাল হন সব প্রান্তের গ্রাহক।

বছর ঘুরে আবারও যখন ঘনিয়ে আসছে গরম,তখন উঁকি দিচ্ছে সংকটের সংশয়।এবারও কি আগের তিক্ত অভিজ্ঞতা পাবেন ভোক্তারা?নাকি তুলনামূলক স্বস্তি পাবেন?ঘুরপাক খাচ্ছে এমনসব প্রশ্ন।

গরম,রমজান এবং সেচ মৌসুমের কারণে আগামী মাস থেকেই পাল্লা দিয়ে বাড়বে বিদ্যুতের চাহিদা।বিদ্যুৎ বিভাগের পূর্বাভাস,আগেরবারের তুলনায় প্রায় ২ হাজার মেগাওয়াট বেড়ে চলতি মৌসুমে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা দাঁড়াতে পারে ১৭ হাজার ৮০০ মেগাওয়াট।গত মৌসুমে বিদ্যুতের চাহিদা ছিল ১৬ হাজার মেগাওয়াট।

তবে ১১ শতাংশের বেশি বিদ্যুৎ চাহিদা বাড়লেও,জ্বালানি সংস্থানে রাতারাতি বড় কোনো পরিবর্তন দৃশ্যমান নয়।এর ওপর আরেক ভাবনার কারণ ডলার নিয়ে টানাটানি। এবার সেচ মৌসুমে বিদ্যুৎ পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে প্রয়োজন ১ লাখ ৫৫ হাজার মেট্রিক টন ফার্নেস অয়েল,১৫ হাজার ৬০০ মেট্রিক টন ডিজেল এবং দৈনিক কয়লার চাহিদা ৩০ হাজার টন। যার জন্য লাগবে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রার ছাড়।

এছাড়া এবার বিদ্যুৎ বিভাগের দৈনিক চাহিদা ১৫৪ থেকে ১৭৬ কোটি ঘনফুট গ্যাস।যেখানে গতবার বিদ্যুৎ খাতে ১১০ থেকে ১২৫ কোটি ঘনফুট গ্যাস জুগিয়েই হাঁপিয়ে যায় জ্বালানি বিভাগ। সে কারণেই এবার সংশ্লিষ্টদের কপালে চিন্তার ভাঁজ।

একদিকে অভ্যন্তরীণ খাতে অপর্যাপ্ততা।অন্যদিকে সংকটময় বৈশ্বিক বাস্তবতা।এমন প্রেক্ষাপটে চলতি বছরও চ্যালেঞ্জের মুখে দেশের জ্বালানি খাত।সেই ক্ষেত্রে কৌশলী কর্মপরিকল্পনা নিয়ে এগোতে না পারলে সাম্প্রতিক বছরের মতো চলতি মৌসুমেও সংকটে পড়ার শঙ্কায় রয়েছে জ্বালানি বিভাগ।

এবিষয়ে আন্তর্জাতিক জ্বালানি পরামর্শক প্রকৌশলী সালেক সুফী বলেন,বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড,বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশন এবং পেট্রোবাংলার প্রচুর বকেয়া পড়ে রয়েছে।বর্তমানে পুরো সিস্টেমেই বেশ অস্থিরতা বিরাজ করছে।

জ্বালানি বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ড. বদরূল ইমাম বলেন, এলএনজির (তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস) ওপর যদি ব্যাপকভাবে নির্ভর করা হয়, তাহলে যে আর্থিক চাপ পড়বে, সেটি বাংলাদেশের এই ডলার সংকটের সময়ে বড় রকমের অসুবিধার মধ্যে ফেলবে জ্বালানি বিভাগকে। সুতরাং, আমাদের এ সমস্যা আসন্ন গ্রীষ্মে বড় আকারে হয়ে আসার পূর্বাভাস দিচ্ছে।কাজেই,এখন থেকেই আমাদের উচিত হবে দেশীয় যেসব গ্যাসকূপ রয়েছে,সেগুলোর উৎপাদন যাতে আরও না কমে যায়,তা নিশ্চিত করা।সেগুলো থেকে উৎপাদনের মাত্রা সমানতালে রাখা বা সম্ভব হলে আরও বাড়াতে হবে।

অবশ্য চ্যালেঞ্জ উতরিয়ে পরিস্থিতি সহনীয় রাখার ব্যাপারেই নীতিনির্ধারকরা আশ্বাস দিচ্ছেন।এমনটা আশ্বাস দিয়েই বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বিপু বলেন,আমরা যদি নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে চাই, তাহলে সময়মতো অর্থের যোগান দিতে হবে।এটি নিয়ে আমরা পরিকল্পনা করছি।আমরা ইতোমধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলেছি। আমরা আশাবাদী যে ভালো অবস্থানে থাকব।

এরই ধারাবাহিকতায় সংকটময় পরিস্থিতিতে জ্বালানি আমদানি স্বাভাবিক রাখতে ইসলামিক ট্রেড ফাইন্যান্স করপোরেশনের (আইটিএফসি) সঙ্গে ২১০ কোটি ডলারের ঋণচুক্তি করেছে জ্বালানি বিভাগ।

আরও খবর

Sponsered content