অপরাধ-আইন-আদালত

মেহেন্দিগঞ্জে গৃহবধূকে ধর্ষণ অভিযোগে আটকিয়ে রেখে ইউপি সদস্যকে মারধর-অতঃপর:-

  প্রতিনিধি ১৬ অক্টোবর ২০২৩ , ৫:১৮:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

0Shares

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বরিশালের মেহেন্দিগঞ্জ উপজেলার শ্রীপুর ইউনিয়নের ইলিশা-কোড়ালিয়ার মেম্বার মোঃ শাহীন বয়াতিকে প্রতিবেশী গৃহবধুকে ধর্ষনের অভিযোগে আটকিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে শালিসি বৈঠকে অমানুষিক নির্যাতন করা হয়।গুরুতর আহত অবস্থায় উদ্ধার করে স্বজনরা শেবাচিম হাসপাতালে ভর্তি করে।চিকিৎসার পর সুস্থ হলে দ্বিতীয় দফায় কাজী ‌সাখাওয়াত হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে কতিপয় শালিসগন বিচারের মাধ্যমে ধর্ষিত ভিকটিম ও তার স্বামী-ভাসুরের ২০হাজার ‌টাকা জরিমানা করে বলে অভিযোগ ভিকটিমের পরিবারের।তবে শালিসগন ‌জরিমানা আদায়ের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন।‌

সরজমিনে গিয়ে জানাগেছে,বুধবার(১১ অক্টোবর ২০২৩) রাত পৌনে ১২টায়শ্রীপুর ইউনিয়নের ৬নং ওয়ার্ডের মেম্বার মোঃ শাহীন বয়াতিকে ঘটনার দিন রাতে সম্ভাব্য মেম্বার প্রার্থী মোঃ কাদের হাওলাদারের পারিবারিক সমস্যা সমাধান করতে ঘর থেকে ডেকে নিয়ে যান।বাড়ি ফেরার পথে ভিকটিমের বাড়ির উপর দিয়ে আসার সময় চোর চোর করে ধরে মধ্যযুগীয় কায়দায় লোহার রড ও রুয়া দিয়ে পিটিয়ে হত্যা চেষ্টা চালিয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন শাহীন মেম্বারের শাশুড়ি।তারপর স্হানীয়রা আসলেই সম্ভাব্য মেম্বার প্রার্থী কাজী নাজিম উদ্দিনের ঘরে নিয়ে রশি দিয়ে বেঁধে মারধর করে তাড়িয়ে দিয়েছে কতিপয় শালিসরা।যাদের নাম কেউ ভয়ে বলতে নারাজ।

তবে গৃহবধূ জানান,শাহীন মেম্বার গৃহবধুকে জোরপূর্বক ধর্ষণ করে।গৃহবধুর আত্মচিৎকার শুনে ভাসুর-স্বামী সহ স্হানীয়রা এসে উপস্থিত হয়ে হাতেনাতে আটক করে।অতঃপর স্হানীয়রা কাজী নাজিম উদ্দিন আলম এর নেতৃত্বে কতিপয় সালিশীগন উত্তম-মাধ্যম দিয়ে ছেড়ে দেন।ধর্ষিত ভিকটিম থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে চাইলেও গৃহবধুকে গৃহবন্দি রেখে মামলা করতে থানায় যেতে দেয়নি বলে অভিযোগ করেন।

মোঃ গাফফার রাড়ী (ভিকটিমের স্বামী) সাংবাদিকদের বলেন,প্রতিনিয়ত আমার স্ত্রীকে বিরক্ত করে।আরও অনেকবার আমার বড় ভাই ফিরোজ রাড়ী শাহীন বয়াতিকে ধরলেও ছেড়ে দেন।বুধবার আমরা সবাই মিলে ধরে দরজা লাগানো কাঠ দিয়ে ইচ্ছে মতো পিঠাইছি।এরপর নাজিম কাজীর ঘরে নিয়ে শালিস-মিমাংসা বৈঠকে উপস্থিত শালিসগনরা উত্তম-মাধ্যম দিয়ে পা-হাত ধরে ক্ষমা চেয়েছে।সুস্থ ও সবল মানুষ অসুস্থ ভান করে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে।দুইদিন হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা শেষে বাড়ি ফেরার পর দ্বিতীয় দফায় কাজী ‌সাখাওয়াত হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে কতিপয় শালিসগন বিচারের বৈঠক বসিয়ে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে শাহীন মেম্বারকে মারধর করার অভিযোগে ধর্ষিত ভিকটিম ও তার স্বামী-ভাসুরের ২০হাজার টাকা জরিমানা করছে দাবি করেছেন তিনি।

বাহের চর গ্রামের মেম্বার আব্দুল ছালাম হাওলাদার ঘটনার সত্যতা স্বীকার করে বলেন,শাহীন ভুল করছেন।মেম্বার মানুষ হিসেবে তাকে শারীরিক নির্যাতন করা ঠিক হয়নি।এখানে চিকিৎসার খরচ সত্তার রাড়ীর ২ ছেলেকে দিতে হয়েছে। বিষয়টি বাদ দিন।আর বাড়াবাড়ির দরকার নেই।

ভিকটিমের ভাসুর গাফফার রাড়ীর বড় ভাই ফিরোজ রাড়ী সাংবাদিকদের জানিয়েছেন,বিষয়টি কাজী সাখাওয়াত হোসেন রুবেলের নেতৃত্বে স্হানীয়রা ফয়সালা করে দিয়েছে।আমাদের ২০হাজার টাকা জরিমানা করছে।যদি এনিয়ে বাড়াবাড়ি করি, আমাদের ক্ষতি হবে।মামলা করতে চাইনা।আপনারা ভিকটিমের অভিযোগের ভিডিও ফুটেজ ডিলেট করে ফেলেন।

এব্যাপারে মেম্বার শাহীন বয়াতি সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, এলাকায় বেশকয়েকটি চুরির ঘটনা ঘটেছে।এরআগে গাফফার রাড়ীর বউ একাধিক ব্যক্তির সঙ্গে অনৈতিক কর্মকাণ্ড করে ধরা পড়েছে।ওইদিন রাতে এক লোক মিটিমিটি লাইট জ্বালিয়ে গাফফার রাড়ী ঘরে প্রবেশ করে।আমি তাকে দেখে তার পিছনে ছুটে গাফফার রাড়ীর ঘরের সামনে যেতেই ফিরোজ রাড়ী আমাকে ঝাপটিয়ে ধরে,তারপর ৫/৭জন মিলে অমানুষিক নির্যাতন করে।রাজনৈতিক কারণে তাঁকে ফাঁসানো হয়েছে।চোর ধরতে গিয়ে নিজেই ফেঁসে গেলাম।

বরিশাল উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য কাজী উদ্দিন ফরহাদের চাচাতো ভাই শ্রীপুর ইউনিয়নের বিএনপির সাবেক সভাপতি ও সদ্য যোগদানকৃত কৃষক লীগের নেতা কাজী সাখাওয়াত হোসেন রুবেলের কাছে সাংবাদিকরা জানতে চাইলেও সদুত্তর পাওয়া যায়নি।

এব্যাপারে মেহেন্দিগঞ্জ থানার ওসি শফিকুল ইসলাম সাংবাদিকদের জানান,অভিযোগ পাইনি,অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হবে।

এবিষয়ে বরিশাল জেলার পুলিশ সুপার মোঃ ওহিদুল ইসলাম বলেন,ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়েছে।অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ পূর্বক অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

বরিশাল রেঞ্জের ডিআইজি মোঃ জামিল হাসান সাংবাদিকদের জানান,ভিকটিমের ভিডিও ফুটেজ এর অভিযোগ ভিত্তিতে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেয়া হয়েছে

বিস্তারিত—-আসছে

0Shares

আরও খবর

Sponsered content

0 Shares