প্রতিনিধি ২৩ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:৫৬:২০ প্রিন্ট সংস্করণ
গাইবান্ধা প্রতিনিধি।।গাইবান্ধার ফুলছড়ির দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামে বাড়িতে নৌকার পোস্টার টানানো ও স্বতন্ত্র প্রার্থীর প্রচারে অংশ না নেয়ায় প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবারকে ভাতা বন্ধের হুমকির অভিযোগ উঠেছে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতার বিরুদ্ধে।
এ বিষয়ে শুক্রবার রাতে ফুলছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান জিএম সেলিম পারভেজসহ তিনজন নামীয় ও অজ্ঞাত আরও চার থেকে পাঁচজনের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ করেছে ওই বীর মুক্তিযোদ্ধার পরিবার। অভিযোগের একটি কপি এসেছে নিউজবাংলার হাতে।
অভিযুক্ত অপর দুজন হলেন ফুলছড়ির দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামের লিটন মিয়া ও একই এলাকার আলামিন ইসলাম বাবু।
অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিউজবাংলাকে নিশ্চিত করে ফুলছড়ি থানার ওসি রাজিফুজ্জামান বসুনিয়া বলেন, ‘এ সংক্রান্ত একটি অভিযোগ পেয়েছি।বিষয়টি তদন্ত করা হচ্ছে।সত্যতা পাওয়া গেলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।
কিআছে অভিযোগে
দক্ষিণ রসুলপুর গ্রামের প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধা বাচ্চু মিয়ার ছেলে মো. বাবলু মিয়ার করা ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়,পরিবারটি দীর্ঘদিন ধরে আওয়ামী লীগের সমর্থক।দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তারা গাইবান্ধা-৫ আসনে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী মাহমুদ হাসান রিপনের সমর্থক।নির্বাচনে তার পরিবারসহ সবাই নৌকার পক্ষে কাজ করছে।প্রচারের অংশ হিসেবে তার (বাবলু) বাড়ির উঠানে নৌকার পোস্টার টানানো হয়।এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সম্প্রতি বাবলু মিয়াকে ওই আসনে ট্রাক প্রতীকের স্বতন্ত্র (আওয়ামী লীগ) প্রার্থী ফারজানা রাব্বী বুবলীর প্রচারে অংশ নিতে বলেন জিএম সেলিম পারভেজ।তাতে রাজি না হওয়ায় সেলিম পারভেজ প্রয়াত বাবার মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করবে বলে হুমকি দেন বাবলুকে।
অভিযোগে সেলিমের বক্তব্য উদ্ধৃত করে বাবলু লিখেন, ‘যদি নৌকা বাদ দিয়ে ট্রাকের পক্ষে না আসিস, তাহলে তোদের মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দেব। আমি উপজেলা চেয়ারম্যান।তোদের তেল বেশি হয়েছে।’
অভিযোগে বলা হয়, গত ২১ ডিসেম্বর বিকেলে ফুলছড়ির বালাশীঘাটের নৌকা মালিক সমিতির সভাপতি অভিযুক্ত লিটন মিয়া ও আলামিন ইসলাম বাবুসহ অজ্ঞাত কয়েকজন বাবলুদের বাড়িতে প্রবেশ করে তাকে না পেয়ে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ করেন।ওই সময় বাবলুর মা বেবি বেওয়াকে মারধর করে শ্লীলতাহানির চেষ্টা করেন তারা।একই দিন রাত সাড়ে ১০টার দিকে অভিযুক্তরা দ্বিতীয় দফায় বাবলুর বসতবাড়ি সংলগ্ন জমিতে বাবলুকে একা পেয়ে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় মারধর করেন।পরে চিৎকারে তার স্ত্রী বাঁচাতে এগিয়ে এলে তাকেও মারধর করে শ্লীলতাহানি করা হয়।
লিখিত অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, বাবলুর ছেলের মোবাইলে ‘জিতবে এবার নৌকা’ গান শুনতে পেয়ে অভিযুক্তরা আরও ক্ষিপ্ত হয়ে বাড়ির গেট ভেঙে প্রবেশ করে তাদের রান্না করা খাবার লাথি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়।অভিযুক্ত লিটন নৌকা প্রতীকের পক্ষে কোনো গান না বাজানোসহ প্রচারে অংশ না নিতে হুমকি দেন। অন্যথায় তিনিও মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করার হুমকি দেন।
লিখিত অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রয়াত বীর মুক্তিযোদ্ধার ৬৫ বছর বয়সী স্ত্রী বেবি বেওয়া বলেন, ‘লিটন নেশা করে এসে আমাকে গালিগালাজ, মারধর করেছে।আমাদেরকে রাব্বীর বেটির (বুবলী) মিটিংয়ে ডাকে।যাই না জন্য এই বয়সে মুক্তিযোদ্ধার স্ত্রী হয়েই মার খেতে হচ্ছে। ভাতা বন্ধ করে দিলে কী খাব? আমি এর বিচার চাই।’
অভিযোগকারী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান বাবলু মিয়া বলেন,‘আমরা মুক্তিযোদ্ধার পরিবার।সবসময়ই নৌকায় ভোট দিয়েছি।আমরা নৌকার খাই,কিন্তু তারা (অভিযুক্তরা) স্বতন্ত্র প্রার্থীর মিটিংয়ে আমাদের ডাকে। নৌকায় ভোট দিলে সেলিম পারভেজ মুক্তিযোদ্ধা ভাতা বন্ধ করে দিতে চেয়েছে।
‘এখানে শুধু আমার বাড়িতে নৌকার পোস্টার টানানো আছে।বাড়িতে এসে লিটন নৌকার পোস্টার আগুনে পুড়িয়েছে।লিটন,বাবুসহ অন্যরাও আমাদের মারধর করেছে এবং লিটনও ভাতা বন্ধ করবে বলে হুমকি দিয়েছে।’
এসব বিষয়ে অভিযুক্ত উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি জি এম সেলিম পারভেজের সঙ্গে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরটি বন্ধ পাওয়া যায়।