আন্তর্জাতিক

ভারত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত অনেক দেশের সাথে লেনদেন অব্যাহত রেখেছে-মস্কো

  প্রতিনিধি ৯ অক্টোবর ২০২৩ , ২:২৪:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।পশ্চিমা দেশগুলো আশা করেছিল অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা রাশিয়াকে যুদ্ধ প্রলম্বিত করা থেকে বিরত রাখবে।এছাড়া এর প্রভাবে রুশ অর্থনীতি সঙ্কুচিত হবে। মাইক্রোচিপের মতো বর্তমানে অত্যন্ত প্রয়োজনীয় প্রযুক্তিগুলোর নাগাল পাওয়া কঠিন হবে।বাস্তবে সেরকম কিছু হয়নি। রাশিয়া এখনো যুদ্ধ চালিয়ে যাচ্ছে।কবে শেষ হবে অনুমান করতে পারছেনা পশ্চিমারা।বরং তাদের নিরাশ করে বিভিন্ন দেশের সঙ্গে বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছে।ভারত থেকে দক্ষিণ আফ্রিকা পর্যন্ত অনেক দেশের সাথে লেনদেন অব্যাহত রেখেছে মস্কো।

রাশিয়ার ব্যবসা বাণিজ্য যুদ্ধ পূর্ববর্তী সময়ের মতো না হলেও একেবারে মুখ থুবড়ে পড়েনি। পশ্চিমাদের পাশ কাটিয়ে বিকল্প সাপ্লাই গড়ে তুলছে।রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন তো এখন স্পষ্ট ভাষায় ‘ডিডলারাইজেশন’ বা ডলার বাদ দিয়ে বাণিজ্য করার কথা বলছেন।আগস্টে জোহানেসবার্গে অনুষ্ঠিত ব্রিকস সম্মেলনে তিনি এ দাবি তুলেছেন।সম্মেলনে তিনি অবশ্য যোগ দেননি।তবে ভিডিও যোগাযোগ ব্যবস্থায় ডলারবিহীন নতুন অর্থ ও বাণিজ্য ব্যবস্থা গড়ে তোলার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেছেন।তিনি দেখিয়েছেন,নিষেধাজ্ঞা দিয়ে তার দেশকে বশ করার আশা যারা করেছিল তাদের সে আশায় এখন গুড়ে বালি।রুশ ও মার্কিন বলয়ের বাইওে থাকা বহু দেশ লক্ষ্য করেছে যে রাশিয়া ইউক্রেনের দিকে সবার মনোযোগ আটকে দিয়ে অগ্রাধিকার ঠিক করতে দ্বিধায় ফেলেছে যুক্তরাষ্ট্র ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের।উত্তর কোরিয়া ও চীনের কথা বাদ দিয়েও বলা যায় ব্রাজিল,সিরিয়া,বেলারুশ,ভেনেজুয়েলা ও জিম্বাবুয়ে এখন রাশিয়ার সুরে তাল মিলিয়ে পশ্চিমাদের সমালোচনা করছে।

এই যুদ্ধ কেন্দ্র করে রাশিয়া ইউরোপকে জ্বালানি সঙ্গটে ফেলার পাশাপাশি পরিকল্পিতভাবে পরমাণু ভীতি সঞ্চার করেছে।এই হুমকি কতটা বাস্তবসসম্মত তা নিয়ে প্রশ্ন তোলা যেতে পারে।কিন্তু মস্কো পশ্চিমকে এই বার্তা ভালো করেই দিয়েছে যে তার দাবিগুলো অগ্রাহ্য করা যাবে না।পরমাণু অস্ত্র ও নিরস্ত্রীকরণের বিষয়টি বৈশ্বিক ইস্যু। প্রাচ্য ও পাশ্চাত্যসহ সবদেশ এ ব্যাপারে সহযোগিতা না করলে এই ইস্যুতে অগ্রগতি আশা করা যায় না।রাশিয়া ইতোমধ্যেই পরমাণু নিরস্ত্রীকরণ পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা পুরোপুরি বন্ধ করে দিয়েছে।পরমাণু ইস্যু নয় শুধু যেকোন যৌথ ইস্যুতেই পশ্চিমা দেশগুলোর সাথে সহযোগিতা স্থগিত রেখেছে মস্কো।

ইউক্রেন থেকে বিশ্ববাজারে গম ও অন্যান্য খাদ্যশস্যের একটি নিয়মিত চালান যেত।খাদ্য শস্যবাহী ইউক্রেনের জাহাজ যেন কৃষ্ণ সাগরে রাশিয়ার বাধার মুখে না পড়ে সেই লক্ষ্যে গত বছর ইস্তানবুলে জাতিসংঘের মধ্যস্থতায় একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি হয়েছিল যা ব্ল্যাক সি গ্রেইন ইনিশিয়েটিভ নামে পরিচিত। তুরস্ক,রাশিয়া ও ইউক্রেন এই তিন পক্ষ এতে সই করে। চুক্তিটি গুমাধ্যমে গ্রেইন ডিল নামে পরিচিতি পায়।গত বছর ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ইউক্রেনে যুদ্ধ শুরুর পর কৃষ্ণ সাগর দিয়ে খাদ্য শস্যবাহী ইউক্রেনের জাহাজ চলাচল বন্ধ হয়ে গিয়েছিল।এর ফলে অনেক দেশে খাদ্য সঙ্কট এবং কোথাও কোথাও দুর্ভিক্ষের মতো পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল।

চুক্তির প্রাথমিক মেয়াদ ধরা হয়েছিল ১২০ দিন,পরে এটি কয়েক দফা বাড়িয়ে এ বছর জুলাই পর্যন্ত এর কার্যকারিতা অব্যাহত থাকে। ১৭ জুলাই মস্কো ঘোষণা দেয় তারা আর এই চুক্তি নবায়ন করবে না।কৃষ্ণ সাগরের বাইরেও রাশিয়া রুমানিয়ার কাছে ইউক্রেনের শস্য টার্মিনালে হামলা করেছে। রাশিয়া আবারও প্রমাণ করেছে যে প্রচলিত আন্তর্জাতিক রীতি মানতে তারা বাধ্য নয়।রাশিয়াকে পাশ কাটিয়ে আন্তর্জাতিক খাদ্য সরবরাহ রুট চালু রাখা যাবে না।

চলতি বছর জুলাইয়ের শেষের দিকে রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত রুশ-আফ্রিকা শীর্ষ বৈঠক।পুতিন এতে আফ্রিকার ছয়টি দেশকে বিনামুল্যে খাদ্যশস্য দেয়ার কথা বলেন।এয়াড়াও তিনি ২৩ বিলিয়ন আফ্রিকান ঋণ মওকুফের কথা ঘোষণা করেন।আফ্রিকার অনেক দরিদ্র দেশ খাদ্য ও অন্যান্য সহায়তার জন্য পশ্চিমা দেশগুলোর ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল।এই দেশগুলোকে রুশমুখী অথবা নিরপেক্ষ অবস্থানে আনার জন্য তিনি এসব প্রস্তাব দেন।

খাদ্য শস্যবাহী জাহাজের নির্বিঘ্ন চলাচল নিশ্চিত করা এত গুরুত্বপূর্ণ যে এটা বিশ্ববাজারে খাদ্যপণ্যের দামই শুধু নিয়ন্ত্রণ করে না এর রাজনৈতিক গুরুত্বও আছে।খাদ্যের মূল্যস্ফীতি সরকারের আর্থিক ব্যয় বাড়িয়ে দেয়।বাজার স্থিতিশীল না থাকলে সেটা গণতান্ত্রিক সরকারগুলোর মাথাব্যাথার কারণ হতে পারে।এতে সরকারের জনপ্রিয়তা কমে,বিরোধী দলগুলোর প্রতি সমর্থন বাড়ে।অনেক দেশে পপুলিস্টদের উত্থান ঘটে। ইউরোপে উগ্র ডানপন্থীদেরও পালে হাওয়া লাগে।বলা যায়, এই যুদ্ধ বিভিন্ন দেশে রাজনীতির দৃশ্যপটও বদলে দিতে পারে।পুতিন কোন একটি অঞ্চলে সংঘাত জিইয়ে রেখে পরিস্থিতি অস্থিতিশীল করতে চান এরকম মনে করা ঠিক হবে না।তিনি চান বৈশ্বিক ইস্যুতে রাশিয়ার মত যেন গণ্য করা হয়।

আরও খবর

Sponsered content