অপরাধ-আইন-আদালত

২৩ দিন থানায় ঘোরার পর ধর্ষণের শিকার নারীর মামলা নিলো পুলিশ

  প্রতিনিধি ২৯ ডিসেম্বর ২০২২ , ৩:৩৬:০৬ প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশাল জেলা প্রতিনিধি।।ধর্ষণের শিকার নারী থানায় লিখিত অভিযোগ দিলেও ২৩ দিন আমলে নেয়নি বরিশাল মেট্রোপলিটন কোতোয়ালি মডেল থানার পুলিশ।এমনকী বিভিন্ন অজুহাতে ওই ধর্ষিত নারীকে বিভ্রান্ত করেছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

যদিও গণমাধ্যমকর্মীরা থানার দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনারের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তাৎক্ষণিক আইনি প্রক্রিয়া শুরু করেন।এঘটনায় অভিযুক্ত ধর্ষককে গ্রেপ্তার করেছে বলে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আজিমুল করিম নিশ্চিত করেছেন।

জানা গেছে,ধর্ষণের শিকার নারী খুলনা বসবাস করলে তার বাড়ি পিরোজপুর জেলায়।তিনি জানান,বেনাপোল থেকে কাপড় এনে বিভিন্ন এলাকায় পাইকারি বিক্রি করতেন।ব্যবসার তাগিদে বেনাপোলে পরিচয় হয় ঝালকাঠীর নলছিটি উপজেলার মগর ইউনিয়নের কাঠিপাড়া এলাকার আব্দুল মালেকের সঙ্গে।

পরিচয়ের সূত্র ধরে ওই নারীর কাছ থেকে বাকিতে ২ লাখ ৪০ হাজার টাকার মালামাল নেন মালেক।এক বছর হয়ে গেলেও সেই টাকা মালেক পরিশোধ করছিলেন না।পরবর্তীতে মালেক অসহায়ত্ব প্রকাশ করে ওই নারীকে আরও এক লাখ ২০ হাজার টাকা ধার দেওয়ার জন্য অনুরোধ করেন।

পাশাপাশি আশ্বাস দেন,১ লাখ ২০ হাজার টাকায় নতুন করে ব্যবসা শুরু করে প্রতিমাসে ২৫ হাজার টাকা পরিশোধের মাধ্যমে ৩ লাখ ৬০ হাজার টাকা ফিরিয়ে দেবেন।সেই টাকা নেওয়ার পরও টাকা পরিশোধ করছিলেন না।

নভেম্বর মাসে মুঠোফোনে বরিশাল আসতে ওই নারীকে প্রলুব্ধ করেন মালেক।আশ্বস্ত করেন,বরিশালে আসলে একসঙ্গে পুরো টাকা দিয়ে দেবেন।১৮ নভেম্বর ৯ বছরের ছেলেসহ ওই নারী বরিশাল আসলে মালেকের সহযোগী একই ইউনিয়নের হারুন ফকিরের ছেলে জসিম ফকির রাজিব তাকে বরিশাল নগরীর রুপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে রিসিভ করে নগরীর ১১নং ওয়ার্ডের চাঁদমারি ইসলামি ব্যাংক হাসপাতালের সামনের হোটেল সিটি প্যালেসে নিয়ে যায়।সেখানে ওই নারীর ৯ বছরের ছেলেকে ৩ নম্বর কক্ষে আটকে রেখে নারীকে ২ নম্বর কক্ষে নিয়ে ধর্ষণ করে।

এরপর রাজিব তাকে পাওনাদার মালেকের কাছে রাত ১১টার দিকে নিয়ে গেলে আব্দুল মালেক এবং জালাল হাওলাদার নামের অপর একজন মিলে একটি দোকানের মধ্যে টেনে নিয়ে ওই নারীকে ধর্ষণের চেষ্টা করে।এসময় তার ৯ বছরের ছেলের চিৎকারে চারপাশের লোক এগিয়ে আসলে দ্বিতীয় দফায় ধর্ষণ থেকে রক্ষা পান তিনি।

এ ঘটনায় ৫ ডিসেম্বর কোতোয়ালি মডেল থানায় লিখিত অভিযোগ করেন ধর্ষণের শিকার নারী।কিন্তু সেই অভিযোগ আমলে নেননি থানা পুলিশ।ওই নারী জানিয়েছেন,অভিযোগ দেওয়ার পরে প্রতিদিন তিনি থানায় এসে বসে থাকতেন।কিন্তু তার কোনো অভিযোগ গ্রহণ করা হয়নি।

তবে বুধবার রাতে থানার বাইরে নারীকে কাঁদতে দেখে প্রতিবেদকসহ কয়েকজন গণমাধ্যমকর্মী কারণ জানতে চান। বিষয়টি জেনে ঘটনাটির দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয় থানা পুলিশের দায়িত্বপ্রাপ্ত অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার ফজলুল করিমের। তিনি ধর্ষণের শিকার নারীর কাছ থেকে অভিযোগ শুনে বুধবার রাতেই অভিযোগ মামলা হিসেবে গ্রহণ করেন।

অভিযান চালিয়ে ওই রাতেই অভিযুক্ত ধর্ষক জসিম ফকির রাজিবকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।তবে মূল আসামি আব্দুল মালেক ও তার আরেক সহযোগী জালাল হাওলাদার পালাতক রয়েছে।

অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার মো. ফজলুল করিম বলেন, এজাহারে অভিযুক্ত আসামিদের গ্রেপ্তারে অভিযান চলছে। আশা করছি দ্রুত সময়ের মধ্যে অপরাধীদের গ্রেপ্তার করা সম্ভব হবে।এই কর্মকর্তা বলেন,অভিযোগ গ্রহণ করার বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।এখানে কোনো পুলিশ সদস্যের বিরুদ্ধে দায়িত্ব অবহেলার প্রমাণ পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে বিধি মোতাবেক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

আরও খবর

Sponsered content