জাতীয়

ভারত,চীন ও জাপানের পর নতুন একটি দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছে বাংলাদেশ

  প্রতিনিধি ৩১ মে ২০২৩ , ৫:৩৩:১৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।মধ্যম শক্তির দেশ তুরস্কের সঙ্গে স্ট্র্যাটেজিক (কৌশলগত) অংশীদারিত্ব করতে আগ্রহী বাংলাদেশ। ষদেশটির সদ্য নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোগানকে এক অভিনন্দন বার্তায় এমন আগ্রহ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার (২৯ মে) লেখা ওই বার্তায় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন— ‘আমি আত্মবিশ্বাসি,তুরস্কে আপনার নেতৃত্বে আমাদের দৃঢ় দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক শুধু নতুন উচ্চতায় পৌঁছাবে না,বরং স্ট্র্যাটেজিক অংশদারিত্ব পর্যায়ে উন্নীত হবে।’ বিশেষজ্ঞরা বলছেন,এর ফলে ভারত,চীন ও জাপানের পর নতুন একটি দেশের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপনে আগ্রহী হচ্ছে বাংলাদেশ।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. শহীদুল হক বলেন, ‘এটি বাংলাদেশের জন্য একটি যুক্তিসঙ্গত ও উৎসাহব্যঞ্জক পদক্ষেপ।আমরা এশিয়ার তিনটি বৃহৎ দেশের সঙ্গে এরইমধ্যে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করে ফেলেছি।এখন অন্য শক্তিশালী দেশগুলোর সঙ্গেও আমাদের সম্পর্ক গভীর ও বৃদ্ধি করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘এর মাধ্যমে তুরস্কের সঙ্গে বিভিন্ন খাতে সহযোগিতার নতুন দ্বার উন্মোচিত হবে। এটি আশা করা যায়— বাণিজ্য, প্রতিরক্ষা, উন্নয়নসহ বিভিন্ন খাতে সহযোগিতা বৃদ্ধি পাবে।’

অতীত ও বর্তমান সম্পর্ক:-

২০০৮ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতাগ্রহণের পরে যুদ্ধাপরাধীরদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করে। তখন এর বিরোধিতা করেছিল তুরস্ক।২০১২ সালে দেশটির তৎকালীন প্রেসিডেন্ট আবদুল্লাহ গুল এক চিঠিতে জামায়াত নেতা গোলাম আজমসহ সবাইকে ক্ষমা করার জন্য বাংলাদেশকে আহ্বান জানান।এরপর ২০১৬ সালে আরেক জামায়াত নেতা মতিউর রহমান নিজামীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হলে ওই সময়ের প্রেসিডেন্ট এরদোগান প্রকাশ্যে এর নিন্দা জানান এবং ঢাকায় তুরস্কের রাষ্ট্রদূতকে ফেরত নিয়ে যাওয়া হয়।

অস্বস্তিকর এই সম্পর্ক পুরোপুরি ইতিবাচক মোড় নেয় ২০১৬ সালের জুলাইতে,যখন তুরস্কে এক সামরিক অভ্যুত্থানের চেষ্টা করা হয় এবং বাংলাদেশ সর্বপ্রথম দেশ হিসেবে এরদোগানের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করে।যেকোনও সামরিক অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে সবসময় অবস্থান নিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।এরপর থেকে দুই দেশের সম্পর্কে নতুন গতি আসে।

বর্তমানে তুরস্ক থেকে বাংলাদেশ বিভিন্ন ধরনের প্রতিরক্ষা সরঞ্জাম ক্রয় করছে।স্টকহোম ইন্টারন্যাশনাল পিস রিসার্চ ইনস্টিটিউটের তথ্যমতে, ২০১৭ থেকে তুরস্কে নির্মিত আর্মার্ড পারসোনেল ক্যারিয়ার ও মাল্টিপল রকেট লঞ্চার কিনে আসছে বাংলাদেশ।

কৌশলগত সম্পর্ক কী’-

সাধারণভাবে ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্ব ও সহযোগিতা থাকলে দুই দেশ একে-অপরের সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক স্থাপন করে থাকে। তবে সাধারণ সম্পর্কের তুলনায় বেশি গভীর কৌশলগত সম্পর্কে সামরিক জোট গঠনের বিষয়টি নাও থাকতে পারে।

কৌশলগত সম্পর্কে চারটি উপাদান বিদ্যমান থাক।সেগুলো হচ্ছে— প্রথমত,কৌশলগত সম্পর্কের মাধ্যমে সহযোগিতা বৃদ্ধির জন্য যে কাঠামো দরকার,সেটির ঘোষণা সরকারের শীর্ষ পর্যায় থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিবৃতির মাধ্যমে করা হয়।

দ্বিতীয়ত,দুই দেশের মধ্যে গভীর সম্পর্ক বিদ্যমান রাখা এবং আরও গভীরতর করার জন্য ক্রমাগত উচ্চ পর্যায়ের রাজনৈতিক সফর হতে হবে।

তৃতীয়ত,কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে রাজনৈতিক,নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা সহযোগিতা জোরদার করার ওপর জোর দেওয়া হয়।

চতুর্থত,অর্থনৈতিক সহযোগিতা আরও গভীর হবে ও ব্যাপ্তি বড় থাকবে।

এছাড়া কৌশলগত সম্পর্কের ক্ষেত্রে পরিবর্তিত পরিস্থিতির সঙ্গে দুই দেশের খাপ খাইয়ে নেওয়ার নমনীয়তা থাকতে হবে। কৌশলগত সম্পর্কের লক্ষ্য হচ্ছে— দুই দেশের মূল জাতীয় স্বার্থ দীর্ঘমেয়াদে যেন একই সুরে বাঁধা থাকে।

ভবিষ্যৎ সহযোগিতা:-

দ্বিপক্ষীয় সম্পর্ক কৌশলগত অংশীদারিত্বে উন্নীত হলে প্রতিরক্ষা খাতে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি করা সম্ভব।

এ বিষয়ে সাবেক পররাষ্ট্র সচিব মো. তৌহিদ হোসেন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘তুরস্কের সঙ্গে বাংলাদেশের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক থাকা দরকার। বাংলাদেশ একটি উদীয়মান দেশ এবং তুরস্ক একটি মধ্যম মানের শক্তি।’

তুরস্কের প্রতিরক্ষা উৎপাদন ব্যবস্থা ন্যাটোর মানসম্পন্ন এবং এক্ষেত্রে সহযোগিতার সুযোগ আছে বলে তিনি মনে করেন।

সাবেক এই পররাষ্ট্র সচিব বলেন,আমরা যৌথ মিলিটারি সরঞ্জাম উৎপাদন করতে পারি,বা তাদের প্রযুক্তি ব্যবহার করে এখানে উৎপাদন করতে পারি। তুরস্কের ড্রোন প্রযুক্তি অত্যন্ত ভালো এবং উদ্যোগ নেওয়া হলে পাঁচ বছরের মধ্যে এখানে উন্নত মানের ড্রোন উৎপাদন সম্ভব।কারণ,এখানকার যুব প্রকৌশলীর সংখ্যা অনেক বেশি।’

আরও খবর

Sponsered content