জাতীয়

অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকির কথা জানিয়ে ১০ বার নোটিস দেওয়া হয়েছিল, ব্যবসায়ীরা পদক্ষেপ নেয়নি-দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী

  প্রতিনিধি ৬ এপ্রিল ২০২৩ , ৫:৫৪:৩৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।টিন আর কাঠের তৈরি জরাজীর্ণ বঙ্গবাজারে অগ্নিঝুঁকির বিষয়ে বার বার সতর্ক করার পরও ব্যবসায়ীরা যে গা করেননি,সে কথা জাতীয় সংসদকে বললেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী মো. এনামুর রহমান।

দেশের বৃহত্তম ওই কাপড়ের মার্কেটে অগ্নিকাণ্ড ও পরবর্তী কার্যক্রম তুলে ধরে তিনি বলেছেন,অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকির কথা জানিয়ে ১০ বার নোটিস দেওয়া হয়েছিল,কিন্তু ব্যবসায়ী সমিতি কোনো পদক্ষেপ নেয়নি।আদালতের স্থগিতাদেশ থাকায় মার্কেটটি ভাঙা বা উচ্ছেদ করে নতুন ভবন করাও সম্ভব হয়নি।

গত ৪ এপ্রিল ভোরে বঙ্গবাজারে আগুন লাগার পর ফায়ার সার্ভিসের ৪৮টি ইউনিটের চেষ্টায় সাড়ে ছয় ঘণ্টা পর আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে।

তবে ততক্ষণে বঙ্গবাজার মার্কেট,মহানগর মার্কেট,আদর্শ মার্কেট ও গুলিস্তান মার্কেট পুরোপুরি ভষ্মীভূত হয়ে যায়। ক্ষতিগ্রস্ত হয় পাশের এনেক্সকো টাওয়ার এবং আরও কিছু ভবন।

ওই মার্কেটগুলো মিলিয়ে ৫ হাজারের মতো দোকান ছিল; তার অধিকাংশই পুড়ে গেছে।ঈদের আগে সব দোকানেই লাখ লাখ টাকার পোশাক তোলা হয়েছিল,সব পুড়ে যাওয়ায় পথে বসার উপক্রম হয়েছে হাজার পাঁচেক ব্যবসায়ীর।

বৃহস্পতিবার সংসদে ৩০০ বিধিতে এ বিষয়ে বিবৃতিতে দেন প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান।বঙ্গবাজারের ইতিহাস তুলে ধরে তিনি বলেন,১৯৮৫ সালে বাংলাদেশ রেলওয়ের কাছ থেকে প্রায় ১.৬৯৭ একর জমি পায় ঢাকা সিটি কর্পোরেশন।সেখানেই গড়ে ওঠে বঙ্গবাজার।

১৯৯৫ সালে মার্কেট সমিতি নিজ খরচে ৩ তলা বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটটি নির্মাণ করেন।বর্তমান সরকারের আমলে ২০১৬ সালে সেখানে বহুতল ভবন নির্মাণের জন্য পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নিয়োগ দেওয়া হয়।

মোট ১৪১টি গাড়ি পার্কিং ও ৪৪১৩ টি দোকান ঘরের সংস্থান রেখে প্রতি ফ্লোর ৬৭৩৩২.৫৩ বর্গফুট ধরে ১০ তলা স্টিল স্ট্রাকচার বহুতল ভবন নির্মাণের অনুমোদন দেওয়া হয় এরপর।ইজিপি প্রক্রিয়ায় সর্বনিম্ন দরদাতাকে ২০১৯ সালের জুন থেকে কাজ শুরুর জন্য কার্যাদেশ দেওয়া হয়।

সেই লক্ষ্যে ২০১৯ সালে বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতিকে ৩০ দিনের মধ্যে মার্কেটটি খালি করে দিতে চিঠি দেওয়া হয়।

এরপর উচ্ছেদে নিষেধাজ্ঞা চেয়ে মার্কেটের ব্যবসায়ীরা তিনটি মামলা করেন হাইকোর্টে।সেই প্রেক্ষাপটে ওই চিঠির কার্যকারিতা স্থগিত করে দেয় হাইকোর্ট।এখন পর্যন্ত সেই স্থগিতাদেশ বহাল রয়েছে।

বিবৃতিতে প্রতিমন্ত্রী বলেন,বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেট দীর্ঘদিনের পুরনো।টিন ও কাঠের তৈরি জরাজীর্ণ ওই মার্কেট ব্যবহারের অনুপযোগী এবং ঝুকিপূর্ণ।সেখানে যে কোনো সময় অগ্নিকাণ্ড ঘটতে পারে জানিয়ে ২০১৬ সালের নভেম্বর থেকে বিভিন্ন সময়ে মার্কেট সমিতিকে মোট ছয় বার চিঠি দিয়ে মার্কেট খালি করার জন্য অনুরোধ করা হয়েছিল।

কিন্তু মার্কেটের ব্যবসায়ীরা দোকান খালি না করে সিটি কর্পোরেশনকে বিবাদী করে মামলা দায়ের করেন।

“এ মামলাগুলোর ফলে স্থগিতাদেশ বহাল থাকার কারণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের পক্ষে এ মার্কেট ভাঙা বা উচ্ছেদ করা সম্ভব হয়নি,” বলেন প্রতিমন্ত্রী।

তিনি জানান,ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তর ২০১৯ সালের এপ্রিলে ‘ঝুকিপূর্ণ’ ঘোষণা করে মার্কেটে সতর্কতামূলক ব্যানার ঝুলিয়ে দেয়।

“অগ্নি নিরাপত্তা সম্পর্কে বার বার নোটিস প্রদান করে তাদের সাথে বৈঠক করে ঝুঁকির বিষয়টি পূর্বে অবহিত করা হলেও তারা (ব্যবসায়ী সমিতি) এই বিষয়টি নিয়ে কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করেনি। “

প্রতিমন্ত্রী বলেন,ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরে ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে বহুবার বৈঠক করা হয়েছে।মার্কেটে গিয়ে ব্যবসায়ী সমিতির অফিসে মতবিনিময় করে অগ্নি নিরাপত্তা বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য অুনুরোধ করা হয়েছে।মোট ১০ বার তাদের নোটিস দেওয়া হয়েছে,লাভ হয়নি।

প্রতিমন্ত্রী বঙ্গবাজারে অগ্নিকাণ্ডের পর দায়িত্বশীল সংস্থাগুলোর কাজের সার্বিক বিষয় এবং সরকারের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা বিবৃতিতে তুলে ধরেন।

তিনি জানান,সরকারি,বেসরকারি প্রতিষ্ঠান এনজিও,স্থানীয় জনপ্রতিনিধি,বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ ও এর অঙ্গ ও সহযোগী সংগঠনসহ বিভিন্ন ব্যক্তি ও সামাজিক প্রতিষ্ঠান এ সময়ে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিয়ে কাধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করেছে।

“ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের তাৎক্ষণিক পদক্ষেপ গ্রহণ এবং প্রধানমন্ত্রীর সার্বক্ষণিক দিক নির্দেশনায় সকলের প্রচেষ্টায় আরও ভয়াবহতা থেকে সকলে রক্ষা পেয়েছে। উৎসুক জনতার ভিড়,পানির অপর্যাপ্ততা,অধিক বাতাস/ তৈরি পোশাক/মালামাল গাদাগাদি করে স্টোর করা,কাপড়ের গোডাউন,পলিথিন সামগ্রী,টিন ও কাঠের সহজ দাহ্যদ্বারা তৈরি তিন তলা মার্কেট,কাঠের পাটাতন ইত্যাদি কারণে আগুন নির্বাপনে সময় বেশি লাগলেও সর্বাত্মক আন্তরিকতায় অগ্নিকাণ্ড নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।”

প্রতিমন্ত্রী জানান,ভয়াবহ এ অগ্নিকাণ্ডের কারণ জানতে তিনটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন,ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স এবং বাংলাদেশ পুলিশ আলাদাভাবে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ,ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা ও অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে এই কমিটি গঠন করেছে।

“কমিটিগুলোর প্রতিবেদন পাওয়া গেলে প্রকৃত সত্য উদ্ঘাঠিত হবে বলে আমি বিশ্বাস করি।তদন্ত কমিটির অনুসন্ধান ও সুপারিশের ভিত্তিতে পরিকল্পিত উপায়ে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হলে ভবিষ্যতে এ ধরনের ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ড প্রতিরোধ সম্ভব হবে।”

আরও খবর

Sponsered content