সারাদেশ

ভবন নির্মাণে আগের চেয়ে খানিকটা সুবিধা পাবেন নাগরিকরা

  প্রতিনিধি ২৪ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৪:৫০:১৬ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বেশ কিছু ক্ষেত্রে শর্ত শিথিল করে রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (রাজউক) প্রণীত বিশদ অঞ্চল পরিকল্পনা (ড্যাপ) সংশোধন করা হয়েছে।এক্ষেত্রে ভবন নির্মাণে আগের চেয়ে খানিকটা সুবিধা পাবেন নাগরিকরা। সংশোধিত ড্যাপে সরকারি-বেসরকারি আবাসন,অপরিকল্পিত এলাকা, ব্লক-ভিত্তিক আবাসন,একত্রীভূত প্লটের মালিকদের কিছুটা ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার) সুবিধা বাড়ানো হয়েছে। এতে আগের চেয়ে ভবনের প্রশস্ততা ও উচ্চতা বাড়ানোর সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।পাশাপাশি সামনের রাস্তার প্রশস্ততার ক্ষেত্রেও ছাড় দেওয়া হয়েছে।

রবিবার (২৪ সেপ্টেম্বর) সরকারি গেজেট প্রজ্ঞাপন দিয়ে ড্যাপের সংশোধনীগুলো উন্মুক্ত করা হয়েছে।এর আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ অধিবেশনে যোগদানে ‍যুক্তরাষ্ট্র যাওয়ার আগে ড্যাপের সংশোধনীগুলোর সারসংক্ষেপ অনুমোদন দেন।

রাজউক সূত্রে জানা গেছে, গত বছর প্রকাশ করা ড্যাপের নতুন গেজেট (২০২২-২০৩৫) অনুযায়ী ভবন নির্মাণে ফার, রাস্তার প্রশস্ততা, ভবনের উচ্চতাসহ নানা বিষয়ে কড়াকড়ি শর্ত থাকায় রাজধানীতে ভবন নির্মাণে ধস নামে।ওই গেজেট প্রকাশিত হওয়ার পর অন্যান্য সময়ের তুলনায় রাজউক থেকে ভবনের নকশা অনুমোদনের হার অর্ধেক নেমে আসে। এদিকে গত বছর ড্যাব সংশোধনের বিভিন্ন ডেভেলপার প্রতিষ্ঠানগুলো ড্যাবের শর্তগুলো শিথিল করার দাবি জানিয়ে আসছিল।এসব বিবেচনায় ড্যাপের শর্তগুলো জনবান্ধব করাসহ বেশকিছু বিষয় সংশোধন করে নতুন গেজেট প্রকাশিত হলো।

এতে ভূমি ব্যবহার পরিবর্তনের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে মাস্টার প্ল্যান/Master Plan (নতুন)-এ যা থাকুক না কেন ২২ জুন, ২০১০ জারিকৃত প্রজ্ঞাপন মূলে রাজউক এখতিয়ারধীন ১৫২৮ বর্গকিলোমিটার (৫৯০ বর্গমাইল) এলাকার যে সব ভূমি ব্যবহার আরবান রেসিডেনসিয়াল জোন/ আবাসিক এলাকা হিসেবে রূপান্তর করা হয়েছে তা অপরিবর্তিত থাকবে।

সংশোধনীতে বিচ্ছিন্নভাবে ও অপরিকল্পিতভাবে গড়ে ওঠা (যেমন: বাড্ডা, ডেমরা, খিলক্ষেত, উত্তরখান, দক্ষিণখান, রায়েরবাজার, সাভার, কেরানীগঞ্জসহ অন্যান্য এলাকা) ব্যক্তিমালিকানাধীন জমির সামনে ন্যূনতম ৩.৬৬ মিটার (১২ ফুট) প্রশস্ত রাস্তা রয়েছে সে সব ক্ষেত্রে এলাকাভিত্তিক ফ্লোর এরিয়া রেশিও (ফার)/FAR ২.০০ প্রযোজ্য হবে এবং ভিত্তি FAR ২.০০ বা ২.০০ এর কম, সে সব ক্ষেত্রে আবেদনকারীকে ০.৫ FAR প্রণোদনা প্রযোজ্য হবে। আগে এসব এলাকায় FAR এর মান ১.৫ ছিল। এছাড়া প্লট সংলগ্ন বিদ্যমান রাস্তার প্রশস্ত ৪.৮ মিটার (প্রায় ১৬ ফুট) হলে FAR মান ২.০ বিবেচনা করা হতো।

আগে নির্ধারিত সংখ্যক A3 আবাসিক ইউনিট তৈরির পরও মেঝের ক্ষেত্রফল সম্পূর্ণরূপে ব্যবহার করতে না পারলে সর্বোচ্চ ১৫ শতাং বেশি ইউনিট নির্মাণ করার সুযোগ ছিল। সংশোধনে সেটা বাড়িয়ে ৩০ শতাংশ বেশি ইউনিট নির্মাণ করার সুযোগ করে দেওয়া হয়েছে।

নূতন নির্দেশনায় অনুমোদিত আবাসন প্রকল্পের মধ্যে একাধিক জনঘনত্ব ব্লক থাকলে,অধিকাংশ প্লট যে সব জনঘনত্ব ব্লকে অবস্থিত তার মধ্যে যে জনঘনত্ব ব্লকের এলাকাভিত্তিক ফার ও কাঠাপ্রতি ডোয়েলিং ইউনিট সংখ্যা সর্বোচ্চ,তা ওই আবাসন প্রকল্পের সব আবাসিক প্লটের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য হবে বলে বিধান করা হয়েছে।

নির্দেশনা অনুযায়ী,আগামী তিন বছরের জন্য সরকারি আবাসন প্রকল্প এবং রাজউক অনুমোদিত বেসরকারি আবাসন প্রকল্পে ভবন নির্মাণে আগ্রহী আবেদনকারীদের নাগরিক সুবিধা (স্কুল, খেলার মাঠ,মসজিদ ইত্যাদি) প্রদানের জন্য নির্ধারিত স্থান সংরক্ষণের কারণে অতিরিক্ত শূন্য দশমিক ৫ ফার প্রণোদনা হিসেবে পাবেন।

২০২২ সালের ড্যাপ (২০২২-২০৩৫) গেজেট আকারে প্রকাশের আগে জমির মালিক ও ডেভেলপারের মধ্যে রেজিস্টার্ড চুক্তিপত্র হয়ে থাকলে তা ড্যাপ (২০১০- ২০২২) এবং ঢাকা মহানগর ইমারত বিধিমালা, ২০০৮ অনুযায়ী প্রযোজ্য হবে বলে সংশোধনে বলা হয়েছে।

একত্রীকৃত নতুন প্লটের জন্য ভিত্তি ফার এর মান একত্রীকরণের আগে প্লটসমূহের জন্য সাধারণভাবে নির্ধারিত মানের চেয়ে একত্রীকৃত অথবা একক আয়তনের ৬ কাঠা বা এর চেয়ে বেশি ১০ কাঠার কম আয়তনের প্লটের ক্ষেত্রে শূন্য দশমিক ২৫ ফার প্রণোদনা প্রাপ্য হবে।একত্রীকৃত অথবা একক আয়তনের ১০ কাঠা বা বেশি হলে শূন্য দশমিক ৫০ ফার প্রণোদনা পাবে।

আগের শর্তানুযায়ী ক্ষুদ্র আকৃতির প্লটের সমন্বয়ে সৃষ্ট ব্লক ডেভেলপমেন্টের ক্ষেত্রে জমির পরিমাণের ভিত্তিতে ৩০ থেকে ৫০ শতাংশ উন্মুক্ত স্থান রাখার কথা বলা হলেও সংশোধনী ব্লকভিত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে যেকোনও আয়তনের ব্লকের জমির ৪০ শতাংশ অংশ উন্মুক্ত স্থান (পার্ক/খেলার মাঠ/গ্রিন স্পেস) হিসেবে সংরক্ষণ করার কথা বলা হয়েছে।

ওই সংরক্ষিত জমির অংশে সেটব্যাক অন্তর্ভুক্ত করা যাবে না এবং সংরক্ষিত জমির কমপক্ষে ৫০ শতাংশ অংশ একত্রে সংস্থান করতে হবে। এছাড়া ব্লকের মোট আয়তনের ৮০ শতাংশ জমির ওপর সর্বোচ্চ ভূমি আচ্ছাদন বা Maximum Ground Coverage (MGC) হিসাব করতে হবে। উদাহরণস্বরূপ, ব্লকের জমির পরিমাণ ২০ কাঠা হলে আলোচ্য প্রস্তাবনা অনুযায়ী ৮ কাঠা (৪০ শতাং) জমি উন্মুক্ত স্থান হিসেবে সংরক্ষিত রাখতে হবে। এছাড়া মোট জমির ৮০ শতাংশ অর্থাৎ ১৬ কাঠার ওপর বিধিমালা অনুসারে সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ ভূমি আচ্ছাদন প্রযোজ্য হবে, অর্থাৎ সর্বোচ্চ ৮ কাঠা জমিতে ভবন নির্মাণ করা যাবে। অবশিষ্ট ৪ কাঠা জমি ভবনের সেটব্যাকসহ অন্যান্য সবুজায়নের জন্য ব্যবহৃত হবে।

ব্লক ভিত্তিক উন্নয়নের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ প্রযোজ্য ফার (Maximum FAR) কে অনুমোদনযোগ্য ফার হিসেবে গণ্য করতে হবে। তবে এক্ষেত্রে প্রযোজ্য সব ফার প্রণোদনার শর্তসমূহ আবশ্যিকভাবে আবেদনকারীকে বাস্তবায়ন করতে হবে।

ড্যাপে প্রস্তাবিত রাস্তা প্রশস্তকরণের জন্য জমির সীমানা বরাবর যে পরিমাণ জমি ছেড়ে দেওয়ার শর্ত আরোপ করা হয়, তা যথাযথভাবে রেজিস্টার্ড ইজমেন্ট দলিল সম্পাদনের মাধ্যমে জমির মালিক নিঃশর্তভাবে স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষকে (যেমন সিটি করপোরেশন, জেলা/ উপজেলা/ইউনিয়ন পরিষদ, পৌরসভা) হস্তান্তর নিশ্চিত করার পর পরিকল্পনা অনুমোদনপত্র বা নির্মাণ অনুমোদনপত্র প্রদানের ব্যবস্থা গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। এজন্য রাজউক অধিভুক্ত এলাকার স্থানীয় সরকার কর্তৃপক্ষসমূহ এবং রাজউকের মধ্যে দ্বি- পাক্ষিক চুক্তি সম্পাদন (এমওইউ) ও এ সংক্রান্ত যৌথ কর্মপন্থা নির্ধারণ করতে হবে বলে গেজেটে বলা হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content