সারাদেশ

বেনজীর আহমেদের বোট ক্লাবের সভাপতি রুবেল আজিজ

  প্রতিনিধি ২৮ জুন ২০২৪ , ৫:০০:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বহুল আলোচিত ঢাকা বোট ক্লাব লিমিটেডের (ডিবিসিএল) সভাপতির পদ পুলিশের সাবেক মহাপরিদর্শক (আইজিপি) বেনজীর আহমেদের।দেশত্যাগের পর ১৩ জুন তিনি লিখিতভাবে সভাপতির দায়িত্ব দেন ক্লাবটির উপদেষ্টা রুবেল আজিজকে।তবে কমিটির নেতাদের একের পর এক বিতর্কিত কর্মকাণ্ডে আগের মতো রমরমা অবস্থা নেই ক্লাবটিতে।অনেক সদস্যই এখন আর সেখানে যান না।

গত মঙ্গলবার সকালে সাভারের বিরুলিয়ায় তুরাগতীরের ওই ক্লাবে গিয়ে দেখা যায়,সেখানকার পরিবেশ অনেকটাই নিরিবিলি।আগের মতো জৌলুশ নেই।প্রধান ফটকে দুজন নিরাপত্তাকর্মী দায়িত্ব পালন করছিলেন।তাঁদের একজনের নাম মো. যোবায়ের।তিনি বলেন,ক্লাবের সদস্য এবং সদস্যদের অতিথি ছাড়া ভেতরে প্রবেশের অনুমতি নেই।তবে আগের মতো ক্লাবে সদস্য এবং তাঁদের পরিবারের সদস্যরা আসেন না।

এই নিরাপত্তাকর্মীর সঙ্গে কথা বলতে বলতে একটু সামনে এগিয়ে দেখা যায়,ক্লাবের সামনের খোলা জায়গায় ছয়টি গাড়ি পার্ক করা আছে।তবে ভেতরে কোনো অতিথি দেখা যায়নি।শুধু চোখে পড়েছে ক্লাবের বিভিন্ন বিভাগের কর্মীদের আসা-যাওয়া।তাঁদের মধ্যে একজন কর্মী বলেন,ক্লাবে সকালে ও দুপুরে সদস্যরা কম আসেন। সন্ধ্যার পর কেউ কেউ আসেন।

ক্লাবটির রেস্টুরেন্টের এক কর্মী জানিয়েছেন,এখন অনেক সদস্য তাঁদের পরিবার নিয়েও আর আসেন না।ক্লাবের রেস্টুরেন্ট,হলরুম,জিমনেসিয়ামসহ বিভিন্ন বিভাগের সার্ভিস কমিয়ে আনা হয়েছে।স্টাফও ছাঁটাই করা হয়েছে।

বোট ক্লাবের একজন সাধারণ সদস্যের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে,তিনি ক্লাবে সদস্য হওয়ার পর দুই-তিনবার গিয়েছিলেন। এর মধ্যে কেবল একবার পরিবার নিয়ে যান।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এই সদস্য বলেন,খাবার অর্ডার দিয়ে বসে থাকতে হয়,টাইমলি কোনো কিছু পাওয়া যায় না। খাবারের মানও খারাপ।অনেক সদস্য সেখানে অনাকাঙ্ক্ষিত গেস্ট পাঠান,যা ক্লাবের পরিবেশ নষ্ট করেছে।তাই পরিবার নিয়ে যাওয়ার অবস্থা সেখানে নেই।

এই সদস্যের মতো আরও দুজন সদস্য ক্লাবের পরিবেশ ও সার্ভিস নিয়ে অভিযোগ করেছেন।তাঁদের মধ্যে একজন ব্যবসায়ী রয়েছেন।তিনি বলেন,ক্লাবটির যে দুর্নাম রয়েছে, তাতে সেখানে পরিবার নেওয়ার আর সাহস পাচ্ছি না।

অভিযোগ রয়েছে,২০২১ সালের ৮ জুন রাতে ঢাকা বোট ক্লাবে গিয়ে হেনস্তার শিকার অভিনেত্রী পরীমণি।এ ঘটনার পরই ক্লাবটি আলোচনায় আসে।তখনও ক্লাবটির সভাপতি ছিলেন তৎকালীন আইজিপি বেনজীর আহমেদ।পরীমণি ক্লাবটির কার্যনির্বাহী কমিটির নির্বাহী সদস্য নাসির উদ্দিন মাহমুদের বিরুদ্ধে হেনস্তার অভিযোগ করেন।এই ঘটনায় নাসির ও পরীমণি একাধিক মামলা করেন। মামলাগুলো বিচারাধীন।

পরীমণি-কাণ্ডের পর চলতি বছরের এপ্রিলে সাবেক আইজিপি বেনজীর আহমেদের বিপুল সম্পদের তথ্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত শুরু হলে ফের আলোচনায় আসে বোট ক্লাব।এক পর্যায়ে বেনজীর গোপনে দেশ ছাড়েন।বিদেশে থাকা অবস্থায় তিনি বোট ক্লাবের সভাপতির পদও ছাড়েন।

বেনজীরের পদত্যাগের বিষয়ে নাসির উদ্দিন মাহমুদ বলেন, তিনি পরিবার নিয়ে দেশের বাইরে থাকায় পদত্যাগ করেছেন। আগামী ২১ সেপ্টেম্বরে ক্লাবটির কার্যনির্বাহী পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সেখানেই এর নেতৃত্ব নির্ধারণ হবে।

ক্লাবটির উপদেষ্টা ও দায়িত্বপ্রাপ্ত ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রুবেল আজিজ বর্তমানে দেশের বাইরে রয়েছেন।এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য পাওয়া যায়নি।তবে ক্লাবের স্পোর্টস মেম্বার ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, ‘ক্লাবের নির্বাহী কমিটি অনেক দিন ধরে কোনো সভা করে না।সদস্যরা নিয়মিত যান না। তাই ক্লাবটি আগের মতো সরগরম নেই।তবে আগামী শুক্রবার আমাদের নির্বাহী কমিটির সভা রয়েছে,এরপর থেকে আমরা আগের মতো পরিবেশ ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করব।’

ঢাকার সাভারে বিরুলিয়ার তুরাগতীরে ২০১৪ সালে বোট ক্লাব প্রতিষ্ঠিত হয়।সাতজন উদ্যোক্তা মিলে ক্লাবটি প্রতিষ্ঠা করেন। তাঁরা হলেন রুবেল আজিজ ও তাঁর ভাই শওকত আজিজ রাসেল,বখতিয়ার আহমেদ,শাহেদুল ইসলাম,জহির আহমেদ, আলাউদ্দিন আহমেদ চৌধুরী ও নাসির উদ্দিন আহমেদ। ক্লাবটির সদস্য হতে ১০ থেকে ২০ লাখ টাকা দিতে হয়। বর্তমানে এই ক্লাবের মোট সদস্যসংখ্যা প্রায় তিন হাজার।

ক্লাবটিতে রয়েছে ১১ সদস্যের কার্যনির্বাহী কমিটি।প্রতিষ্ঠার পর এক বছর কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন সিটি গ্রুপের পরিচালক রুবেল আজিজ।পরে বেনজীর আহমেদ সভাপতির দায়িত্ব পান।

বেনজীর ও তাঁর স্ত্রীর সম্পত্তি দেখভালে রিসিভার
বেনজীর আহমেদ ও তাঁর স্ত্রী জিসান মির্জার নামে থাকা আরও ছয়টি ফ্ল্যাট,পাঁচটি প্লট,দুটি অফিস স্পেস ও বান্দরবানে ২৫ একর জমির ব্যবস্থাপনা,তদারিক ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য তত্ত্বাবধায়ক (রিসিভার) নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।গতকাল বৃহস্পতিবার দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকা মহানগর দায়রা জজ ও জ্যেষ্ঠ বিশেষ জজ আদালতের বিচারক মোহাম্মদ আসসামছ জগলুল হোসেন এই আদেশ দেন।

দুদকের বিশেষ পিপি মাহমুদ হোসেন জাহাঙ্গীর এ তথ্য নিশ্চিত করেন।তিনি জানান,বেনজীর আহমেদের দুর্নীতির অভিযোগ অনুসন্ধানের কর্মকর্তা দুদকের উপ-পরিচালক হাফিজুল ইসলাম এই আবেদন করেন।আদালত আবেদন মঞ্জুর করেন। এর আগে এসব সম্পত্তি ক্রোক করা হয়েছিল।

যেসব সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে, সেগুলো হচ্ছে নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ আনন্দ হাউজিং সোসাইটির ৬ কাঠার চারটি প্লট,যার মোট জমির পরিমাণ ২৪ কাঠা এবং এর উপরিস্থিত স্থাপনা যা সাভানা ইকো রিসোর্ট প্রাইভেট লিমিটেডের নামে রেজিস্ট্রি করা।গুলশানে ৩ কাঠা জমির প্লট ও এর উপরিস্থিত স্থাপনা,যা জীসান মীর্জার মালিকানাধীন।বাড্ডায় রূপায়ণ মিলিনিয়াম স্কয়ারে অষ্টমতলায় দুটি অফিস স্পেস ও দুটি কার পার্কিংসহ ১১০.৮০ অযুতাংশ জমি, যা সাউদার্ন বিজনেস ইনিশিয়েটিভের পক্ষে ম্যানেজিং পার্টনার জীসান মীর্জার নামে রেজিস্ট্রি করা।বান্দরবানে ২৫ একর জমি ও এর উপরিস্থিত স্থাপনা এবং আদাবরের পিসি কালসার হাউজিংয়ে ছয়টি ফ্ল্যাট।

এর আগে গুলশানের চারটি ফ্ল্যাট,সাভার,মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জের বিভিন্ন খবর ও স্থাবর সম্পত্তির তত্ত্বাবধায়ক নিয়োগের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content