সারাদেশ

বিশ্ব ইজতেমার মাঠ কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে রোডে-বাসার ছাদে জুম্মার নামাজ আদায়

  প্রতিনিধি ১৩ জানুয়ারি ২০২৩ , ১২:৪৩:৩৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিশ্ব ইজতেমার প্রথম দিনে টঙ্গীর তুরাগ তীরের বিশাল ময়দানে জায়গা না পেয়ে মানুষ আশপাশের মহাসড়ক,অলিগলি,ফুটপাত,বাড়ির ছাদ,বারান্দায়- যে যেখানে পেরেছেন সেখান থেকেই জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন।

শুক্রবার দুপুরে দেশের সর্ববৃহৎ এ জুমায় ইজতেমায় থাকা মানুষ ছাড়াও আশপাশের জেলা-উপজেলা থেকেও লোকজনকে এসে নামাজ আদায় করতে দেখা গেছে।

মুসলিম ধর্মের দ্বিতীয় বৃহৎ এ সম্মিলনে মানুষের সমাগম এত বেশি ছিল যে,বেশ কিছু সময়ের জন্য ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কসহ আশপাশের রাস্তা ধমকে গিয়েছিল;বন্ধ হয়ে ছিল যানচলাচল।যানবাহনে বসেও অনেককে পরম করুণাময়ের দরবারে দু’হাত তুলে শরিক হতে দেখা গেছে।

ইজতেমায় জুমার নামাজে ময়দান ছাপিয়ে সড়ক-ছাদে মানুষ
বিশ্ব ইজতেমার আয়োজক কমিটির সদস্য প্রকৌশলী আব্দুন নূর সাংবাদিকদের বলেন,দুপুর ১টায় জুমার আজানের পর ১টা ৪০ মিনিটে শুরু হয় জুমার খুতবা।এরপর দুপুর ১টা ৪৬ মিনিটে জুমার নামাজ শুরু হয়;শেষ হয় ১টা ৫২ মিনিটে। জুমার নামাজে ইমামতি করেন রাজধানীর কাকরাইল মসজিদের ইমাম ক্কারি মোহাম্মদ জুবায়ের।

সরজমিনে দেখা যায়,এদিন ভোর থেকেই ঢাকার উত্তরা, আশুলিয়া,সাভার,গাজীপুরসহ আশপাশের এলাকা থেকে লোকজন জুমার নামাজে অংশ নিতে ইজতেমা ময়দানে আসতে শুরু করেন।দুপুর ১২টার আগেই ইজতেমা মাঠ ছাপিয়ে আশপাশের এলাকা জনসমুদ্রে পরিণত হয়।

তুরাগ তীরের মূল ময়দানে স্থান না পেয়ে মানুষ মহাসড়ক, অলিগলি যে যেখানে পেরেছেন জায়নামাজ,পুরনো পত্রিকা, হোগলার পাটি,চটের বস্তা বিছিয়ে জুমার নামাজে শরিক হয়েছেন।

একপর্যায়ে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে গেলে দেখা দেয় তীব্র জট।টঙ্গী বাজার থেকে বাটা গেইট,স্টেশন রোড,কামারপাড়া রোড হয়ে টঙ্গীর মিল গেইট পর্যন্ত মানুষ অবস্থান নেন।

এতে ওইসব পথে গাড়ি চলাচল সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে যায়।জুমার নামাজ শেষে মানুষকে এলাকা ছাড়তে তীব্র জটের শিকার হতে হয়। দেড় থেকে দুই ঘণ্টা এই অবস্থা চলে।

ইজতেমায় জুমার নামাজে ময়দান ছাপিয়ে সড়ক-ছাদে মানুষ
গাজীপুর মহানগর পুলিশের কমিশনার মোল্যা নজরুল ইসলাম সাংবাদিকদের বলেন,ইজতেমায় জুমার নামাজ পড়ার জন্য লাখ লাখ ধর্মপ্রাণ মানুষ এসেছেন।তারা মহাসড়কে অবস্থান নিয়েছেন।এজন্য আবদুল্লাহপুর থেকে গাজীপুরমুখী মহাসড়ক যানচলাচল সাময়িক বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।তখন কামারপাড়া রোডও বন্ধ করে দেওয়া হয়।

নামাজ শেষে ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হচ্ছে বলে জানান কমিশনার।

বিপুল মানুষের সমাগমের কারণে অজুর পানির সংকট দেখা দেয়।দুপুরে সেখানে এক বদনা পানির জন্য মানুষকে ২০-৩০ টাকা খরচ করতে হয়েছে।বড় বোতলের পানি বিক্রি হয়েছে ৩৫-৪০ টাকায়।নামাজ পড়ার জন্য পুরানো পত্রিকা বিক্রি হয়েছে ১০-১৫ টাকায়।

টঙ্গী স্টেশন রোড, কামারপাড়া রাস্তার মাথায় শত শত মানুষ নামাজের এসব উপকরণ বিক্রি করছেন।দোকানদারসহ আশপাশের লোকজন এই সুযোগ কাজে লাগিয়েছে।

স্টেশন রোড এলাকার পানি বিক্রেতা আবু তালেব বলেন, “কিছুই করার নেই,সবাই বিক্রি করছে,আমিও করছি।এখন এত মানুষ বিনা পয়সার পানি কোথায় পাবে?”

কামারপাড়া রাস্তায় পুরানো কাগজ বিক্রি করছিলেন জহির উদ্দিন।তিনি বলেন,“আমরাও পেপার ও কাগজ কিনে এনেছি।এখন লাভে বিক্রি করছি।”

শুক্রবার বাদ ফজর তাবলিগ জামাতের শীর্ষস্থানীয় মুরব্বি পাকিস্তানের মাওলানা জিয়াউল হকের আ’ম বয়ানের মধ্য দিয়ে ইজতেমার আনুষ্ঠানিক কার্যক্রম শুরু হয়।পরে বাংলাদেশ ও ভারতের তাবলিগ মারকাজের শুরা সদস্য,ঈমান,আমল ও দাওয়াতের মেহনত সম্পর্কে বয়ান করেন।

ইজতেমায় জুমার নামাজে ময়দান ছাপিয়ে সড়ক-ছাদে মানুষ
মূল বয়ান উর্দুতে হলেও বাংলা,ইংরেজি,আরবি,তামিল, মালয়,তুর্কি ও ফরাসিসহ বিভিন্ন ভাষায় তাৎক্ষণিক অনুবাদ করা হয়।

আয়োজকরা জানান,বিশ্ব ইজতেমার কর্মসূচির মধ্যে আ’ম ও খাস বয়ান,তালিম,তাশকিল,ছয় উসুলের হাকিকত,দরসে কোরআন,দরসে হাদিস,চিল্লায় নাম লেখানোসহ নতুন জামাত তৈরি হবে।

গাজীপুর জেলা প্রশাসক আনিসুর রহমান জানিয়েছে, ইজতেমার সার্বিক নিরাপত্তায় কাজ করছেন ৩০ জন নির্বাহী হাকিম।মানুষের ব্যবহারের জন্য ৩১টি ভবনে রয়েছে আট হাজার ৮৮৪টি শৌচাগার এবং ৫৪৪টি গোসলখানা।

পানি সরবরাহের করা হচ্ছে ১৬টি গভীর নলকূপ থেকে

আরও খবর

Sponsered content