জাতীয়

বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার যা খুশি তাই করতে পারবে!

  প্রতিনিধি ২৯ এপ্রিল ২০২৩ , ৩:৩৮:৫৪ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি আইন বাতিল চায় ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব)।সংগঠনটি বলছে,এটি একটি ‘দায়মুক্তি আইন’।এ আইনের আওতায় বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে সরকার যা খুশি তাই করতে পারবে।দরপত্র ছাড়াই যেকোনো চুক্তি করতে পারবে।সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নিয়ে আদালতেও যাওয়া যাবে না।অপরাধ করলে বিচার করা যাবে না,এটা কোনো সভ্য সমাজে চলতে পারে না।

‘জ্বালানিসংকট ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন’ শীর্ষক এক সেমিনারে আজ শনিবার রাজধানীর সিরডাপ মিলনায়তনে এসব কথা বলেছে ক্যাব।এতে জ্বালানি খাতের সংস্কার প্রস্তাব তুলে ধরে ১৩ দফা দাবি জানানো হয়।এ দাবির শুরুতেই প্রতিযোগিতাহীন যেকোনো আইন নিষিদ্ধ করার কথা বলা হয়। দাবি আদায়ে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার কথা জানান রাজনীতিবিদ ও নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা।

বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন বলেন,শুধু ঋণ নয়,বিদেশি অনুদানেরও বিভিন্ন উদ্দেশ্য থাকে।বিএনপি সরকারের সময় খাম্বা ছিল,বিদ্যুৎ ছিল না। আর এখন বিদ্যুৎ আছে,খাম্বা (সরবরাহের সক্ষমতা) নেই। রাষ্ট্রক্ষমতা পুরোপুরিভাবে সামরিক-বেসামরিক আমলাদের হাতে চলে গেছে।

সবার শেষে ক্যাবের সভাপতি গোলাম রহমান বলেন,বিদ্যুৎ ও জ্বালানির মূল্যবৃদ্ধি কতটা প্রয়োজন ছিল,পরীক্ষা করার প্রয়োজন আছে।কারও অবহেলা কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে করেছে কি না,তা খতিয়ে দেখা দরকার।সরকারের রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ব্যয়বৃদ্ধি ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া কতটা যৌক্তিক? সবকিছুতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি আছে।

সরকারের রাজনৈতিক কর্মসূচির কারণে ব্যয়বৃদ্ধি ভোক্তার ওপর চাপিয়ে দেওয়া কতটা যৌক্তিক?সবকিছুতে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির ঘাটতি আছে।

গোলাম রহমান, ক্যাবের সভাপতি
সংসদ সদস্য শামীম হায়দার পাটোয়ারি বলেন,ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে অশুভ ছায়া,অরাজকতা চলছে।দ্রুত সরবরাহ আইনটি ভয়ংকর।লাখ কোটি টাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া দিলেও মামলা করা যাবে না।অথচ এ টাকা দেবে জনগণ।এ আইনের ২০২৬ সাল পর্যন্ত মেয়াদ আছে,তার আগেই এটি বাতিল করলে ভালো।

ক্যাবের দাবির সঙ্গে সহমত জানিয়ে সাম্যবাদী দলের সাধারণ সম্পাদক দিলীপ বড়ুয়া বলেন,আন্দোলনের কোনো বিকল্প নেই। লুটেরা শ্রেণি এ আমলে ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেন প্রিন্স বলেন,লড়াই করে,আন্দোলন করে আদায় করতে হবে। নিজের টাকায় পদ্মা সেতু করা গেলে কেন বিদেশি বিশেষজ্ঞ এনে তেল-গ্যাস অনুসন্ধান করা যাবে না?সমুদ্রে এখনই অনুসন্ধান শুরু করতে হবে, তবে তা শতভাগ নিজস্ব মালিকানায়।

বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দলের (বাসদ) সহসাধারণ সম্পাদক রাজেকুজ্জামান রতন বলেন,প্রতি ইউনিট বিদ্যুতের দাম এক টাকা বাড়ানো হলে বছরে আট হাজার কোটি টাকা বাড়তি দিতে হয় ভোক্তার।আর এ মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ে সব খাতে। নিজেদের দায়মুক্তি দিয়ে দুর্নীতি,দখলের ক্ষমতা কায়েম করেছে ক্ষমতাসীনেরা।

ব্যাংক ও জ্বালানি খাতে অশুভ ছায়া,অরাজকতা চলছে। দ্রুত সরবরাহ আইনটি ভয়ংকর।লাখ কোটি টাকা বিদ্যুৎকেন্দ্রের ভাড়া দিলেও মামলা করা যাবে না।অথচ এ টাকা দেবে জনগণ।

শামীম হায়দার পাটোয়ারি,সংসদ সদস্য
এর আগে সেমিনারের শুরুতে আলাদা আলাদা করে নিবন্ধ উপস্থাপন করেন ভূতত্ত্ববিদ বদরুল ইমাম,অর্থনীতিবিদ এম এম আকাশ,ক্যাবের জ্যেষ্ঠ সহসভাপতি এম শামসুল আলম, স্থপতি ইকবাল হাবিব ও ক্যাবের আইন উপদেষ্টা জ্যোতির্ময় বড়ুয়া।

বদরুল ইমাম বলেন,দেশে গ্যাসের ব্যাপক সম্ভাবনা থাকার পরও তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) আমদানির দিকে ঝুঁকেছে।এটা জ্বালানি খাতের সবচেয়ে বড় ব্যর্থতা। জ্বালানি তেল,কয়লা আমদানি হচ্ছে।সব মিলিয়ে ২০৩০ সালে জ্বালানি খাতে দেশ পুরোপুরিভাবে আমদানিনির্ভর হয়ে যাবে।

এম এম আকাশ বলেন,বছরে সক্ষমতা বাড়ছে ১২ শতাংশ হারে আর বিদ্যুৎ উৎপাদন বাড়ছে ৭ শতাংশ হারে।এতে অব্যবহৃত সক্ষমতার পেছনে খরচ বাড়ছে।বারবার দাম বাড়িয়ে তা ভোক্তার ওপর চাপানো হচ্ছে।বিইআরসি দাম নির্ধারণ করলে কিছুটা হলেও স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি নিশ্চিত হয়।

ইকবাল হাবিব বলেন,স্থানীয় প্রযুক্তিতে নবায়নযোগ্য জ্বালানি উন্নয়ন কৌশল ঠিক করতে হবে।চাহিদা বুঝে পরিকল্পনা করতে হবে।গত ১৫–২০ বছরে নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতকে অবজ্ঞা করা হয়েছে।

জ্যোতির্ময় বড়ুয়া বলেন,জ্বালানি খাতে সুবিচার নিশ্চিত করতে হলে এ খাতের রাজস্ব আদায় যৌক্তিক করতে হবে।অব্যাহত দুর্নীতিতে উৎসাহ না দিয়ে জ্বালানি মূল্য নির্ধারণের প্রবিধানমালা সংশোধন করা দরকার। সরকার ব্যবসা ও নিয়ন্ত্রকের ভূমিকায় একই সঙ্গে থাকতে পারে না।তাই জ্বালানি খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিইআরসির ক্ষমতায়ন জরুরি।

এম শামসুল আলম বলেন,প্রাকৃতিক গ্যাস রপ্তানি ঠেকানো, উন্মুক্ত পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলন বন্ধ,নাইকোর সঙ্গে চুক্তি বাতিলের দাবিতে মানুষ ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন করেছে।১৩ দফা দাবি আদায়ে আবারও সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।

আরও খবর

Sponsered content