অর্থনীতি

বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে যে ঋণ পায়, তার সুদহার আবারও বাড়াচ্ছে দেশটি!

  প্রতিনিধি ২১ মে ২০২৩ , ২:৪১:২২ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।গত এপ্রিলে জাইকা সুদহার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা।জাইকার ৪৪তম ঋণ প্যাকেজ থেকে নতুন এই সুদহার কার্যকর হবে।

বাংলাদেশ জাপানের কাছ থেকে যে ঋণ পায়, তার সুদহার আবারও বাড়াচ্ছে দেশটি। এক বছরের কিছুটা বেশি সময়ের ব্যবধানে দ্বিতীয় দফা সুদহার বাড়ানোয় পর্যায়ক্রমে জাপানি ঋণও এখন ব্যয়বহুল হয়ে পড়ছে।

জাপান ইন্টারন্যাশনাল কো-অপারেশন এজেন্সি (জাইকা)-এর নতুন প্রস্তাবে ১.৬ শতাংশ সুদের হার প্রস্তাব করা হয়েছে, যা মার্চে বাস্তবায়িত আগের বর্ধিত হারের চেয়ে ৪০ বেসিস পয়েন্ট বেশি।এতে বছরখানেকের ব্যবধানে জাইকার ঋণের সুদহার বেড়েছে ০.৯ শতাংশ। গত জাপানি অর্থবছরে (এপ্রিল, ২০২২ থেকে মার্চ, ২০২৩) প্রথম দিকে এই সুদহার ছিল ০.৭০ শতাংশ।

গত এপ্রিলে জাইকা সুদ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে বলে জানান অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের (ইআরডি) কর্মকর্তারা। জাইকার ৪৪তম ঋণ প্যাকেজ থেকে এই নতুন সুদহার কার্যকর হবে।

তবে জাপানের প্রস্তাবিত সুদ কমাতে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে বলে জানান ইআরডির অতিরিক্ত সচিব একেএম শাহাবুদ্দিন। তিনি আরো বলেন,জাইকা যেসব দেশকে ঋণ দেয়,সব দেশের জন্যই সুদহার বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে।

তিনি আরো জানান,জাপান বছরে দুইবার পর্যালোচনা করে সুদহার পরিবর্তন করে।তবে এই হার আগামী অক্টোবরের পর্যালোচনায় কমেও যেতে পারে।ফলে অক্টোবরের পরে ঋণ চুক্তি হলে বাংলাদেশ কম সুদে ঋণ নিতে পারবে।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানান,৪৪তম ঋণ প্যাকেজে জাইকা বাংলাদেশকে কত ঋণ দেবে তা এখনও নিশ্চিত হয়নি।তবে গতবারের চেয়ে কম হবে না,বরং বাড়বে বলেই আশা করা হচ্ছে।

গত জাপানি অর্থবছরে ৪৩তম ঋণ প্যাকেজে দুইধাপে বাংলাদেশকে ২.৬৭ বিলিয়ন ডলার ঋণ দেয় দেশটি।এরমধ্যে ২০২২ সালের জুনে ০.৭০ শতাংশ সুদে দুই প্রকল্পের জন্য ১.৪ বিলিয়ন ডলার চুক্তি সই হয়।একই বছরের মার্চে আরো তিন প্রকল্পের জন্য ১.২ শতাংশ সুদে ১.২৭ বিলিয়ন ডলার ঋণচুক্তি সই করে জাইকা ও ইআরডি।

ওই সময় ঋণের সুদহার পরিবর্তন হলেও অন্যান্য ফি যেমন কনসালটেন্সি সার্ভিসের জন্য ০.০১ শতাংশ, ফ্রন্ট-এন্ড ফি (একবার) বাবদ ০.২ শতাংশ এবং ১০ বছরের গ্রেস পিরিয়ডসহ ৩০ বছরের রিপেমেন্ট পিরিয়ড (পরিশোধের সময়) অপরিবর্তিত ছিল।

নিম্ন আয়ের দেশ হিসেবে আগে বাংলাদেশকে ০.০১ শতাংশ সুদে ঋণ দিতো জাইকা।২০১৫ সালে বাংলাদেশ নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হলে,অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার সঙ্গে জাইকাও ঋণের সুদহার বাড়িয়ে দেয়।

স্বাধীনতার পর থেকে এ পর্যন্ত জাপানের সঙ্গে সরকারের প্রায় ২৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ঋণ চুক্তি সই হয়েছে বলে জানান গেছে ইআরডি সূত্রে।

আরও জানা যায়,৪৪তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় ঋণ দিতে প্রথামিকভাবে তিনটি প্রকল্প নির্বাচন করেছে জাইকা।সরকারে সম্মতি পেলে এই তালিকা চূড়ান্ত করবে সংস্থাটি।

প্রকল্পগুলো হলো-মাতারবাড়ী আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল কোল ফায়ার্ড পাওয়ার প্রোজেক্ট,চট্টগ্রাম সুয়ারেজ সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট,এবং হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এক্সপ্যানশন প্রোজেক্ট।

ইআরডির কর্মকর্তারা জানান,তালিকায় থাকা দুটি প্রকল্পে আগে অনেক কম সুদে ঋণ পেলেও এবার একটু বেশি সুদের ঋণ নিতে হবে।

এ প্রকল্পে জাইকার সঙ্গে ৬ ধাপে মোট ৪,৩৭,৭৫৪ মিলিয়ন জাপানি ইয়েনের ঋণচুক্তি সই হয়েছে।এরমধ্যে অর্থছাড় হয়েছে ৩,৭৫,৭৬৯ মিলিয়ন ইয়েন, যা মোট ঋণচুক্তির ৮৫.৮৪ শতাংশ।

এবার প্রকল্পের সপ্তম ধাপে ঋণচুক্তি হতে পারে বলে জানিয়েছে ইআরডি সূত্র।

বিদ্যুতের চাহিদা পুরণের লক্ষ্যে এ প্রকল্পের আওতায় ১,২০০ মেগাওয়াট আলট্রা সুপার ক্রিটিকাল কোল ফায়ার্ড বিদ্যুৎকেন্দ্র এবং আনুষাঙ্গিক অবকাঠামো নির্মাণের কাজ চলছে।কোল পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিপিজিসিবিএল),পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তর প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

সিপিজিসিবিএল অংশের মোট প্রাক্কলিত ব্যয় ৫১,৮৫৪.৮৮ কোটি টাকা।এর মধ্যে জাইকা ঋণ দিচ্ছে ৪৩,৯২১ কোটি টাকা।২০২৬ সালে প্রকল্পের বাস্তবায়ন কাজ শেষ হওয়ার লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত ৭৬ শতাংশ কাজ শেষ হয়েছে।

চট্টগ্রাম সুয়ারেজ সিস্টেম ডেভেলপমেন্ট:-

সংশ্লিষ্টরা জানান,২০১৭ সালে চট্টগ্রাম শহরের স্যানিটেশন মাস্টারপ্ল্যান তৈরি করা হয়। এতে চট্টগ্রাম শহরকে ৬টি ক্যাচমেন্ট এরিয়াতে ভাগ করা হয়েছে।

এরমধ্যে কালুরঘাট ও বাকলিয়া সুয়ারেজ ব্যবস্থা উন্নয়নে অর্থায়ন করতে আগ্রহ দেখিয়েছে জাইকা। এ লক্ষ্যে এই প্রকল্পের আওতায় প্রথম পর্যায়ে ইঞ্জিনিয়ারিং সার্ভিসের জন্য ঋণ দেবে সংস্থাটি।গত ১৩-১৭ মার্চ জাইকার একটি ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বাংলাদেশ সফরও করেছে বলে জানায় ইআরডি।

হযরত শাহজালাল ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট এক্সপ্যানশন প্রোজেক্ট:–

এই প্রকল্পে মোট ব্যয় ২১,৩৯৯ কোটি টাকা। জাইকা ঋণ দেবে ১৬,১৪১ কোটি টাকা।ইতোমধ্যে প্রকল্পটির জন্য দুইধাপে মোট ১,৫৬,৮২৫ মিলিয়ন ইয়েনের ঋণ চুক্তি সই হয়েছে। এরমধ্যে ১,০৯,৭৭৬ মিলিয়ন ডলার অর্থছাড় করেছে সংস্থাটি,যা মোট ঋণচুক্তির ৭০ শতাংশ।বাকি অর্থ সেপ্টেম্বরের মধ্যে ছাড় হবে বলে আশা করছে ইআরডি।

তৃতীয় ধাপে ঋণের বিষয়ে গত ৪-১৩ ডিসেম্বর উন্নয়ন সহযোগী সংস্থার ফ্যাক্ট ফাইন্ডিং মিশন বাংলাদেশ সফর করে। জাইকার ৪৪তম ঋণ প্যাকেজের আওতায় এই প্রকল্পে তৃতীয়বারের মতো ঋণচুক্তি হতে পারে বলে জানান ইআরডি কর্মকর্তারা।

৩১০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা:+

ইআরডির কর্মকর্তারা জানান,সরকারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে জাইকা বাংলাদেশকে ৩১০ মিলিয়ন ডলার বাজেট সহায়তা দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছে।

৪৪তম ওডিএ ঋণ প্যাকেজ থেকে জাইকা এই সহায়তা দেবে বলে জানিয়েছে।আসন্ন জুনের (২০২৩) মধ্যে এ সংক্রান্ত ঋণচুক্তি হতে পারে।

আরও খবর

Sponsered content