রাজনীতি

বরিশাল-১ আসনে আওয়ামী লীগের একক প্রার্থী-বিএনপি অনিশ্চয়তায় ভুগছেন!

  প্রতিনিধি ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ , ৬:১২:০৯ প্রিন্ট সংস্করণ

বরিশাল জেলা প্রতিনিধি।।জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনে সম্ভাব্য প্রার্থিতা নিয়ে আওয়ামী লীগে কোনো মতবিরোধ নেই।ইসলামী আন্দোলনেও রয়েছেন একক প্রার্থী। তবে বিএনপি ও জাতীয় পার্টিতে একাধিক নেতা রয়েছেন, যারা দলের হয়ে আসন্ন সংসদ নির্বাচনে লড়তে চান।আসনটি আগৈলঝাড়া ও গৌরনদী উপজেলা নিয়ে গঠিত।

এ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য পার্বত্য শান্তি চুক্তি বাস্তবায়ন প্রক্রিয়া পরিবীক্ষণ কমিটির আহ্বায়ক (মন্ত্রীর পদমর্যাদায়), স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি এবং বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ। দক্ষিণাঞ্চলে দলের নেতাকর্মীরাও অভিভাবক হিসেবে তাকে শ্রদ্ধা করেন।

স্থানীয় নির্বাচন ও দলীয় রাজনীতিতে তার সিদ্ধান্তকে গুরুত্ব দিয়ে থাকেন আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। তাই আসন্ন নির্বাচনে বরিশাল-১ আসনে দলের একক প্রার্থী হিসেবে রয়েছে তার অবস্থান।এছাড়া এ সরকারের আমলে এলাকায় ব্যাপক উন্নয়নমূলক কর্মকাণ্ড হওয়ায় আগের যে কোনো সময়ের তুলনায় আওয়ামী লীগ এখানে বেশ শক্তিশালী অবস্থানে রয়েছে।এ আসনে তিন লাখ ৪২ হাজার ৯৩ ভোটারের মধ্যে ১ লাখ ৫৩ হাজার ৭০৬ জন পুরুষ ও এক লাখ ৫০ হাজার ৫৩৩ জন নারী রয়েছেন।

অবশ্য বিএনপি নেতারা এখনই নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে কোনো কথা বলতে চান না।কেন্দ্র থেকে বিএনপির ঘোষণা রয়েছে,দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশ নেবেন না।সেই হিসেবে বরিশাল সিটি করপোরেশনসহ অন্যান্য সব নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছে দলটি।কেন্দ্রের নির্দেশনা অনুযায়ী সম্ভাব্য কোনো প্রার্থী সরাসরি মুখ খুলছেন না।তবে বিএনপির একাধিক নেতা মনোনয়ন প্রত্যাশা করছেন।

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থীর তালিকায় রয়েছেন বিএনপির সংস্কারপন্থি নেতা হিসেবে পরিচিত সাবেক এমপি জহিরউদ্দিন স্বপন,দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবহান,কার্যনির্বাহী কমিটির আরেক সদস্য অ্যাডভোকেট গাজী কামরুল ইসলাম সজল, কেন্দ্রীয় কমিটির বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আকন কুদ্দুসুর রহমান।এদিকে,জাতীয় পার্টি থেকে দলের ঢাকা দক্ষিণ শাখার সদস্য সেকান্দার আলী সেরনিয়াবাত ও কেন্দ্রীয় সদস্য এস এম রহমান পারভেজের নাম প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।

আর এ আসনে ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আগৈলঝাড়া উপজেলা সভাপতি মেহেদী হাসান রাসেলকে প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা দেয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানিয়েছেন দলের একাধিক নেতা।

নির্বাচনী পরিসংখ্যান বলছে,বরিশাল-১ আসনে সব থেকে বেশি সময় ক্ষমতায় ছিলো আওয়ামী লীগ দলীয় এমপি। ১০টি সংসদ নির্বাচনে ছয়বার জয়লাভ করেছে আওয়ামী লীগ,আর বিএনপি করেছে তিনবার এবং জাতীয় পার্টি দুবার।

১৯৭৩ সালে এ আসন (তৎকালীন বাকেরগঞ্জ-১৩) থেকে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভগ্নিপতি আব্দুর রব সেরনিয়াবাত সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়ে মন্ত্রী হন। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে অন্য যারা নিহত হয়েছিলেন,তাদের মধ্যে আব্দুর রব সেরনিয়াবাত ছিলেন অন্যতম।

শহীদ আব্দুর রব সেরনিয়াবাতের মৃত্যুর পর তার বড় ছেলে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ ১৯৯১ সালে বরিশাল-১ আসন থেকে নির্বাচিত হন।এরপর ১৯৯৬ সালেও এ আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন তিনি।ওই সময় আওয়ামী লীগের প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলো বিএনপির কাজী গোলাম মাহবুব।

তবে ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী বামপন্থি সাবেক ছাত্রনেতা এম জহিরউদ্দিন স্বপনের কাছে সামান্য ভোটে হেরে যান আওয়ামী লীগের প্রার্থী।যে নির্বাচন ও ফলাফল নিয়ে রয়েছে নানান বিতর্কও।আর এ নির্বাচনের পর দুর্বল নেতৃত্বে শুরু হয় বিএনপির বিভক্তির রাজনীতি।

তবে ২০০৮ সালে আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ্ নির্বাচনে অংশ না নেয়ায় এ আসন থেকে নির্বাচনে অংশ নেন তার স্নেহভাজন বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস।তিনি বিএনপি প্রার্থী ইঞ্জিনিয়ার আবদুস সোবাহানকে হারিয়ে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।

এরপর ২০১৪ সাল, আর সর্বশেষ ২০১৮ সালের নির্বাচনে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন আবুল হাসানাত আব্দুল্লাহ।

বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট তালুকদার মো. ইউনুস বলেন,আওয়ামী লীগের সময়ে গোটা দক্ষিণাঞ্চলের যেভাবে উন্নয়ন কর্মকাণ্ড পরিচালিত হচ্ছে,তাতে সাধারণ মানুষ নৌকায় ভোট দেবে।আওয়ামী লীগ যখনই ক্ষমতায় আসে, তখনই দেশের উন্নয়ন হয় – এটা সাধারণ মানুষ বুঝে গেছে।তাই জনগণ মুখের কথায় নয়, উন্নয়নেই ভোট দেবে এবার।

বরিশাল-১ আসন নৌকার,যেখানে বিপুল ভোটে নৌকাই বিজয়ী হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন,আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর এ এলাকার রাস্তাঘাট, ব্রিজ,কালভার্ট, স্কুল-কলেজের ব্যাপক উন্নয়ন করে।আবার নানান সুযোগ-সুবিধার কারণে মানুষ শান্তিতে বসবাস করছে।

এদিকে,বরিশাল জেলা বিএনপির আহ্বায়ক সাবেক এমপি আবুল হোসেন খান বলেন,দলীয় সরকারের অধীনে তারা নির্বাচনে অংশ নেবে না।নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে যদি নির্বাচন হয়,আর তখন বিএনপি যদি নির্বাচনে অংশ নেয়, তাহলে আন্দোলন-সংগ্রামে ভূমিকাসহ সার্বিক দিক বিবেচনা করে নীতিনির্ধারকরা প্রার্থী মনোনয়নের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন।

জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কার্যালয়ের তথ্য মতে,একটি পৌরসভা ও ১২টি ইউনিয়ন নিয়ে গঠিত বরিশাল-১ আসন। এ আসনের সম্ভাব্য ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১২৯টি।তবে ভোটার তালিকা হালনাগাদের কাজ চলমান থাকায় আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ভোটার সংখ্যা আরও বাড়বে বলেও জানা গেছে।

আরও খবর

Sponsered content