প্রতিনিধি ২২ মে ২০২৫ , ৫:২৩:২২ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।বাংলাদেশে উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া জমি নিয়ে পারিবারিক বিরোধ দিন দিন বেড়ে চলেছে।আইন উপেক্ষা করে বণ্টননামা না করেই কেউ যদি তার অংশ একপাক্ষিকভাবে বিক্রি করে দেয়,তাহলে সেটি আইনত বৈধ নয় বলে জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা।

অ্যাডভোকেট আনন্দ চন্দ্র দাস জানান,অনেক ক্ষেত্রেই দেখা যায়,উত্তরাধিকারসূত্রে জমি পাওয়ার পর পরিবার সদস্যরা পরস্পরের সঙ্গে বসে লিখিত বণ্টন না করে যার যার মতো করে জমি ভাগ করে নেয়।কেউ কেউ ভালো অবস্থানের জমি নিজে নিয়ে নেয় এবং মূল্যহীন অংশ অন্যদের দিয়ে দেয়।এতে সংঘাতের সৃষ্টি হয়,যা পরবর্তীতে আদালতে গড়ায়।
তিনি বলেন,কেউ যদি সম্পত্তির বণ্টননামা না করে,অথচ তার প্রাপ্য অংশ যেকোনো একদিক থেকে বিক্রি করে দেয়, তাহলে সেটি আইনত এবং ন্যায়ত বৈধ নয়।বিশেষ করে যদি সে উচ্চমূল্যের জমি নিয়ে নেয় এবং অন্য উত্তরাধিকারীদের কম মূল্যের অংশ দেয়, তাহলে সেটি স্পষ্টভাবে অন্যায্য।”
আইন কী বলছে?
বাংলাদেশের “স্টেট অ্যাকুইজিশন অ্যান্ড টেনেন্সি অ্যাক্ট, ১৯৫০”-এর ১৪৩ ধারা অনুযায়ী,উত্তরাধিকারদের মধ্যে জমি লিখিতভাবে বণ্টন করে তা রেজিস্ট্রি অফিসে নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক।এই নিবন্ধিত দলিল দেখেই এসিল্যান্ড সংশ্লিষ্টদের নামে খতিয়ান খুলে থাকেন।যদি বণ্টননামা না থাকে,তাহলে এসিল্যান্ড নতুন খতিয়ান খুলবেন না।
তবে,অ্যাডভোকেট আনন্দ বলেন,আইনটি বাধ্যতামূলক করলেও এতে শাস্তির বিধান না থাকায় অনেকেই এটি উপেক্ষা করেন।তিনি বলেন,যদি আইন অনুসারে শাস্তির বিধান থাকতো,যেমন—জেল,সম্পত্তি ফ্রিজ বা দলিল বাতিলের ক্ষমতা—তাহলে মানুষ বাধ্য হয়ে বণ্টননামা করতো।”
যদি গোপনে বিক্রি করা হয়? করণীয় কী?
তিনি বলেন,যদি কেউ গোপনে তার অংশ বিক্রি করে ফেলে, তাহলে সরাসরি কয়েকটি আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া যায়:
বাটোয়ারা মামলা দায়ের: জমি আনুষ্ঠানিকভাবে ভাগ না হলে বাটোয়ারা মামলা করা যেতে পারে।
নিষেধাজ্ঞা মামলা (Injunction): যার কাছে জমি বিক্রি হয়েছে,তার দখল প্রতিরোধে নিষেধাজ্ঞা জারি করতে পারেন।
দলিল বাতিলের মামলা: বেআইনি বিক্রির দলিল বাতিলের জন্য আলাদাভাবে মামলা করা সম্ভব।
তবে তিনি সতর্ক করেন,এসব মামলার নিষ্পত্তি দীর্ঘ সময় নেয়,কখনো কখনো ১৫–২০ বছরও লেগে যেতে পারে।
পারিবারিক শান্তির উপায়?
তিনি বলেন, “সবচেয়ে ভালো উপায় হলো পরিবারে আলোচনা করে একটি লিখিত আপোষ বণ্টননামা তৈরি করা এবং তা রেজিস্ট্রি করে নেওয়া।এতে ভবিষ্যতের জন্য স্থায়ী সমাধান হয় এবং পরবর্তী প্রজন্মও উপকৃত হয়।”
অ্যাডভোকেট আনন্দ চন্দ্র দাস সবশেষে বলেন,জমি নিয়ে বিরোধ এড়াতে সচেতনতা ও আইনগত জ্ঞান ছড়িয়ে দেওয়া জরুরি।একই সঙ্গে,উত্তরাধিকারীরা যেন পারস্পরিক সম্মান বজায় রেখে ন্যায়সঙ্গতভাবে বণ্টন করেন,সেই আহ্বান জানান তিনি।

















