বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংবাদ

ফেইসবুক ও ইন্টারনেট বন্ধে ই-কমার্সখাতে ক্ষতিগ্রস্ত ১৭৫০কোটি টাকা-ই-ক্যাব

  প্রতিনিধি ৩১ জুলাই ২০২৪ , ৫:৫৩:০৫ প্রিন্ট সংস্করণ

0Shares

নিজস্ব প্রতিবেদক।।কোটা সংস্কার আন্দোলনের মধ্যে ফেইসবুক ও ইন্টারনেট বন্ধের ১৩ দিনে ই-কমার্স খাতে ১ হাজার ৭৫০ কোটি টাকার ক্ষতির হিসাব দিয়েছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।

ঢাকার বনানীতে ই-ক্যাব কার্যালয়ে বুধবার বিকালে সংগঠনটির সভাপতি শমী কায়সার বলেন, “ইন্টারনেট বন্ধ থাকায় অনলাইন ব্যবসা সম্পূর্ণরূপে বন্ধ হয়ে যায়।যারা মুদি, খাদ্যপণ্য ও পচনশীল দ্রব্য যেমন মাছ-মাংস অনলাইনে বিক্রি করতেন,তারা অর্ডার এবং স্টক নিয়ে বিপাকে পড়েন।বড় ধরনের ক্ষতির সম্মুখীন হন তারা।

“এ ছাড়া যারা ফেইসবুকে অ্যাড (বিজ্ঞাপন) রান করে পরে বন্ধ করতে পারেনি তারাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছেন।ফেসবুক বন্ধ থাকায় ক্ষুদ্র ও ফেইসবুক উদ্যোক্তারা চরম বিপদে ছিলেন।”

শমী কায়সার বলেন,বর্তমানে বাংলাদেশে ৫ লাখের বেশি ফেইসবুক উদ্যোক্তা,কয়েক লাখ ই-কমার্স কর্মী,সরবরাহকারী ও সহযোগী ব্যবসাসহ এ খাতের উপর নির্ভরশীল মানুষের সংখ্যা অন্তত ২০ লাখ।সারা দেশে আমাদের প্রায় ৫০ হাজার ডেলিভারি কর্মীরা প্রতিদিন ৮ লাখের বেশি পরিবারকে সেবা দিচ্ছেন।এই সেবা প্রতিবছর ২৫ শতাংশ হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে।

“কিন্তু প্রতিদিনের ক্রয়-বিক্রয় না হওয়ার কারণে দৈনিক ১২০ কোটি টাকার বেশি ক্ষতি হয়েছে।এফ-কমার্স উদ্যোক্তাদের মোট ক্ষতি হয়েছে ৬০০ কোটি টাকারও বেশি,ই-কমার্সে ৪০০ কোটি টাকা,ই-কমার্স লজিস্টিকসে অন্তত ১০০ কোটি টাকা, ই-ট্যুরিজমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা।এ ছাড়া অনলাইন শপ, মার্কেট প্লেস,সার্ভিস পোর্টাল,ই-লার্নিং ও ডিজিটাল প্রোডাক্ট রয়েছে। গত ১৩ দিনে মোট ক্ষতি সাড়ে ১৭ শ কোটি টাকার অধিক।”

সংকট থেকে উত্তরণে সরকারের সহযোগিতা চেয়ে সংবাদ সম্মেলনে ই-ক্যাব সভাপতি বলেন,“ছোট উদ্যোক্তারা অল্প চালানের মাধ্যমে ব্যবসা চালু রাখে,তাদের একটি অংশের ব্যবসা বন্ধ হয়ে আয় শূন্যের কোঠায় নামায় অনেকের চাকরি যাবে।স্থানীয় বিনিয়োগকারীদের ই-কমার্সে বিনিয়োগের গতি কমে যাবে।

“বর্তমান পরিস্থিতি অনাকাঙ্ক্ষিত ও অপ্রত্যাশিত।আমরা কেউ এর জন্য প্রস্তুত ছিলাম না এবং পরিস্থিতি থেকে উত্তরণে আমাদের সকলকে একযোগে কাজ করতে হবে।ভবিষ্যতে ক্ষুদ্র ও মাঝারি উদ্যোক্তাদের কথা চিন্তা করে এ ধরনের অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনায় যেন ব্যবসা বন্ধ না হয়,সেজন্য ব্যবসার কন্টিনজেন্সি প্ল্যান করা এবং বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষকে নিয়ে সরকারের নীতিগত সহায়তা প্রয়োজন।”

কোটা সংস্কার আন্দোলনের প্ল্যাটফর্ম বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ডাকে ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচিতে দেশজুড়ে সংঘাত-সহিংসতা ছড়িয়ে পড়লে গত ১৭ জুলাই রাতে মোবাইল ইন্টারনেট সেবা বন্ধ করে দেওয়া হয়।এরপর পরিস্থিতির আরো অবনতি হলে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবাও বন্ধ হয়ে যায়।

সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়,মহাখালীর দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ভবনে আগুন দেওয়া হলে ক্ষতিগ্রস্ত হয় সড়কের ওপর থাকা ইন্টারনেট সেবাদাতা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের তার।ক্ষতিগ্রস্ত হয় কয়েকটি ডেটা সেন্টারও।সে কারণেই সারাদেশে ইন্টারনেট সেবা বন্ধ হয়ে যায়।

পাঁচ দিন পর ২৩ জুলাই ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট পরিষেবা চালু হয়।আর ১০ দিন পর চালু হয় মোবাইল ইন্টারনেট।

কয়েক দিন ইন্টারনেট বন্ধের পরিস্থিতিতে ই-কমার্স খাতে যে ক্ষতি হয়েছে,তার হিসাব তুলে ধরে ভবিষ্যতে সবসময় ইন্টারনেট ও ফেইসবুক সচল রাখার দাবি জানিয়েছে ই-ক্যাব।

ইন্টারনেট বন্ধে ক্ষতির পরিস্থিতিতে সরকারের কাছে কয়েকটি দাবি জানিয়েছেন সংগঠনটির নেতারা।এর মধ্যে রয়েছে-যেসব উদ্যোক্তার ব্যাংক ঋণ রয়েছে,তা পরিশোধের সময়সীমা ন্যূনতম ছয় মাস বৃদ্ধি করা,সহজ শর্তে ঋণ প্রদান করা, লজিস্টিকস ও ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের সাময়িকভাবে ভ্যাট মওকুফ করা,ট্রেড লাইসেন্স নবায়ন ফি মওকুফ ও মেয়াদ বৃদ্ধি করা।

এ ছাড়া ফেইসবুকে সচল থাকা বিজ্ঞাপনের মূল্য ফেরত বা বিজ্ঞাপনের জন্য ফেইসবুকের সঙ্গে যোগাযোগ করার জন্য সরকারে প্রতি আহ্বান জানান তারা।

ফেইসবুকের বিকল্প অন্য কোনো মাধ্যমে ব্যবসার সাইট খোলার চেষ্টা চলছে জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, “আমাদের কাস্টমারের বড় অংশ ফেইসবুক থেকে আসে। এখন হঠাৎ করে বিকল্প খুললেই হবে না।কাস্টমারদের অভ্যস্ত করে তুলতে হবে।এটা করতে অনেক সময় লাগবে।”

ই-ক্যাবের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট মো. সাহাব উদ্দিন শিপন,সহ-সভাপতি আম্বারীন রেজা,সাধারণ সম্পাদক নাছিমা আক্তার নিশা,সহ-সাধারণ সম্পাদক খন্দকার তাসফিন আলম,অর্থ সম্পাদক আসিফ আহনাফ,পরিচালক শাহারিয়ার হাসান,মো. সাইদুর রহমান সাঈদ,মো. ইলমুল হক সজীব ও অর্ণব মুস্তাফা সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।

0Shares

আরও খবর

Sponsered content

0 Shares