ব্যবসা ও বাণিজ্য সংবাদ

প্লাষ্টিক ব্যাংকে জমাকৃত তিন হাজার ৫০০ টাকা ব্যবসায় লাখোপতি

  প্রতিনিধি ১৩ নভেম্বর ২০২২ , ৩:৩৫:৩৩ প্রিন্ট সংস্করণ

রাঙামাটি(চট্টগ্রাম)প্রতিনিধি।।আঁখি ভট্টাচার্য্য, জন্ম ও বসবাস রাঙ্গামাটিতে। এসএসসি পাসের পর বিয়ে হয় তার। শ্বশুর বাড়িতে থেকে সংসার জীবনের পাশাপাশি উচ্চমাধ্যমিক ও ডিগ্রি পাস করেন। একইসঙ্গে চট্টগ্রাম কলেজ থেকে মাস্টার্স ও চট্টগ্রাম সাউদার্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইন বিষয়ে পড়াশুনা করেন তিনি। আঁখি বর্তমানে চট্টগ্রাম বার কাউন্সিলে অনুশীলন করছেন।

কম বয়সে বিয়ে ও লোকজনের কটুকথা শুনেও হাল ছাড়েননি তিনি। ২০০৮ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত ব্লক বাটিক ও সেলাই নিয়ে কাজ করেন। পরবর্তী সময়ে ২০১১ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত ব্লক-বাটিক ও সেলাইয়ে শিক্ষক ও পরিচালক হিসেবে কাজ করেছেন ঢাকার ‘সাজেদা ফাউন্ডেশন’-এ । নিজের বাচ্চার জন্য দীর্ঘ পাঁচ বছরের চাকরিজীবন থেকে ফিরে এসে উদ্যোক্তা হবেন বলে চিন্তা করেন।

আঁখি সংসার, পড়াশুনা ও বাচ্চার দেখাশুনা করতে গিয়ে অবসর সময়কে কাজে লাগাতে মরিয়া হয়ে ওঠেন। যেহেতু ব্লক-বাটিক, সেলাই ও ডিজাইনের কাজ জানতেন, সেজন্য চ্যালেঞ্জিং হলেও উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখেন। ‘পরিশ্রম বেশি থাকলে, আগ্রহ বেশি কাজ করবে’ কথাটিকে মন থেকে মেনে কাজ করেন তিনি। ফেসবুক গ্রুপ ‘রূপস ফ্যাশন হাউজ’-এর মাধ্যমে রাঙ্গামাটির ঐতিহ্য তাঁতের শাড়ি, থ্রি-পিস, ওড়না ও বেতের ব্যাগ নিয়ে নিজের উদ্যোগ প্রকাশ করেন আঁখি। এরমধ্যে বেতের ব্যাগই অন্যতম।

আঁখি বলেন, ‘‘আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী থাকলেও আমার কাছে মনে হয়েছে আমার ব্যবসার শুরুটাই হবে নতুনত্ব দিয়ে। তাই মেয়ের উপহার পাওয়া প্ল্যাস্টিকের ব্যাংকে জমানো তিন হাজার ৫০০ টাকাকেই আমার মূলধন হিসেবে বেছে নেই। প্রথমে মার্কেট থেকে বুটিকসের জামাকাপড় ও শাড়ি দিয়ে ২০২০ সালের জুন মাসে নিজের ব্যবসা শুরু করি।

কারখানা থেকে সরাসরি পণ্য কালেকশন থেকে শুরু করে ক্রেতাদের কাছে পৌঁছানো পর্যন্ত নিজে একা কাজ করেছি। ছোটবেলা থেকেই মানুষের সঙ্গে মিশতে পারতাম ভালো। আর এই গুণটির কারণে ক্রেতাদের সঙ্গে আলাপচারিতা হয় অনেক বেশি, যা আমার ব্যবসাকে এগিয়ে নিয়ে যেতে দারুণ ভূমিকা পালন করেছে।

অনলাইন ব্যবসায় যোগাযোগের প্রধান মাধ্যম ভালো গতি সম্পন্ন ইন্টারনেট। রাঙ্গামাটি জেলার ঢালু অঞ্চলে বাস করায় যাতায়াত ও ইন্টারনেট ধীরগতির জন্য অনেক সময় সমস্যায় পড়েন তিনি। এসময় ক্রেতাদের চাহিদা বিবেচনা করে দ্রুত পণ্য পৌঁছাতে তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। আঁখি শশুর বাড়ি, সংসার ও বাচ্চাকে সময় দিয়ে সবকিছুতে পেশাদারিত্ব বজায় রেখেছেন।

তিনি বলেন, ‘একজন উদ্যোক্তাকে সবার আগে তার উদ্যোগ ও ঘর সংসারের কাজের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি।’ ‘ব্যবসা আমার দায়িত্ব, আর শখ হচ্ছে আমি কাজটা পারি’ এই বিশেষ দিকটি মাথায় রেখে ব্যবসাতেই নিজের ক্যারিয়ার গড়তে চাই। কেননা, আমার আইন পেশায় সঠিক কর্মক্ষেত্র খুঁজে পেতে ১২ থেকে ১৫ বছর সময়ের ব্যাপার। এই সময়ের মধ্যে আমি আমার ব্যবসাটি প্রতিষ্ঠিত করব’, বলেন তিনি।

ভবিষ্যতে বিবাহিত মেয়েদের কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরিতে কাজ করতে চান আঁখি। তার ইচ্ছা, ডিজাইনে নতুনত্বের মান বজায় রেখে গতানুগতিক ধারার বাইরে কাজ করবেন। নিজের ডিজাইন করা রাঙ্গামাটির ঐতিহ্যবাহী পণ্য ছাড়াও বিভিন্ন ধরনের চটের ব্যাগ নিয়ে কাজ করার আগ্রহ প্রকাশ করেন তিনি।

আরও খবর

Sponsered content