প্রতিনিধি ৭ সেপ্টেম্বর ২০২২ , ৩:৫৪:০২ প্রিন্ট সংস্করণ
নেত্রকোনা প্রতিনিধি।।আব্দুল আজিজ (৫৫), পিতা-মৃত তালেব হোসেন নেত্রকোণা জেলার পূর্বধলা থানাধীন মানিকদির সাকিনের একজন স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি ০৩ (তিন) কন্যা ও ০১ (এক) পূত্র সন্তানের জনক। তার এক কন্যা বিবাহিত। তিনি পেশায় একজন ব্যবসায়ী।
পূর্বধলা থানাধীন শ্যামগঞ্জ বাজারে তার “আব্দুল আজিজ ট্রেডার্স” নামীয় একটি পোল্ট্রি ফিডের দোকান রয়েছে।
প্রতিদিন ছেলে বিপ্লবকে নিয়ে আব্দুল অজিজ দোকানে যান। রাত আনুমান ৯টায় ছেলেসহ বাড়িতে ফিরেন।
এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার দিন ০১ সেপ্টেম্বর ২০২২ সকাল ৯টায় ঘটিকার সময় আব্দুল আজিজ ছেলে বিপ্লবকে নিয়ে বাড়ী থেকে বের হয়ে দোকানে যায় এবং সারাদিন মালামাল বিক্রি শেষে প্রতিদিনের ন্যায় একই সময় ছেলেসহ বাড়ী ফিরেন।
বাড়িতে এসে আব্দুল আজিজ বাথরুমে যান এবং বাথরুম থেকে বের হয়ে ছেলে বিপ্লবের খোঁজ নেন। বিপ্লব ঘর থেকে বের হয়ে যাওয়ার তথ্যে ছেলের খোঁজে বের হন এবং ছেলের মোবাইলে ফোন দেন। মোবাইল ফোন মারফত আব্দুল আজিজ জানতে পারেন শ্যামগঞ্জ বাজারের সন্নিকটে কুতুবপুর সাকিনস্থ শ্মশানঘাট নামক স্থানে বিপ্লবের অবস্থান।
এ কথা শোনে আব্দুল আজিজ সেখানে গমন করেন। কিছুক্ষণ পর আব্দুল আজিজের ছেলে বিপ্লব তার ভগ্নিপতি (বড় বোনের জামাতা) সোহেল মিয়াকে ফোন করে জানান কে বা কারা তার বাবাকে কুপিয়ে দৌঁড়ে পালিয়ে যায়।
এ সংবাদের প্রেক্ষিতে বিপ্লবসহ তাদের নিকটাত্মীয়-স্বজন ঘটনাস্থলে গিয়ে আব্দুল আজিজের মাথায় ও কানের পাশে কুপানো অবস্থায় দেখতে পেয়ে তাৎক্ষণিক ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যায়।
ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক ভোর ৫টায় ঘটিকার সময় আব্দুল অজিজকে মৃত ঘোষণা করেন। উল্লিখিত ঘটনায় মৃত আব্দুল আজিজের দাফন শেষে তার স্ত্রী বকুল বেগম অজ্ঞাত ব্যক্তিদের বিবাদী করে একটি অভিযোগ দাখিল করলে পূর্বধলা থানা মামলা নং-০৮, তারিখঃ ০৩-০৯-২০২২। ধারা-৩০২/৩৪ পেনাল কোড রুজু করা হয়। মামলাটি বর্তমানে তদন্তাধীন।
মোঃ ফয়েজ আহমেদ, পুলিশ সুপার, নেত্রকোণা উল্লিখিত মামলাটি প্রযুক্তির সাহায্যে অতিসত্বর খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করেছেন।অপরাধীদের আইনের আওতায় আনয়নের জন্য সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাগণকে নির্দেশ প্রদান করেন।
পুলিশ সুপার, নেত্রকোণা মহোদয়ের নির্দেশনা মোতাবেক সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তাগণ কার্যক্রম শুরু করেন।উল্লিখিত ঘটনায় মৃত আব্দুল আজিজের ছেলে বিপ্লবের চালচলন এবং আচরণে পরিবর্তন লক্ষ্য করা যায় যা সন্দেহের উদ্রেক সৃষ্টি করে।
ঘটনার নেপথ্যে জানা যায় বিপ্লব তার পিতা মাতার আবাধ্য সন্তান ছিল।অসৎ সঙ্গের সহিত ছিল তার চলাফেরা। সে পিতা মাতার কথা না শোনে খারাপ প্রকৃতির বন্ধুদের সহিত যোগাযোগ করায় তার পিতা তাকে সার্বক্ষনিক চোখে চোখে রাখত এবং সব সময় দোকানে ব্যস্ত রাখার চেষ্টা করত। এ বন্দী জীবন বিপ্লবের ভাল লাগত না। তাই সে গোপনে তার বন্ধুদের সাথে পরামর্শ করে পিতাকে খুনের পরিকল্পনা করে।
এরই ধারাবাহিকতায় ঘটনার আগের দিন বন্ধুদের প্রথমে ১০০০/- টাকা এবং পরবর্তীতে আরও ৫০০/- টাকাসহ মোট ১৫০০/- টাকা দেয়, যা দিয়ে তার বন্ধুরা শ্যামগঞ্জ বাজার থেকে দুটি চাইনিজ কুড়াল ক্রয় করে। ঘটনার দিন আব্দুল আজিজকে উক্ত কুড়াল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়।
পুলিশ সুপারের নির্দেশনায় খুনের প্রকৃত রহস্য উদ্ঘাটন এবং অপরাধীদের আইনের আওতায় সক্ষম হয়। প্রযুক্তির সহায়তা অবলম্বনপূর্বক তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ সাপেক্ষে বিপ্লবকে গ্রেফতার করে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করে।
উল্লিখিত খুনের ঘটনা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত বিপ্লবের নিকট উপস্থাপন করা হলে সে তার পিতাকে খুনের পরিকল্পনা ও বন্ধুদের কর্তৃক পিতাকে খুনের সময় উপস্থিত থাকার কথা স্বীকার করেন।
সে আরও জানায় ঘটনার দিন রাত অনুমান ০৯.০০ ঘটিকার সময় পিতার সাথে বাড়ী ফিরে কিছুক্ষণ পর ঘর থেকে বের হয়ে যায়। তার ধারণা ছিল ঘর থেকে বের হলে তার পিতা তাকে খুঁজতে বের হবে। সেই বিশ্বাস থেকেই পূর্ব থেকে খুনের স্থান নির্ধারণ করে রাখে এবং তার বন্ধুরা সেখানে অবস্থান করতে থাকে। বিপ্লব বাড়ী থেকে বের হওয়ার পর তার পিতা তাকে ফোন করলে তার অবস্থান কুতুবপুর সাকিনস্থ শ্মশান ঘাটের পাশে বলে জানায়।
এ সময় আব্দুল আজিজ ঘটনাস্থলে যাওয়া মাত্রই বিপ্লবের সম্মুখে তার বন্ধুরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। পুলিশের জিজ্ঞাসাবাদে বিপ্লব উক্ত খুনের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী ছিল বলে স্বীকার করে এবং উক্ত ঘটনায় অনুতপ্ত হয়ে স্বেচ্ছায় বিজ্ঞ আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি প্রদান করে।
পুলিশ সুপার, নেত্রকোণার সময়োচিত নির্দেশনায় অতি অল্প সময়ে ক্লুলেস এ খুনের রহস্য উন্মোচিত হওয়ায় জনমনে পুলিশের ভাবমূর্তি উজ্জল হয়েছে।
প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে পুলিশ সাংবাদিকদের জানিয়েছেন।