অপরাধ-আইন-আদালত

পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণার প্রতিবাদে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে মানববন্ধন

  প্রতিনিধি ৬ নভেম্বর ২০২৫ , ১২:৫১:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।একীভূতকরণের প্রক্রিয়ায় থাকা পাঁচ ইসলামী ব্যাংকের শেয়ার শূন্য ঘোষণার প্রতিবাদে আজ (৬ নভেম্বর) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের সামনে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের বানারে ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীদের একাংশ।

মানববন্ধন থেকে আগামী শনিবার (৮ নভেম্বর) রাত ১২টার মধ্যে অর্থ উপদেষ্টা,বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও বিএসইসি চেয়ারম্যানের পদত্যাগ দাবি করা হয়েছে।তারা এই সময়ের মধ্যে পদত্যাগ না করলে মঙ্গলবার (১১ নভেম্বর) দুপুর ২টায় ওই পাঁচ ব্যাংকের বিনিয়োগকারী ও আমানতকারীদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়েছে।

মানববন্ধনে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী,সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি,জয়েন্ট সেক্রেটারি মো. আজাদ ও যুগ্ম আহ্বায়ক মো. ইশতেয়াক উপস্থিত ছিলেন।

এতে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মোহাম্মদ ইউনুসকে মার্জার প্রক্রিয়া দ্রুত সময়ের মধ্যে বন্ধ করার দাবি জানানো হয়।যে প্রক্রিয়ার ব্যাংকগুলো মার্জ করা হচ্ছে তা সম্পূর্ণ ভূল প্রক্রিয়া বলে জানানো হয়।যদি মার্জ করতেই হয়,তাহলে আগামী ফেব্রুয়ারি পরবর্তী নির্বাচিত সরকার এসে সিদ্ধান্ত নিক।দুই দিনের এই সরকার শেয়ারহোল্ডারদের ধ্বংস করে ব্যাংকগুলোকে মার্জ করার সিদ্ধান্ত নিলে পুঁজিবাজার আর কখনো বিনিয়োগকারীর আস্থার জায়গাতে ফিরতে পারবে না।তখন অনেক অনেক প্রণোদনা দিয়েও বাজারে কোনো উন্নতি করা যাবে না।

সংগঠনের সভাপতি মিজানুর রশিদ চৌধুরী বলেন,মার্জারের পুরো প্রক্রিয়াটা বিনিয়োগকারীদের ধ্বংস করতে নেয়া হয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশের উদাহরণ বাংলাদেশে চলে না।এই ব্যাংকগুলোকে ভালো ভালো তকমা দিয়ে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের বিনিয়োগ করতে বাধ্য করা হয়েছে।গত ৫ আগস্টের পর এগুলোর দুর্বলতা সামনে এসেছে।ততদিনে উদ্যোক্তা-পরিচালকরা তাদের শেয়ার বিক্রি করে বেড়িয়ে গেছে।যাদের হাতে শেয়ার ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে,তাদের বেশিরভাগই সাধারণ ও স্বল্প মূলধনী বিনিয়োগকারী।তারা যদি,তাদের বিনিয়োগের কোনো অংশ ফেরত না পায়,তাহলে সারাজীবনের জন্য পুঁজিবাজার ত্যাগ করবে।’

সিনিয়র জয়েন্ট সেক্রেটারি সাজ্জাদুল হক বলেন,এই সরকার অল্প কিছুদিনের জন্য গঠিত হয়েছে।যদি তারা মার্জারের এত বড় একটি ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে যায়,সেটির ভুক্তভোগী পরবর্তী সব সরকারকে ভোগ করতে হবে।আমরা চাই এই মার্জারের এই সিদ্ধান্ত থেকে অন্তবর্তীকালীন সরকার দূত সরে আসুক।

তিনি বলেন,পাঁচ ব্যাংকের হাজার হাজার বিনিয়োগকারীদের শেয়ার শূন্য ঘোষণা করায় আমরা অর্থ উপদেষ্টা,বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর এবং বিএসইসি চেয়ারম্যানকে আগামী শনিবার রাত ১২টার মধ্যে পদত্যাগের দাবি জানাচ্ছি।যদি এই তিনজন ব্যক্তি ওই সময়ে মধ্যে পদত্যাগ না করেন,তাহলে আমরা আগামী মঙ্গলবার দুপুর ২টায় ওই পাঁচ ব্যাংকের সারাদেশের সব আমানতকারী ও বিনিয়োগকারীদের নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ঘেরাও কর্মসূচি পালন করবো।ওই পাঁচ ব্যাংকের আমানতকারীরাও আমাদের সঙ্গে আন্দোলনের যুক্ত হবেন বলে অনেকেই আমাদেরকে জানিয়েছেন।

সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি আরও বলেন, ‘আমরা আগামী রোববারই কর্মসূচি ঘোষণা করতাম,তবে সারা দেশের বিনিয়োগকারী বিচ্ছিন্ন,এই বিনিয়োগের একাকিত্ব করতে মঙ্গলবার পর্যন্ত সময় নিয়েছি।আমরা বিশ্বাস করি আগামী মঙ্গলবার যে আন্দোলন হবে তা ২০১০ সালের আন্দোলনকেও হার মানাবে।’

এর আগে সকালে ওই পাঁচ ব্যাংকের শেয়ার লেনদেন স্থগিত করেছে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। ফলে পুঁজিবাজারে এখন থেকে ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন বন্ধ থাকবে।

বৃহস্পতিবার (৬ নভেম্বর) দুই পুঁজিবাজার তাদের ওয়েবসাইটে ঘোষণা দিয়ে এ তথ্য জানিয়েছে।পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত ব্যাংকগুলোর শেয়ার লেনদেন স্থগিত থাকবে।

শেয়ার লেনদেন স্থগিত হওয়া ব্যাংকগুলো হলো–ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক,সোস্যাল ইসলামী ব্যাংক (এসআইবিএল),এক্সিম ব্যাংক,গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ও ইউনিয়ন ব্যাংক।

লেনদেন স্থগিত করার কারণ হিসেবে ডিএসই থেকে জানানো হয়েছে,ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ ২০২৫-এর ধারা ১৫ অনুসারে ৫ নভেম্বর থেকে ব্যাংকগুলোকে অকার্যকর হিসেবে ঘোষণা করা হয়েছে।

ডিএসই আরও জানিয়েছে,ব্যাংকগুলো জানিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক ৫ নভেম্বর চিঠির মাধ্যমে নির্দেশ দিয়েছে ব্যাংকগুলো এখন থেকে ব্যাংক রেজোলিউশন অধ্যাদেশ ২০২৫ অনুসারে পরিচালিত হবে।বাংলাদেশ ব্যাংক আরেকটি চিঠির মাধ্যমে ব্যাংকগুলোর পরিচালনা পর্ষদও ভেঙে দিয়েছে।

এদিকে গতকাল বুধবার এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন,পাঁচ ব্যাংকের শেয়ারহোল্ডারদের ইকুইটির মূল্য এখন শূন্যের নিচে। ফলে শেয়ারগুলোর ভ্যালু জিরো হিসেবে বিবেচিত হবে। কাউকে কোনো ধরনের ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে না।

কোন ব্যাংকে সাধারণ বিনিয়োগকারীর মালিকানা কতটুকু?

ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ২০৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা রয়েছে ১২০ কোটি ৮১ লাখ।এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অংশ ৬৫ শতাংশের বেশি।এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে আরও ২৯ শতাংশ।মাত্র ৬ শতাংশ শেয়ার কোম্পানি উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে।

গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকের ৯৮৭ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার রয়েছে ৯৮ কোটি ৭৪ লাখ। এরমধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের শেয়ার সংখ্যা প্রায় ৩২ শতাংশ।এছাড়া প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৫৩ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা রয়েছে।উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের অংশ মাত্র ১৫ শতাংশ।

ইউনিয়ন ব্যাংকের ১ হাজার ৩৬ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ১০৩ কোটি ৬৩ লাখ।এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা প্রায় ৩২ শতাংশ। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারী রয়েছে প্রায় ১৪ শতাংশ।ব্যাংকের উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের অংশ ৫৪ শতাংশ।

এক্সিম ব্যাংকের ১ হাজার ৪৪৮ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা রয়েছে ১৪৪ কোটি ৭৬ লাখ।এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৩৯ শতাংশ।আর প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২৯ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা।কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে মাত্র ৩২ শতাংশ শেয়ারের মালিকানা।

সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংকের ১ হাজার ১৪০ কোটি টাকা পরিশোধিত মূলধনের বিপরীতে শেয়ার সংখ্যা ১১৪ কোটি ২ লাখ।এর মধ্যে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ১৯ শতাংশ।প্রাতিষ্ঠানিক ও বিদেশি বিনিয়োগকারীদের মালিকানা ৬৯ শতাংশ।উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের মালিকানা মাত্র ১২ শতাংশ।

আরও খবর

Sponsered content