বিনোদন

নোবেল ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বদলে বারবার বিতর্কের মুখে পড়েছেন!

  প্রতিনিধি ২০ মে ২০২৩ , ৩:২১:৪৯ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।মাইনুল আহসান নোবেল প্রতিভাবান—তাঁর ভক্ত–দর্শকেরা তো বটেই,দেশের অনেক সংগীতশিল্পীও নানা সময়ে বলেছেন এ কথা।তাঁর গায়কি,মঞ্চের পরিবেশনা দেখে সবারই মন্তব্য ছিল—‘ছেলেটি অনেক দূর যাবে’।কিন্তু সেই নোবেল ক্যারিয়ার এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার বদলে বারবার বিতর্কের মুখে পড়েছেন।সর্বশেষ আজ শনিবার প্রতারণার অভিযোগে তাঁকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর ডিবির লালবাগ বিভাগ।বিভিন্ন সময়ে সাংবাদিকদের দেওয়া সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক নোবেলের সংগীতজীবনের পথচলায়।

নোবেল জন্মেছেন গোপালগঞ্জে।বড় হয়েছেন দেশের বিভিন্ন জায়গায়।বাবার ছিল পরিবহনের ব্যবসা।সেই সূত্রে কখনো খুলনা,কখনো ঢাকায় কেটেছে ছোটবেলা।২০১৯ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেল বলেছিলেন, ‘আমি থ্রি,ফোর, ফাইভ,সিক্স পর্যন্ত গোপালগঞ্জের এস এম মডেল সরকারি উচ্চবিদ্যালয়ে পড়েছি।ক্লাস সেভেনে ভর্তি হই ঢাকার একটি স্কুলে।কিন্তু সেখানে ভালো লাগে না।যাই খুলনায়।ক্লাস এইট পর্যন্ত পড়েছি ওখানে।একের পর এক স্কুল বদলাতে বদলাতে আমি কাহিল হয়ে যাই।একেকবার একেক পরিবেশ,একেক নিয়মকানুন,নতুন নতুন বন্ধু।এরপর নাইনে এসে আবার ভর্তি হই গোপালগঞ্জের একটি স্কুলে।কিন্তু সেখানে বেশি দিন থাকতে পারি না।একটা মারামারির ঘটনায় আমাকে টিসি দিয়ে বের করে দেয়।তখন বাবা দেশেই রাখতে চান না।পাঠিয়ে দেন দার্জিলিংয়ে।পাশের শহর কাশিয়াংয়ে হিমালি বোর্ডিং স্কুলের শিক্ষার্থী হয়ে যাই সে বছর।ভর্তি হই ক্লাস নাইনে।’

তবে স্কুলের গল্প এখানেই শেষ নয়।পরের গল্পটাও শোনা যাক নোবেলের ভাষ্যে, ‘ক্লাস নাইনেই তিনবার পড়েছি।হিমালি বোর্ডিং স্কুলে নাইন শেষ করেছি।কিন্তু আর ওখানে পড়তে ইচ্ছা করেনি।এসে ভর্তি হই কলকাতার হাজরার একটি স্কুলে। আবার নাইনে!দ্য কেমব্রিজ স্কুলের শিক্ষার্থী হয়ে পাস করি ও লেভেল এবং এ লেভেল।’

স্কুল বদলাতে বদলাতে নোবেলের সঙ্গী হয়েছিল ৬০০ টাকা দিয়ে কেনা একটা পুরোনো সিগনেচার ব্র্যান্ডের গিটার।সেই গিটার নিয়ে সব জায়গায় হেঁড়ে গলায় গান গাইতেন।গান গাইবেন বলে কলকাতায় বাসা নিয়েছিলেন গলির শেষ মাথায়। নীরব,সুনসান এলাকায় রাত তিনটায় চিৎকার করে উঠত নোবেলের গলা। ফলে যা হওয়ার তা-ই হয়।ছাড়তে হয় সেই বাসা।একবার–দুবার নয়,চারবার।পরে কলকাতার এক বন্ধু নিজেদের বাগানবাড়িতে থাকার ব্যবস্থা করে দিয়েছিলেন নোবেলকে।সেখানেই নিয়মিত গানের চর্চাটা চালাতে থাকেন নোবেল।

২০১৪ সালে ঢাকায় আসেন নোবেল,তত দিনে পুরোদস্তুর গানের সঙ্গে প্রেম হয়ে গেছে নোবেলের।মা–বাবাকে সোজা জানিয়ে দেন,তাঁর প্রেম আসলে গানের সঙ্গে।বাবা নিয়মিত পড়াশোনার জন্য বলতে থাকেন।মায়ের চাপ ছিল।কিন্তু অনড় নোবেল।

সারেগামাপা

২০১৯ সালে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে নোবেল জানিয়েছিলেন, সারেগামাপার সফলতা আসার আগেই বাবার সঙ্গে নিয়মিত কথা-কাটাকাটি হতো।পরিবার থেকে বলত,পড়াশোনা প্রথমে, দ্বিতীয় হোক গান।কিন্তু নোবেল গানকেই প্রথম অবস্থানে জায়গা দেন।কারণটা পরিষ্কার।নোবেল বলেছিলেন, ‘আমার একটা বিশ্বাস ছিল,মিউজিক আমাকে বদলে দেবে। মিউজিক আমাকে আপন করে নেবে।যেটা চাকরি-বাকরি থেকে সম্ভব নয়।’ বাড়ির চাপ গায়ে মাখেননি।এগিয়েছেন নিজের গতিতে। তারপরের গল্প সবারই জানা।নোবেল অংশ নেন জি বাংলার অডিশনে।বিচারকদের শোনান জেমসের ‘বাবা’ গানটি।ভিডিও কলের মাধ্যমে আরও কয়েকবার অডিশন দেন।তারপর পান কলকাতার টিকিট।বাকিটা তো ইতিহাস,যে ইতিহাসের সাক্ষী দুই বাংলার ‘সারেগামাপা’র শ্রোতারা।

অনুদানের ছবি ‘মুখোশ’-এর টাইটেল গান দিয়ে ঢাকাই ছবির প্লেব্যাক অভিষেক হয় নোবেলের।এর আগে ভারতের কলকাতার সৃজিত মুখার্জির ‘ভিঞ্চি দা’ ছবিতে ‘তোমার মনের ভেতর যাই’ শিরোনামে একটি গানে কণ্ঠ দিয়েছিলেন নোবেল।গান,স্টেজ শো নিয়ে যখন ব্যস্ত গায়ক,তখনই বরাবার বিতর্ক তাঁকে পিছিয়ে দিয়েছে।

বারবার বিতর্কে:-

জাতীয় সংগীত ও এর রচয়িতা বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করার অভিযোগে বিতর্কের মুখে পড়েন নোবেল।দুই বাংলার সংগীতশিল্পী,দর্শকের কাছে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন।এর আগে ও পরে আরও বেশ কয়েকবার সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ কিংবা অনাকাঙ্ক্ষিত মন্তব্য করে সংবাদের শিরোনাম হন নোবেল। এরপর তিনি প্রবল বিতর্কের মুখে পড়েন জেমসের উদ্দেশে নেতিবাচক মন্তব্য করে।তাঁর বিতর্কিত কর্মকাণ্ডের জেরে একটি প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান তাঁর সঙ্গে চুক্তি বাতিল পর্যন্ত করে। নোবেল অবশ্য তখন বলেছিলেন ‘ফেসবুক হ্যাক’ করে এসব বিতর্কিত মন্তব্য করা হয়েছে।

২০২১ সালে এক সাংবাদিককে হুমকি দেওয়ার অভিযোগে সাধারণ ডায়েরি করা হয় তাঁর নামে।একই বছর নির্যাতনের অভিযোগ এনে স্ত্রী সালসাবিল মাহমুদও তাঁর বিরুদ্ধে বিচ্ছেদের আবেদন করেন।এরপর আলোচিত ও সমালোচিত এই গায়ক অনেক দিন ধরেই বিনোদন অঙ্গন থেকে দূরে।

বলেছিলেন নতুন শুরুর কথা:-

চলতি বছরের এপ্রিলে দেওয়া সাক্ষাৎকারে নোবেল বলেছিলেন,আপাতত গান নিয়েই ব্যস্ত থাকতে চান।আবার বিয়ে করবেন কবে?এমন প্রশ্নের উত্তরে গত এপ্রিলে নোবেল বলেছিলেন, ‘আপাতত বিয়েশাদি নিয়ে চিন্তা নেই।এখন চিন্তা শুধুই অ্যালবাম নিয়ে।আগে ১৪টি গান বের করব।সাড়া পেলে ভালো,না পেলেও সমস্যা নেই।আবার ১৪টি গান নিয়ে আরেকটি অ্যালবাম করার চেষ্টা করব।এ মুহূর্তে আমার কাছে প্রায় ১০০ গান সংগ্রহ আছে।’ আড়ালে থেকেই গান করে যেতে চান জানিয়ে ওই সাক্ষাৎকারে তিনি আরও বলেছিলেন, ‘স্টেজ শো নিয়মিতই করছি।কিন্তু আওয়াজ দিই না।ঈদের পর টানা পাঁচটি শো চূড়ান্ত আছে।আমি আগে শো বাবদ তিন লাখ টাকা পারিশ্রমিক নিতাম।এখন সেটি কমিয়ে ১ লাখ ৬০ হাজার করেছি,যাতে বেশি শো করতে পারি। কারণ, অ্যালবামের জন্য অনেক টাকা লাগবে।’

কিছুদিন পরেই আবারও বিতর্কে জড়ান নোবেল।কুড়িগ্রামের ফুলবাড়ী ডিগ্রি কলেজের সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে আয়োজিত সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চে গান গাওয়ার সময় ‘অসংলগ্ন’ আচরণের অভিযোগ ওঠে নোবেলের বিরুদ্ধে।ক্ষুব্ধ দর্শকেরা তাঁর দিকে পানির বোতল ও জুতা ছুড়ে মারেন।নোবেল ‘নেশাগ্রস্ত’ হয়ে মঞ্চে ওঠায় এমন হয়েছে বলে তখন জানিয়েছিলেন আয়োজকেরা।

সর্বশেষ আজ শনিবার আটক হলেন নোবেল।জানা গেছে, চার দিন আগে নোবেলের বিরুদ্ধে রাজধানীর মতিঝিল থানায় প্রতারণার অভিযোগে একটি মামলা হয়।এ মামলার সূত্র ধরেই তাঁকে আজ আটক করেছে ঢাকা মহানগর ডিবির লালবাগ বিভাগ।মামলার বিষয় জানতে চাইলে মতিঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘প্রতারণার অভিযোগে নোবেলের বিরুদ্ধে একটি মামলা হয়েছে।মামলায় গান গাওয়ার কথা বলে গান না গাওয়ায় অভিযোগ করা হয়েছে।

একের পর এক বিতর্ক থেকে শিক্ষা নিয়ে নোবেল কি পারবেন তাঁর সংগীতপ্রতিভার প্রতি সুবিচার করতে? সেটা সময়ই বলে দেবে।

আরও খবর

Sponsered content