জাতীয়

নিজে ভিক্ষা করে চললেও মানুষকে পানি দিয়ে ভাসিয়ে দিতে একটুও ভুল করেনি ওয়াসা

  প্রতিনিধি ৩ জুলাই ২০২২ , ৮:১১:০১ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক:-শুধু ‘মানুষ মানুষের জন্য’ নয়, বরং ‘মানুষ প্রতিষ্ঠানের জন্যও’। তারই জলজ্যান্ত প্রমাণ দিতে চলেছে যুগ যুগ ধরে ওয়াসার শরবত খেয়ে, সরি পানি খেয়ে জীবনধারণ করা ঢাকাবাসী।

সরকারের কাছ থেকে ভিক্ষা করে, কোনোরকমে দিন এনে দিন খেয়ে চলছে দারিদ্র্যসীমার নিচে থাকা এই শরবত সরবরাহকারী (আবারও সরি) প্রতিষ্ঠানটি। নিজে ভিক্ষা করে চললেও মানুষকে পানি দিয়ে ভাসিয়ে দিতে একটুও ভুল করেনি ওয়াসা। মানব ইতিহাসে এ রকম জনহিতৈষী প্রতিষ্ঠানের উদাহরণ সত্যিই বিরল। যারা দারিদ্র্যের কশাঘাতে পিষ্ট হয়েও মানুষকে সেবা দিতে ভুল করেনি, তাদের কল্যাণার্থে এবার এগিয়ে এসেছে সেই মানুষেরাই। চরম অর্থাভাবে দিনাতিপাত করা ওয়াসার অর্থকষ্ট দূর করতে ঢাকা শহরের বিভিন্ন পয়েন্টে ‘মানবতার দেয়াল’ স্থাপন করার উদ্যোগ নিয়েছে একদল লোক।

‘একটা প্রতিষ্ঠান কতটা গরিব হলে বোনাস হিসেবে মাত্র ১৯ কোটি টাকা দিতে পারে, ভেবেছেন কি কখনো? যেখানে বহির্বিশ্বে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের এমডিরা পায় কোটি কোটি টাকা বেতন, সেখানে একজন মানবতার ফেরিওয়ালা ওয়াসার এমডির বেতন মাত্র ৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা। এই টাকা দিয়ে তো এক মাসের সয়াবিন তেলও কেনা যায় না। তাই আমরা ঠিক করেছি, তাদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করে ভিক্ষাবৃত্তির হাত থেকে রক্ষা করব।’ মানবতার দেয়ালের প্রধান উদ্যোক্তা ইলন মাসকিম এভাবেই নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানালেন।

বিগত কয়েক বছরে পানির দাম ১৪ বার বাড়িয়েও নিজের অর্থনৈতিক অবস্থার পরিবর্তন করতে পারেনি ওয়াসা। এত এত গ্রাহক থাকার পরও দিন শেষে কেন সরকারের কাছে হাত পাততে হয়, এ ব্যাপারে প্রশ্ন করলে নাম প্রকাশে সর্বদাই অনিচ্ছুক ওয়াসার এক কর্মী বলেন, ‘আমরা ভাই পানির দামে শরবত দিই। মানে, আপনাদের কাছ থেকে নিই পানির টাকা, আর দিই শরবত। তাই আমাদের হিসাবে একটু গরমিল হয়ে থাকে। এটা এমন কোনো বড় ইস্যু না।’

অর্থনৈতিক অবস্থার এতটা করুণ বলে ওয়াসা প্রায়ই কারণে-অকারণে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি করে। তাদের হয়তো আশা, ঢাকার রাস্তার নিচে যদি একবার গুপ্তধন পেয়ে যায়! কিন্তু বিধি এখনো বাম। তবে খোঁড়াখুঁড়ি করে গুপ্তধন না পেলেও অনেক জীবিত মানুষকে ‘গুপ্ত’ করতে কিন্তু ঠিকই পেরেছে ওয়াসা।

‘আমি ভাই সেদিন অফিসে যাইতেছিলাম। রাস্তার মাঝখানে ওয়াসার “গুপ্তধন খোঁজা” প্রকল্পের গর্তে পড়ে গিয়ে ভূগর্ভ দেখে এলাম। ওই দিন আর অফিসের বসের চেহারা দেখার সৌভাগ্য হয়নি আমার!’ ওয়াসার উন্নয়নের শিকার চান্দু মিয়া এভাবেই নিজের সঙ্গে ঘটে যাওয়া রোমাঞ্চকর ঘটনার বর্ণনা দিচ্ছিলেন।

ওয়াসার অর্থনৈতিক অবস্থাকে ঠেলে ওপরে তোলার দায়িত্ব নেওয়ার পর সারা দেশ থেকে ব্যাপক বাহবা পাচ্ছে ঢাকাবাসী। ঢাকাবাসীর এমন উদ্যোগে বিমোহিত হয়ে নোয়াখালীর টিকটকার তপু ভাই বলেন, ‘এডা এক্কান সোন্দর উদ্যোগ। আন্ডাও ভাবতেছি আঙ্গো এলাকার ভিক্ষুকদের টেঁয়া-হইসার কষ্ট দূর করার লাই এরুকুম এক্কান উদ্যোগ নিউম। এডা লই আঁই আইজ্জাই নতুন এক্কান টিকটক ভিডিও বানাইউম। আন্নেরা ব্যাকে আঁর ভিডিওকান এক্কানা শেয়ার দিয়েন।’

আরও খবর

Sponsered content