রাজনীতি

নয়াপল্টনে বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর-বিএনপি

  প্রতিনিধি ২ ডিসেম্বর ২০২২ , ৯:৪০:২৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।বিএনপি আগামী ১০ ডিসেম্বর রাজধানীর নয়াপল্টনে বিভাগীয় গণসমাবেশ করতে বদ্ধপরিকর। কোন অবস্থাতেই দলটি সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যাবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। দলের সর্বোচ্চ নীতি নির্ধারণী ফোরাম স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও সমাবেশের স্থান নিয়ে আলোচনার পর নয়াপল্টনেই সমাবেশ করার সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত করা হয়।

বৃহস্পতিবার (১ ডিসেম্বর) দুপুরে বিএনপির একটি প্রতিনিধিদল পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) আবদুল্লাহ আল-মামুনের সঙ্গে বৈঠক করে।এই বৈঠকে নেতারা নয়াপল্টনে সমাবেশ করার ক্ষেত্রে তাদের অনড় অবস্থান পুনর্ব্যক্ত করেন।তারা আইজিপিকে জানান,বিএনপি সোহরাওয়ার্দী উদ্যান বা সংসদ ভবনের সামনের সড়ক সমাবেশের জন্য চায়নি।নয়াপল্টনে সমাবেশের অনুমতি চেয়ে দুই দফা চিঠি দিয়েছে।

ঘণ্টাব্যাপী বৈঠকের পর প্রতিনিধি দলের নেতা বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু সাংবাদিকদের বলেন, আমরা বলেছি সমাবেশ পল্টনে করতে চাই।সমাবেশের স্থানের বিষয়ে আমরা দুটি চিঠি ওনাদেরকে দিয়েছি।একটা ১৩ নভেম্বর ও আরেকটা ২০ নভেম্বর।দুই চিঠিতেই আমরা নয়াপল্টন চেয়েছি।আমরা কোনো দ্বিতীয় স্থান চাইনি।উনারা বলেছেন যে আপনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে করেন,আমরা সব সহযোগিতা করব।আমরা বলেছি এটা আমাদের আজকের বিষয় না।বুলু জানান,সমাবেশের আগে পুলিশের মহাপরিদর্শকের সঙ্গে দেখা করে ১৬৯টি ‘গায়েবী’ মামলার তালিকা দেওয়া হয়েছে।মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের একটি চিঠিও পৌঁছে দেওয়া হয়, যেখানে এসব মামলা প্রত্যাহারের ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানানো হয়।এসব মামলায় ৬ হাজার ৭২৩ জনের নাম উল্লেখ করে আরও ১৫ হাজার ৫০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করা হয়েছে। তাদের মধ্যে ৫৫৯ জন গ্রেপ্তার হয়েছেন বলে বিএনপি নেতাদের ভাষ্য।

বুলু বলেন,আমরা খুব শান্তিপূর্ণভাবেই কর্মসূচি বাস্তবায়ন করতে চাই।আমরা সারাদেশে আটটি সমাবেশ করেছি। কোথাও কোনো সহিংসতা হয়নি।রাজশাহীতেও হবে না,ঢাকাতেও হবে না।তবে এর বাইরে অন্য কেউ যদি নাশকতা করে বা করার চেষ্টা করে সেটা পুলিশ দেখবে।সেটা তাদের দায়িত্ব।

এদিকে গতকাল গোপালগঞ্জ জেলা আওয়ামী লীগের ত্রিবার্ষিক সম্মেলনে উদ্বোধকের বক্তব্যে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বিএনপিকে হুশিয়ার করে দিয়ে বলেন,লাঠি ও আগুন নিয়ে মাঠে নামলে বিএনপির খবর আছে।উনারা সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করছেন না। ফখরুলের মুখে মধু আর অন্তরে বিষ।এরই নাম ফখরুল।ফখরুল সাহেব,অনুমতি দেওয়া হয়েছে।আপনাদের মিটিংয়ে কেউ বাধা দেবে না।আমরা রাজশাহীতেও বলে দিয়েছি সেখানে যেন পরিবহন ধর্মঘট না করে।ঢাকায়ও পরিবহন ধর্মঘট হবে না নেত্রী বলে দিয়েছেন।

সেতুমন্ত্রী বলেন,সমাবেশের অনুমতি দেওয়ার পরও যদি বাড়াবাড়ি করেন,লাফালাফি করেন,আগুন নিয়ে নামেন, লাঠির সঙ্গে জাতীয় পতাকা লাগিয়ে মাঠে নামেন তাহলে খবর আছে।খেলা হবে দারুণ।পাল্টাপাল্টি আমরা করবো না। আমরা শান্তি চাই।তবে অশান্তি হলে তো সেখানে মাথা ঘামাতে হবে।

একইদিন কেন্দ্রীয় শহিদ মিনারে বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট আয়োজিত ’বুদ্ধিজীবী হত্যার নীলনকশার দিন ১০ ডিসেম্বর কেন বিএনপির সমাবেশ’ শীর্ষক মানববন্ধনে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, লোক হবে না বলেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করতে চায় না বিএনপি।পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বঙ্গবন্ধু সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে স্বাধীনতার ডাক দিয়েছিলেন। সেখানে (সোহরাওয়ার্দীতে) পাকিস্তানিরা আত্মসমর্পণ করেছিল।সে কারণেও বিএনপি সেখানে সমাবেশ করতে চায় না। তারা নয়াপল্টনে করতে চায়।সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশ করলে তো তারা গাড়ি ভাঙচুর করতে পারবে না।তিনি বলেন, ঢাকা শহরে বিশৃঙ্খলা করতে দেওয়া হবে না। ১০ ডিসেম্বর আওয়ামী লীগও মাঠে থাকবে।অরাজকতা করলে ছাড় দেওয়া হবে না।নয়াপল্টনে সমাবেশ করার নামে অরাজকতা করলে সরকার কঠোর হাতে দমন করবে সরকার। সরকারকে কঠোর হতে বাধ্য করবেন না।

অন্যদিকে গতকাল নয়াপল্টনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে বিএনপির গণসমাবেশ ব্যবস্থাপনা উপ-কমিটির সভা শেষে সংবাদ সম্মেলনে মির্জা আব্বাস বলেন,সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে নয়,নয়াপল্টনেই বিএনপির গণসমাবেশ হবে।১০ ডিসেম্বরের সমাবেশ ঘিরে আমাদের সর্বাত্মক প্রস্তুতি চলছে।এজন্য যা করা দরকার আমরা সব করবো।আমরা শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করতে চাই।সংঘর্ষ চাই না।

দলের নয়াপল্টন অফিসে এক সংবাদ ব্রিফিংয়ে বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেন,১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশকে নিয়ে সরকার যেন বেসামাল হয়ে পড়েছে।সমাবেশকে ঘিরে শুরু করেছে বিএনপি নেতাকর্মীদের গণগ্রেপ্তার,মিথ্যা কাহিনী সাজিয়ে পাইকারিহারে মামলা দায়ের,গভীর রাতে নেতাকর্মীদের বাড়িতে ডাকাতের মতো হানা দেওয়া,পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার চরম মাত্রায় শুরু করেছে আওয়ামী আইন শৃঙ্খলা বাহিনী।মনে হয় পুলিশ শপথ গ্রহণ করেছে যেভাবেই হোক ১০ ডিসেম্বর গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করতে হবে।

তিনি বলেন,গতকাল পুলিশ সদর দপ্তর থেকে ‘বিশেষ অভিযান পরিচালনা’ প্রসঙ্গে যে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে তা দুরভিসন্ধিমূলক এবং ভয়াবহ আতংকের।১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশকে বাধাগ্রস্ত করার জন্যই গতকাল থেকে আবাসিক হোটেল,মেস,হোস্টেল, প্রতিষ্ঠান ও কমিউনিটি সেন্টারে তল্লাশি চালানোর কথা বলা হয়েছে। নেতাকর্মীদের হয়রানি এবং জনমনে ভীতি তৈরি করাই এর উদ্দেশ্য।পাইকারি হারে গ্রেপ্তার করার পরেও সরকার নিশ্চিত হতে পারছে না জনগণের বাঁধভাঙা ঢল আটকাতে পারবে কিনা?তবে জেনে রাখুন জনতার জোয়ার ঠেকিয়ে রাখতে পারবে না কেউ।

বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়,বিএনপির স্থায়ী কমিটির বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছে পূর্বঘোষিত ১০ ডিসেম্বরের গণসমাবেশ নয়াপল্টনে অনুষ্ঠিত হবে।সব দুরভিসন্ধি,বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে গণসমাবেশ সফল করতে জনগণের প্রতি আহ্বান জানানো হয়।দলের ভাপরপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সভাপতিত্বে জাতীয় স্থায়ী কমিটির ভার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়।

আরও খবর

Sponsered content