প্রতিনিধি ২৩ মার্চ ২০২৫ , ৪:৫৪:১০ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।এ বছর প্রথমবারের মতো জাতীয়ভাবে বাংলা নববর্ষ এবং চাকমা,মারমা,ত্রিপুরা,গারো ও অন্যান্য জাতিগোষ্ঠীকে নিয়ে একটি সার্বজনীন অন্তর্ভুক্তিমূলক উৎসব আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকার।
এদিকে প্রতিবছর বাংলা নববর্ষ উপলক্ষে পহেলা বৈশাখের সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে যে মঙ্গল শোভাযাত্রা বের করা হয়,সেটির নাম পরিবর্তন হতে পারে বলেও ইঙ্গিত এসেছে।
আগামী ১৪ এপ্রিল ১৪৩২ বরণে উৎসব আয়োজনের প্রস্তুতি চলছে।
এ নিয়ে রোববার দুপুরে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন,কোনো কোনো সংস্কৃতিকে বা তার জনগোষ্ঠীকে,তার আচারকে,রীতিনীতিকে এক্সক্লুড করাটা কোনো সমাজের জন্য মঙ্গলজনক না।এটা আমরা দেরিতে হলেও বুঝতে পেরেছি,এটা ভালো।
“এই যে সকল সংস্কৃতির সব ধারাকে এক জায়গায় আনা, এটা ৩০ বছর আগে হওয়ার কথা ছিল,কিন্তু আমরা এখন করবার চেষ্টা করছি।এবারের শোভাযাত্রা যেটা চারুকলা থেকে বের হবে,সেখানে আপনারা সত্যিকার অর্থেই নতুন জিনিস দেখবেন।আপনাদের চোখেই পরিবর্তন দেখতে পারবেন অনেক। আসলেই নতুন কিছু দেখবেন,নতুন রঙ দেখবেন,নতুন গন্ধ পাবেন,নতুন সুর পাবেন।”
মঙ্গল শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের ইঙ্গিত দিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন,কী নামে এ শোভাযাত্রা হবে,সেটা আগামীকাল (সোমবার) এক সভায় নির্ধারিত হবে।”
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এ সভার আয়োজন হবে বলেও জানান তিনি।
মঙ্গল শোভাযাত্রা নামে এ শোভাযাত্রা শুরু হয়নি তুলে ধরে ফারুকী বলেন,এটার নাম ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা,সেখান থেকে হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রা।যে নাম একবার পরিবর্তিত হয়েছে,যদি সবাই সর্বসম্মত হয় তাহলে পরিবর্তিত হবে,সবাই সর্বসম্মত না হলে নাও হতে পারে।
“এবারের শোভাযাত্রা শুধু বাঙালিদের না।এটা বাঙালি, চাকমা,মারমা,গারো প্রত্যেকের।ফলে আমাদের দেখতে হবে আমরা এমন একটা নাম দেই যেটা আমাদেরই হবে,ওরা যেন ব্র্যাকেটে না পরে যায়।”
তিনি বলেন,চাকমারা উৎসবটাকে বলেন বিজু,মারমারা ডাকেন সাংগ্রাই।একটা সেন্ট্রাল নাম থাকলে পরেও ভেতরে যে ব্লকটাতে চাকমাদের শোভাযাত্রা হবে,যে ব্লকটাতে গারোদের শোভাযাত্রা হবে,গারোদেরটার সামনে আপনি ওদের নামটাই দেখবেন ওয়াংগালা,ওদেরটার সামনে দেখবেন সাংগ্রাই।”
বাঙালির প্রাণের উৎসব পয়লা বৈশাখের মঙ্গল শোভাযাত্রা ইতোমধ্যে ইউনেসকোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের স্বীকৃতি পেয়েছে। ২০১৬ সালের ৩০ নভেম্বর ইথিওপিয়ার রাজধানী আদ্দিস আবাবায় বিমূর্ত সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য সংরক্ষণবিষয়ক আন্তঃরাষ্ট্রীয় কমিটির ১১তম সেশনে মঙ্গল শোভাযাত্রাকে সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য হিসেবে ঘোষণা করে ইউনেস্কো।
এরপরও ইউনেসকো স্বীকৃত এ শোভাযাত্রার নাম পরিবর্তনের চিন্তার কারণ সাংবাদিকরা জানতে চাইলে সংস্কৃতি উপদেষ্টা বলেন,ইউনেসকো এ শোভাযাত্রাকে স্বীকৃতি দিয়েছে। ইউনেসকো আগামীবার জানবে এ শোভাযাত্রা বড় হয়েছে, আরও ইনক্লুসিভ হয়েছে।ইউনেসকোর এটাতে খুশি হওয়ার কারণ হবে,আপত্তি করার কোনো কারণ নাই।”
চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে ১৩ এপ্রিল শিল্পকলা একাডেমিতে ‘রক কনসার্ট’ হচ্ছে জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন,যেখানে চাকমা ব্যান্ড,গারো ব্যান্ড,মারমা ব্যান্ড,বাংলা ব্যান্ড এরা সবাই মিলে পারফর্ম করবে।
“চৈত্র সংক্রান্তি উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মুক্তমঞ্চে বাংলার বাউল ও ফকিররা গান গাইবেন।”
তিনি আরও বলেন,“১৪ তারিখে (এপ্রিল) জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে একটা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান ও ড্রোন শোয়ের আলোচনা করা হচ্ছে।ড্রোন শো হচ্ছে চাইনিজ অ্যাম্বেসির সহযোগিতায়।সেখানে আপনারা বিকাল বেলা গান শুনবেন এবং সন্ধ্যার পর দেখবেন সংসদ ভবনের ওপরে বাংলার আকাশে ড্রোন দিয়ে কিছু ইমেজ তৈরি করা হচ্ছে।”
ঢাকার নানা জায়গায়সহ সারা দেশে উৎসব ছড়িয়ে যাবে বলেও মন্তব্য করেন উপদেষ্টা ফারুকী।
এবারের বাংলা নববর্ষ উদযাপনে দেশের সব জেলা ও উপজেলায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয় থেকে আগে নির্ধারণ করা অনুদানের অর্থ দ্বিগুণ করা হয়েছে বলেও জানিয়ে তিনি বলেন,পাশাপাশি আমাদের যে জেলাগুলোতে ভিন্ন জাতিগোষ্ঠীর ভাই বোনেরা কনসান্ট্রেটেড,সেই জায়গাগুলোতে আমাদের বরাদ্দটা আরও বেশি হবে।সেটা কত হবে সেটা আগামীকালের (সোমবারের) মধ্যে সেটা মন্ত্রণালয় থেকে চিঠি দিয়ে জানিয়ে দেওয়া হবে।”