প্রতিনিধি ১০ জুলাই ২০২৪ , ৪:২৩:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।সরকারি চাকরিতে সব গ্রেডে ‘অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক’ কোটা বাতিল করে এক দফা দাবি আদায়ে তৃতীয় দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন শেষে শাহবাগে গিয়ে জড়ো হচ্ছেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা।বুধবার (১০ জুলাই) ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’-এর ব্যানারে সকাল থেকে রাজধানীর বিভিন্ন সড়ক ও রেলপথ ব্লক করেন তারা।অবরোধ কর্মসূচি শেষে বিকাল ৫টার পর থেকে নতুন কর্মসূচির জন্য শাহবাগে গিয়ে জড়ো হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

প্রায় সাড়ে পাঁচ ঘণ্টা অবস্থানের পর বিকাল ৫টায় আগারগাঁও এলাকার বাংলা ব্লকেড উঠিয়ে নেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা। এর আগে এদিন বেলা ১১টায় রাজধানীর অন্যান্য স্থানের মতো আগারগাঁও মোড়ে অবরোধ করেন আন্দোলনকারীরা। এ সময় তারা সব ধরনের যান চলাচল বন্ধ করে দেন। আগারগাঁওয়ে আন্দোলনকারীদের পক্ষ থেকে জানানো হয়, পরবর্তী কর্মসূচি অনুযায়ী তারা আবারও আন্দোলনে নামবেন। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত তাদের আন্দোলন চলবে।
প্রায় একই সময়ে মৎস্য ভবন ছেড়ে যান আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রার্থীরা।মৎস্য ভবন থেকে শাহবাগের দিকে রওনা হন তারা।
কাওরানবাজারে অবস্থান করা আন্দোলনকারীরাও রওনা দিয়েছেন শাহবাগের দিকে।
সকাল সাড়ে ১০টা থেকে সায়েন্সল্যাবে রাস্তায় অবস্থান নিয়ে অবরোধ পালন করেন সাত কলেজের আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।সারা দিন অবরোধ পালন শেষে সন্ধ্যা ৬টা ১৫ মিনিটের দিকে নীলক্ষেত মোড়ে গিয়ে অবরোধ তুলে নেন তারা।এ সময় ওই এলাকায় যান চলাচল বন্ধ ছিল।
আন্দোলনে ঢাকা কলেজ শাখার সমন্বয়ক নাজমুল হাসান বলেন,আমরা চাই কোটার সংস্করণ করা হোক।সংবিধানে উল্লেখিত পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ কোটা রাখা যেতে পারে। কিন্তু আপিল বিভাগ যে রায় দিয়েছে সেটি আমরা প্রত্যাখ্যান করছি৷আমরা বারবার রাস্তায় নামতে চাই না।’
নাজমুল বলেন,আমরা আজকের মতো কর্মসূচি শেষ করছি। রাতে নিজেরা এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সমন্বয় করে আগামীকালের কর্মসূচি ঘোষণা করা হবে। আমরা চাই সরকার শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে দৃশ্যমান কোনও পদক্ষেপ নিক।আমরা কোটা সমস্যার স্থায়ী সমাধান চাই।প্রধানমন্ত্রীর কাছে আহ্বান জানাই আমাদের দাবি মেনে নিন।তবেই আমরা পড়ার টেবিলে ফিরে যাবো।যতদিন পর্যন্ত দাবি মানা হবে না ততদিন আমরা রাজপথে থাকবো।’
কাওরানবাজারে বাংলা ব্লকেডে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থী বলেন,আমরা কখনও চাইনি কোটা বাতিল হোক।আমরা চেয়েছি কোটা সংস্কার হোক।যারা অনগ্রসর তাদের জন্য কোটা অবশ্যই রাখতে হবে,আর সেটি ৫ শতাংশ।কোর্টে আজ যে রায় হয়েছে সেটিকে আমরা সম্মান করি।কিন্তু আমাদের দাবি হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর এবং নির্বাহী বিভাগের কাছে।’
এর আগে কাওরানবাজারে আরেক শিক্ষার্থী শাখাওয়াত রুদ্র বলেন,আমরা আজকের মতো অবস্থান ছেড়ে দিচ্ছি।আমাদের আশপাশে আরও যারা অবস্থান করছেন তাদের নিয়ে শাহবাগে জড়ো হবো।সেখানে পরবর্তী যে কর্মসূচির ঘোষণা আসবে সেভাবেই আমরা মাঠে থাকবো।’
এদিকে কোটা বাতিলের দাবিতে বুধবার তৃতীয় দিনের মতো ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে সকাল থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টসহ বেশ কিছু রেললাইন অবরোধ করে রাখায় গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে যানবাহন চলাচল বন্ধ হয়ে পড়ে। এর প্রভাব পড়েছে প্রতিটি পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে।
দীর্ঘ সময় আটকে থেকে হাজার হাজার যানবাহন একসঙ্গে মুভ করায় সড়কে বাড়ছে গাড়ির চাপ।নিয়ন্ত্রণে হিমশিম খাচ্ছে দায়িত্বরত ট্রাফিক সদস্যরা।
তেজগাঁও বিভাগের সোনারগাঁও ট্রাফিক জোনের পরিদর্শক কবির হোসেন বলেন,অনেক যানবাহন সড়কে।চাপ কমতে সময় লাগবে।আমরা সবাই কাজ করছি যেন কোনও বিশৃঙ্খলা না হয়।রাত ১০টার আগে স্বাভাবিক হওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
উল্লেখ্য,সরকারি চাকরির প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেওয়া রায়ের ওপর আজ এক মাসের স্থিতাবস্থা জারি করেছেন আপিল বিভাগ।তবে আপিল বিভাগের এই আদেশ প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন কোটাবিরোধীরা।
আন্দোলনকারীরা বলছেন,আমাদের দাবি যতক্ষণ আদায় না হবে ততক্ষণ বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে রাজপথে অবস্থান করবো।তারা আরও বলছেন,পরবর্তী কর্মসূচি কী হবে তা নির্ধারণ করার জন্য সবাই শাহবাগে জড়ো হচ্ছেন।এজন্য বিভিন্ন পয়েন্ট আন্দোলনকারীদের একত্রিত হতে দেখা গেছে।

















