অপরাধ-আইন-আদালত

দেশের ৬৪ জেলা বারের সভাপতি ও সম্পাদককে ডাকা হয়েছে-বাংলাদেশ বার কাউন্সিল

  প্রতিনিধি ২৪ জানুয়ারি ২০২৩ , ১:১৪:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।অবশেষে ঘুম ভাঙল বাংলাদেশ বার কাউন্সিলের।জেলা জজ আদালতে বিচারক ও আইনজীদের মধ্যে একের পর এক অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটার পরিপ্রেক্ষিতে এবার বৈঠক ডেকেছে আইনজীবীদের নিয়ন্ত্রক এই সংস্থাটি। বৈঠকে দেশের ৬৪ জেলা বারের সভাপতি ও সম্পাদককে ডাকা হয়েছে।২৮ জানুয়ারি ঐ বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ঘটনায় আদালত অবমাননা মামলার শুনানিকালে বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চকে গতকাল সোমবার এই তথ্য জানান আইনজীবী নেতারা।

একই জেলার আদালত অবমাননার আরেক মামলায় হাইকোর্ট এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনার পুনরাবৃত্তি রোধ ও আদালতের বিচারকাজের স্বাভাবিক পরিবেশ বজায় রাখার লক্ষ্যে বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান এবং সদস্য,সুপ্রিম কোর্ট আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছিলেন। এই আহ্বানের বিষয়টি অনুধাবন করেই সম্প্রতি বার কাউন্সিলের চেয়ারম্যান ও রাষ্ট্রের শীর্ষ আইন কর্মকর্তা অ্যাটর্নি জেনারেল অ্যাডভোকেট এ এম আমিন উদ্দিনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত সভায় জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি ও সম্পাদকদের সঙ্গে বৈঠক করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বার কাউন্সিলের সদস্য সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী অ্যাডভোকেট সাঈদ আহমেদ রাজা বলেন,বার কাউন্সিলের আইনানুযায়ী এক্সটেনডেড সভা আহবান করতে হয়।

সেই সভায় আইনজীবী পেশার মান উন্নয়ন,বেনোভোলেন্ট ফান্ডসহ নানা বিষয়ে আলোচনা হয়।কিন্তু করোনার কারণে গত কয়েক বছর এই বৈঠক ডাকা হয়নি।এখন পুনরায় এই বৈঠক করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন,বৈঠকে সম্প্রতি দেশের বিভিন্ন আদালতে বার ও বেঞ্চের মধ্যে কিছু অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেছে।সেই ঘটনাগুলো নিয়ে আলোচনা হবে।মামলা পরিচালনা করতে গিয়ে আইনজীবীরা আদালতে কী ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন—সেই বিষয়ে জেলা বারের নেতাদের বক্তব্য শুনব।সেই বক্তব্যের ভিত্তিতে আমরা আমাদের মতামত তুলে ধরব।যাতে বার ও বেঞ্চের মধ্যে একটা সুসম্পর্ক বজায় থাকে।

বিচারাঙ্গনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা বলছেন,বার ও বেঞ্চ একে অপরের পরিপূরক।একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।তাই বার ও বেঞ্চের মর্যাদা রক্ষায় সবাইকে সহনশীলতার পরিচয় দিতে হবে।যাতে কোনো ধরনের ভুল বার্তা বিচারপ্রার্থী জনগণের কাছে না যায়।

বিগত কয়েক মাসে দেশের পিরোজপুর,খুলনা,মানিকগঞ্জ ও ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলা আদালতে বিচারকদের সঙ্গে আইনজীবীদের অসৌজন্যমূলক আচরণের ঘটনা ঘটেছে।এসব ঘটনায় ভুক্তভোগী বিচারকরা প্রধান বিচারপতির কাছে নাালিশ করেন।

এসব নালিশ আবেদন নিষ্পত্তির জন্য হাইকোর্টে পাঠান প্রধান বিচারপতি।হাইকোর্ট অভিযুক্ত আইনজীবীদের তলবের পাশাপাশি আদালত অবমাননার রুল জারি করে।রুলের শুনানিতে হাইকোর্ট অভিযুক্ত আইনজীবীদের বারবার এই বার্তা দিয়েছেন যে,বিচার বিভাগের মর্যাদা রক্ষায় কঠোর আদেশ দিতে পিছপা হবে না আদালত।অভিযুক্ত আইনজীবীদের পক্ষের কৌঁসুলিরা বলেছেন,আইনজীবীদের সঙ্গে নিম্ন আদালতের বিচারকরা দুর্ব্যবহার করেন।এ ধরনের ঘটনায় আইনজীবীদের তলবের পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট বিচারককেও জবাবদিহিতার আওতায় আনা উচিত।

পিরোজপুর ও খুলনার ঘটনায় অভিযুক্ত আইনজীবীরা নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়ে পার পেয়েছেন।ওই দুটি মামলার শুনানিতে উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেছে,দিনদিন যেন এ ধরনের ঘটনা বাড়ছে।আমাদের সবাইকে মনে রাখতে হবে আদালত পেশিশক্তি প্রদর্শনের জায়গা নয়।আইনজীবীদের অসম্মানজনক আচরণের কারণে যদি আদালত ও বিচার বিভাগের প্রতি জনগণের আস্থা উঠে যায় তখন কেউ বাঁচতে পারবেন না।

বার কাউন্সিলের সাবেক সদস্য ও সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট জেড আই খান পান্না বলেন,কী কারণে বার ও বেঞ্চের মধ্যে এ ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা বারবার ঘটছে—সেটা আগে বের করা দরকার।মূল কারণ চিহ্নিত করা না গেলে এ ধরনের ঘটনা রোধ করা সম্ভব হবে না।

তিনি বলেন,আমি যখন বার কাউন্সিলের সদস্য ছিলাম তখন এ ধরনের ঘটনা নিরসনে সমষ্টিগতভাবে সমাধানের উদ্যোগ নিয়েছি।যাতে পরিস্থিতির অবনতি না হয়।আমাদের নেওয়া উদ্যোগ তখন ফলপ্রসূ হয়েছিল।

‘কমলাপুরের কুলিরাও তো এ ধরনের অশ্লীল ভাষা প্রয়োগ করেন না’

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা জজ শারমিন নিগারের বিরুদ্ধে অশ্লীল ও কুরুচিপূর্ণ স্লোগান দেওয়ার ঘটনাকে অশ্লীল বলে মন্তব্য করেছে হাইকোর্ট।আদালত বলেছে,এ ধরনের স্লোগান তো কমলাপুরের কুলিরাও ব্যবহার করেন না।এগুলো কি কোনো ভাষা।শ্রমিকরাও তো এ ধরনের ভাষা ব্যবহার করেন না।

বিচারপতি জে বি এম হাসান ও বিচারপতি রাজিক-আল-জলিলের দ্বৈত হাইকোর্ট বেঞ্চ গতকাল এ মন্তব্য করে।

এর আগে তলব আদেশে হাইকোর্টে হাজির হন জেলা আইনজীবী সমিতির সাধারণ সম্পাদকসহ ২১ আইনজীবী।

তাদের পক্ষে শুনানিতে সুপ্রিম কোর্ট বার সভাপতি অ্যাডভোকেট মোমতাজউদ্দিন ফকির বলেন,তিন আইনজীবীর আদালত অবমাননার রুলের সঙ্গে এদের রুলের বিষয়টিও শুনানির জন্য রাখা হোক।আদালত বলেন,দুটি ঘটনা তো এক নয়।এটি তো অশ্লীল।আর আগেরটি ছিল দাম্ভিকতা ও বেয়াদবি।কালো পোশাকধারী কোনো ব্যক্তি এমন ভাষা ব্যবহার করতে পারেন?এটা তো আদালত অবমাননাকর।

সুপ্রিম কোর্ট বার সম্পাদক অ্যাডভোকেট আবদুন নূর দুলাল বলেন,আমাদের সময় দিন।সেখানে প্রকৃত ঘটনা কী ঘটেছে এবং সেটা কতটা অশ্লীল—তা-ও খতিয়ে দেখা দরকার। আদালত বলেন,গত দিনও সময় দিয়েছি।আজকেও সময় দিচ্ছি।

কিন্তু আমরা এ ধরনের ঘটনায় খুবই উদ্বিগ্ন।বার সভাপতি বলেন,বিচার বিভাগ আমাদের সবার।আদালত বলেন,যদি তা-ই হয়,তাহলে যে গালি দিয়েছে সেটা আপনাদের গায়েও লাগে।বার সভাপতি বলেন, ব্রাহ্মণবাড়িয়া আসলে কী ঘটেছে—সেটা আমরা দেখব।আদালত বলেন,সংবিধান অনুযায়ী আমরা অধস্তন আদালতের অভিভাবক।আমাদের দায়িত্ব আছে।বার সম্পাদক বলেন,আমাদের অভিভাবকও সুপ্রিম কোর্ট।অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন বলেন,উনারা সময় চেয়েছেন,সময়টা দিন।বৈঠক আহ্বান করেছে বার কাউন্সিল। সেখানে আলোচনা হবে।দরকার হলে আমরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া যাব।আদালত বলেন,আমরা ইচ্ছা করলে আজীবনের জন্য অভিযুক্ত আইনজীবীদের সনদ বাতিল করে দিতে পারি। আমরা যেতে চাইলে অনেক দূর যেতে পারি।আদালতের মনোভাবের বিষয়টি উনাদের জানা দরকার।এরপরই ১৯ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত সময় দিয়ে শুনানি মুলতুবির আদেশ দেয় হাইকোর্ট।

আরও খবর

Sponsered content