আন্তর্জাতিক

তুরস্ক থেকে ড্রোন কিনছে-মালদ্বীপ

  প্রতিনিধি ২০ জানুয়ারি ২০২৪ , ৩:১৪:৫৮ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।দেশের সমুদ্রসীমায় নজরদারি চালাতে তুরস্ক থেকে ড্রোন কিনছে মালদ্বীপ।সম্প্রতি সে জন্য তুরস্কের সঙ্গে তারা ৩ কোটি ৭০ লাখ ডলারের চুক্তি করেছে।সামরিক সেই ড্রোন অস্ত্রবাহী কি না, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি।মালদ্বীপের সংবাদপত্র ‘আধাধু’ এই খবর জানিয়ে বলেছে,ওই অর্থ ব্যয়ে সম্ভবত তিনটি ড্রোন কেনা হচ্ছে।

 

মালদ্বীপের সমুদ্রসীমায় নজরদারির কাজ সে দেশের বাহিনীর সঙ্গে এখন যৌথভাবে চালায় ভারত।সে দেশের সঙ্গে চুক্তির ভিত্তিতে এই ব্যবস্থা।ভারত মহাসাগরের প্রতিবেশী ওই রাষ্ট্রকে সে জন্য ভারত একটি ‘ডরনিয়ার বিমান’ ও দুটি ‘ধ্রুব অ্যাডভান্সড লাইট হেলিকপ্টার’ উপহার দিয়েছিল।

বিমানটি নজরদারিতে ব্যবহৃত হলেও হেলিকপ্টারের মাধ্যমে প্রয়োজনীয় সরবরাহ ও রোগী পরিবহনের কাজ হয়।হেলিকপ্টারের মাধ্যমে এ পর্যন্ত অন্তত ৫০০ রোগীকে প্রত্যন্ত দ্বীপ থেকে রাজধানী মালে এনে চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

বিমান ও হেলিকপ্টার রক্ষণাবেক্ষণের জন্য মালদ্বীপে ভারতীয় বাহিনীর ৮৮ সদস্য রয়েছেন।তাঁদের ভারতে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে নবনির্বাচিত মালদ্বীপ সরকার। ১৫ মার্চ সেই সময়সীমা ধার্য করা হয়েছে।এ নিয়ে দুই দেশের কূটনৈতিক টানাপোড়েনের মধ্যেই তুরস্ক থেকে সামরিক ড্রোন কেনার চুক্তির বিষয়টি প্রকাশ হলো।

ধারণা করা হচ্ছে,সমুদ্রসীমায় নজরদারির যে কাজ এত দিন ভারতীয় সেনাবাহিনীর সদস্যরা করে এসেছেন, নতুন সরকার সেই কাজ এখন থেকে নিজেরাই করবে।

‘আধাধু’র খবর অনুযায়ী,দেশের অর্থ মন্ত্রণালয় ইতিমধ্যেই মোট অর্থের কিছুটা ‘মালদ্বীপ ন্যাশনাল ডিফেন্স ফোর্স’কে (এমএনডিএফ) দেওয়ার অনুমোদন দিয়েছে।তুরস্কের সংস্থাকে এক বছরের মধ্যে কিস্তিতে ৩৭ মিলিয়ন ডলার পরিশোধ করতে হবে।

মালদ্বীপের চীনপন্থী হিসেবে পরিচিত প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ মুইজ্জু ‘আউট ইন্ডিয়া’ স্লোগান তুলে নির্বাচনে জয়ী হয়ে ক্ষমতায় এসেছেন।তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন ভারতপন্থী হিসেবে পরিচিত নেতা ইব্রাহিম মোহাম্মদ সোলিহ্, যাঁর নীতি ছিল ‘ইন্ডিয়া ফার্স্ট’।নির্বাচিত হওয়ার পরই তিনি জানিয়ে দেন,দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষার স্বার্থে সে দেশে অবস্থানরত ভারতীয় সেনাদের দেশে ফেরত পাঠানো হবে।

১৪ জানুয়ারি ভারত ও মালদ্বীপের মধ্যে অনুষ্ঠিত উচ্চপদস্থ কমিটির প্রথম বৈঠকের পর মালদ্বীপ সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে সেনাদের ফেরত পাঠানোর কথা জানিয়েও দেওয়া হয়। ১৫ মার্চ সেই ‘সময়সীমা’।শুধু এই সিদ্ধান্তই নয়,সে দশের সমুদ্রসীমায় সমুদ্র সম্পদ গবেষণার জন্য ভারতের সঙ্গে যে চুক্তি হয়েছিল,নতুন সরকার তা নবায়নেও সম্মত হয়নি।আগামী জুনে সেই চুক্তির মেয়াদ শেষ হচ্ছে।

ভারতের সঙ্গে মালদ্বীপ যে ক্রমেই দূরত্ব সৃষ্টি করছে, তার আরও একটি প্রমাণ প্রেসিডেন্ট মুইজ্জুর এখনো ভারত সফরে না আসা।নির্বাচিত হওয়ার পর সে দেশের প্রেসিডেন্টরা প্রথম যে দেশ সফর করেছেন,সেটি হচ্ছে ভারত।এত দিন ধরে চলে আসা এই রীতি এবারই প্রথম ভাঙলেন মুইজ্জু।তিনি প্রথম বিদেশ সফরে যান তুরস্কে। দ্বিতীয় দেশ চীন।দুই দেশের সঙ্গেই ভারতের কূটনৈতিক সম্পর্ক অস্বস্তিকর।

তুরস্ক সফরে সে দেশের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক বৈঠকের পরই ড্রোন কেনাবেচার চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।তুরস্ক আন্তর্জাতিক স্তরে অন্যতম প্রধান ড্রোন উৎপাদন ও সরবরাহকারী দেশ।সে দেশের প্রধান দুই ড্রোন প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের একটির মালিক প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের জামাতা।অন্যটি সে দেশের সামরিক সংস্থা ‘টারকিস অ্যারোস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ’।

ভারতের সঙ্গে দূরত্ব প্রেসিডেন্ট মুইজ্জু যে ক্রমেই বাড়াতে আগ্রহী,তুরস্ক ও চীন সফর চলাকালে তিনি নিজেই তার ইঙ্গিত দিয়েছেন।তাঁর দেশের ভারত নির্ভরতা কাটানোর কথা সরাসরি জানিয়ে বলেছেন, ‘আমাদের দ্বীপগুলো ছোট হলেও দেশ হিসেবে আমরা বিশাল।আমাদের দেশের এক্সক্লুসিভ ইকোনমিক জোন ৯ লাখ বর্গকিলোমিটার ধরে বিস্তৃত।ভারত মহাসাগর কোনো দেশের নিজস্ব সম্পত্তি নয়।এই দীর্ঘ সমুদ্রসীমায় নজরদারি চালানোর মতো শক্তি ও ক্ষমতা অর্জনের চেষ্টা আমরা শুরু করেছি।আশা করি শিগগিরই তা ফলপ্রসূ হবে।’

মালদ্বীপের সঙ্গে দ্রুত সম্পর্কহানি ভারতকে অস্বস্তিতে ফেলে দিয়েছে।সেনা অপসারণের ১৫ মার্চের ‘সময়সীমা’র বিষয়টি ভারত এখনো কোনো বিবৃতিতে সরাসরি উল্লেখ করেনি।যদিও বলেছে,বিমান পরিষেবা নিয়ে দুই দেশের মধ্যে আলোচনা চলছে।এখন এটা মোটামুটি নিশ্চিত,নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যেই ভারতীয় প্রতিরক্ষা বাহিনীর সদস্যদের দেশে ফিরে আসতে হবে।

অবশ্য ভারত চেষ্টা করছে,সে দেশকে উপহার দেওয়া একটি বিমান ও দুটি হেলিকপ্টারের রক্ষণাবেক্ষণের জন্য যদি সামান্য কয়েকজন সামরিক সদস্যকে রাখা যায় সেই বোঝাপড়ায় আসতে।যদিও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একাংশের ধারণা,সেই সম্ভাবনা খুবই কম।

সম্প্রতি নাগপুরে এক অনুষ্ঠানে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শঙ্করকে ভারত-মালদ্বীপ সম্পর্কহানি নিয়ে প্রশ্ন করা হয়েছিল।জবাবে তিনি বলেছিলেন,দুই দেশের সম্পর্কের প্রবাহ কখনো সমান থাকে না।ওঠাপড়া থাকে। এটাই রাজনীতি। ভারত সব সময় চেষ্টা করে,সেই টানাপোড়েন সত্ত্বেও সম্পর্কের গতি ধরে রাখতে।সে জন্য বিভিন্ন উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে অংশ গ্রহণ করা হয়। অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়।মানুষের সঙ্গে মানুষের সম্পর্ক ধরে রাখতে হয়।ভারত সেই চেষ্টা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করে।

মালদ্বীপের সঙ্গে সাম্প্রতিক সম্পর্কহানির পর ভারতীয় সমাজের একটা বড় ও প্রভাবশালী অংশ ইতিমধেই ‘মালদ্বীপ বর্জন’ প্রচার শুরু করেছে।ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির লাক্ষা দ্বীপ সফরের পর সে দেশের তিন মন্ত্রী বিরূপ মন্তব্য করার পর থেকে ভারতীয় পর্যটকদের মধ্যে সে দেশ সফর বাতিলে ধুম পড়ে গেছে।বিমান সংস্থাগুলো বুকিং বাতিল করেছে।হোটেল ব্যবসায়ীরাও। পর্যটন সংস্থাগুলোও মালদ্বীপ না যেতে ভারতীয় পর্যটকদের উৎসাহিত করছে।

 

বিজেপি সরকার এখনো এই আচরণ বন্ধে কোনো ব্যবস্থা নেয়নি।পররাষ্ট্রমন্ত্রী কঠিন সময়েও মানুষের সঙ্গে মানুষের যোগাযোগ রক্ষার প্রয়োজনীয়তার কথা বলেছেন।বর্জনের এই ডাক তার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।

আরও খবর

Sponsered content