সারাদেশ

ড্রেজারে থাকা আট শ্রমিক মারা সাঁতার কাটতে না জেনেও বাঁচলো সালাম!!!

  প্রতিনিধি ২৬ অক্টোবর ২০২২ , ৪:৫০:১০ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে চট্টগ্রামের মিরসরাই উপকূলের সন্দ্বীপ চ্যানেলে যে বালু তোলার ড্রেজারটি ডুবে গেছে, সেখান থেকে ওই দিন এক শ্রমিক বেঁচে ফিরেছিলেন।আবদুস সালাম (৬০) নামের ওই ব্যক্তি ড্রেজারটিতে রান্নার কাজ করতেন। ড্রেজারে থাকা আট শ্রমিক ওই দিন মারা যান। আবদুস সালাম শুনিয়েছেন তাঁর বেঁচে ফেরার গল্প।

সিত্রাংয়ের প্রভাবে গত সোমবার রাতে মিরসরাই উপজেলার সাহেরখালী ইউনিয়নের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরের ৩ নম্বর জেটি এলাকার পশ্চিমে এ ড্রেজারডুবির ঘটনা ঘটে।

আবদুস সালাম বলেন, সৈকত-২ নামের যে ড্রেজারে তিনি রান্নার কাজ করেন, সেটি ছিল নতুন। তাঁরা মিরসরাইয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরে বেপজার এক ঠিকাদারের হয়ে সন্দ্বীপ চ্যানেলে বালু তোলার কাজ করছিলেন। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে সোমবার রাত আটটার পর থেকে সমুদ্রে বাতাস আর ঢেউ বাড়ছিল। ড্রেজার নতুন ও শক্তপোক্ত হওয়ায় মিস্ত্রিসহ সবাই ড্রেজার ছেড়ে যেতে চাচ্ছিল না। তীব্র বাতাসের সঙ্গে সমুদ্রে বড় বড় ঢেউ শুরু হলে পাশের অন্য ড্রেজারের লোকজন নৌকা নিয়ে এসে তাঁদের কিনারে যেতে অনুরোধ করেন। আবদুস সালাম সাঁতার না জানায় ড্রেজারের মিস্ত্রি শাহীন মোল্লা তাঁকে নৌকায় তুলে দিয়ে বাকি আটজন ড্রেজারে থেকে যান। কূলে ফেরার কিছু সময় পর আবদুস সালাম জানতে পারেন, তাঁদের ড্রেজার উল্টে ডুবে গেছে। ডুবে যাওয়া ড্রেজারে আটকা পড়ে সবাই মারা গেছেন। সাঁতার না জানায় নৌকায় করে কিনারে চলে আসায় শুধু বেঁচে ফিরেছেন তিনি।

আবদুস সালাম সাঁতার না জানায় ড্রেজারের মিস্ত্রি শাহীন মোল্লা তাঁকে নৌকায় তুলে দিয়ে বাকি আটজন ড্রেজারে থেকে যান।

আবদুস সালাম জানান, তাঁদের গ্রামের বাড়ি বরিশালের নলছিটি উপজেলায়। ভাইয়ের কাছে প্রতারিত হয়ে এক যুগ আগে তিনি থিতু হন নোয়াখালী জেলার মজুচৌধুরী ঘাট এলাকায়। অল্প দামে জমি পেয়ে দুই মেয়ে, এক ছেলে আর স্ত্রীকে নিয়ে সেখানেই স্থায়ী হন। দুই যুগ ধরে বালু তোলার ড্রেজারে রান্নার কাজ করেন সালাম। ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের রাতে ড্রেজার ডুবে না–ফেরার দেশে চলে যান তাঁর আট সহকর্মী। সাঁতার না জানায় ওই সহকর্মীরাই তাঁকে নৌকায় তুলে দিয়েছিলেন বলে বেঁচে ফিরেছেন তিনি।

চোখের কোণে জল নিয়ে আবদুস সালাম বলেন, ‘দীর্ঘ সময় যাদের রান্না করে খাইয়েছি, তারা কেউ আর বেঁচে নেই। আর কখনো তাদের রান্না করে খাওয়াতে পারব না, এটি ভাবলে বুকটা হু হু করে ওঠে।’

আরও খবর

Sponsered content