অপরাধ-আইন-আদালত

ডেসকো’র গডফাদার খ্যাত আরিফুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তদন্ত কমিটি গঠন

  প্রতিনিধি ১৯ নভেম্বর ২০২২ , ২:৪০:০৮ প্রিন্ট সংস্করণ

নিজস্ব প্রতিবেদক।।অনিয়ম দুর্নীতি আর লুটপাটের আখড়ায় পরিণত হয়েছে দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানি গুলোর মধ্যে একসময়ের সুনামধারী প্রতিষ্ঠান ডেসকো’র বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ।সংযোগ পেতে অধিকাংশ গ্রাহককে গুনতে হচ্ছে লাখ থেকে কোটি টাকা। এ নিয়ে চলছে আন্ডার হ্যান্ড ডিলিং আর লুটপাটের মহোৎসব।

গ্রাহকসহ ডেসকো’র টপ ম্যানেজমেন্ট পর্যন্ত জিম্মি এই সিন্ডিকেটের হাতে। এদের কথা না শুনলে হতে হয় বদলী ও অপমান, অপদস্থ।আর হাত মিলালেই হন পুরস্কৃত।এই সিন্ডিকেটের অন্যতম প্রধান হচ্ছে আরিফুল ইসলাম উপ-সহকারী প্রকৌশলী, তুরাগ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ (ডেসকো)।

আরিফুল ইসলামের দুর্নীতির বিরুদ্ধে গত ৫ই সেপ্টেম্বর বিদ্যুৎ বিভাগ, বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব বরাবর লিখিত অভিযোগ করেন মোঃ বিল্লাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি।লিখিত অভিযোগের বিষয়টি আমলে নিলে গত ১০ অক্টোবর মুহাম্মদ মামুনুর রশিদ, উপ-মহাব্যবস্থাপক (এইচ আর এম ) সাক্ষরিত অফিস আদেশে মোঃ শফিকুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক, ঢাকাস্থ গুলশান-১৩২/৩৩/১১ কেভি ভূগর্ভস্থ গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প দপ্তর কে প্রদান করে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে ২ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর দাখিলের নির্দেশ দেওয়া হয়।

লিখিত অভিযোগসূত্রে জানা যায় আরিফুল ডেসকো’র উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকুরি করলেও যখন যাকে ইচ্ছে বদলী করতে পারেন।তার রোষানলে পড়ে বদলী হতে হয়েছে উপ-সহকারী প্রকৌশলী থেকে তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী পর্যন্ত অনেককে।ডেসকো তে তিন বছর পর পর বদলী হওয়ার নিয়ম থাকলেও বদলী হয় না আরিফুল ইসলামের। উত্তরা পশ্চিম বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে আছেন দীর্ঘ ১২ বছর।এ যেন এক দুর্বোধ্য প্রাচীর।

বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ বৃদ্ধির পরে নামে মাত্র বদলী হলেও পোস্টিং নিয়েছেন একই এলাকাতে। উত্তরা পশ্চিম বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগের ৫০ ভাগ এলাকা নিয়ে গঠিত হয়েছে তুরাগ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগ। ক্ষমতার দাপটে পোস্টিং নিয়েছেন তুরাগ বিক্রয় ও বিতরণ বিভাগে। নিজের পছন্দ অনুযায়ী কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বদলী করে আনেন তিনি।তার কথা শুনতে অস্বীকৃতি জানালে বদলী করান অন্যস্থ।

উত্তরা ১০,১১,১২,১৩ এবং ১৪ নং সেক্টরের শতাধিক বানিজ্যিক ভবনে রাজউকের অনুমোদন ছাড়াই তথ্য গোপন করে নিয়ম বহির্ভূত ভাবে আবাসিক ট্যারিফ এ সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন কোটি কোটি টাকা।

সম্প্রতি ১১ নং সেক্টরের শাহ মখদুম রোডের ৪ নং বাড়ির তথ্য গোপন করে বানিজ্যিক ভবনে আবাসিক সংযোগ দিয়ে হাতিয়ে নিয়েছেন ২০ লাখ টাকা।

হিসাব নং- ৪১০৯২৭২৩-৩২, মেইন মিটার হিসাব নং – ৪১০৯২৭৩২ এবং মেইন মিটার নং DHKL 7913 । তার কাছে জিম্মি ওয়্যারিং ঠিকাদার সহ সকল গ্রাহক।ফাইল ভিজিট করেন দালালদের সাথে নিয়ে অথবা ওয়্যারিং ঠিকাদার দিয়ে।

আরিফুল ইসলাম বেশিরভাগ সময় থাকেন ঢাকার বাইরে ।ডেসকো তে কর্মরত কারো কোন ব্যবসা করার নিয়ম না থাকলেও আরিফুল ইসলামের রয়েছে সোলার ও সাব স্টেশনের ব্যবসা। তার থেকে সোলার ও সাব স্টেশন নিলেই মিলবে দ্রুত বিদ্যুৎ সংযোগ।আর না নিলেই হয়রানির শিকার হতে হয়। তার কোম্পানির সোলার ভিজিট হয় না। ৫০% সোলার লাগিয়ে গ্রাহকদের থেকে টাকা নেন ১০০% এর।

উপ-সহকারী প্রকৌশলী পদে চাকুরী করলেও বিলাসী জীবন তার। বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় থাকেন নিজের ফ্ল্যাটে। এছাড়াও রয়েছে একাধিক ফ্ল্যাট।চালান দামী গাড়ি। দালালদের সাথে এবং স্বপরিবারে দেশের বাইরে ঘুরতে যান একাধিকবার।
তথ্য পাওয়া গেছে বাড়ি কিনেছেন মালয়েশিয়াতে বাড়িএছাড়াও তার নিজের ও স্ত্রীর নামে বে নামে একাধিক ব্যাংকের একাউন্টে রয়েছে কোটি কোটি টাকা।তার নিজ এলাকাতে তাকে দানবীর হিসেবে জানেন এলাকাবাসী।

ডেসকো তে উপ সহকারী প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত থেকে কোটি কোটি টাকার মালিক কিভাবে হলেন তা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে তার ডিপার্টমেন্টের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে।

তদন্ত কমিটি প্রধান মোঃ শফিকুল ইসলাম, প্রধান প্রকৌশলী, প্রকল্প পরিচালক, ঢাকাস্থ গুলশান-১৩২/৩৩/১১ কেভি ভূগর্ভস্থ গ্রীড উপকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্প দপ্তর, সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগ করে বিস্তারিত জানতে চাইলে তিনি বলেন তদন্ত চলছে, তদন্ত শেষ করতে আরো সময়ের প্রয়োজন।

অভিযুক্ত‌ উপ-সহকারী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলামের সাথে মুঠোফোনে কল দিয়ে সংবাদ কর্মী পরিচয় দিয়ে অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি মিটিংয়ে আছেন, মিটিং শেষে কল করবেন বলে জানিয়ে লাইন কেটে দেন।
পরবর্তী সময়ে একাধিক বার মুঠোফোনে কল দিলেও আরিফুল ইসলাম ফোন রিসিভ করেননি।।

আরও খবর

Sponsered content