বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সংবাদ

ডার্মা ফার্ম ইউএস মার্কেটার হিসেবে কাজ করে লিজার মাসিক আয় ৪লাখ টাকা-’

  প্রতিনিধি ২২ মে ২০২৩ , ৬:২০:৪৬ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।। পড়াশোনা, সংসার—সব কিছু সুন্দরভাবে এক হাতে সামলান তিনি।এরই ফাঁকে করেন ফ্রিল্যান্সিং। গড়ে তুলেছেন ফ্রিল্যান্সিং শেখানোর প্রতিষ্ঠান লিডিং লাইট।মাসে আয় করেন চার লাখ টাকা।ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সিনথিয়া আক্তার লিজা নিজের সফলতার গল্প শুনিয়েছেন
এইচএসসি প্রথম বর্ষে পড়ার সময়ই ফ্রিল্যান্সিং সম্পর্কে জানতে পারেন লিজা।উডেমি’ নামে একটি প্রতিষ্ঠান থেকে অনলাইন কোর্স করেন।এ ছাড়া ইউটিউবে ফ্রিল্যান্সিংসংক্রান্ত ভিডিওগুলো ভালো করে দেখতে থাকেন।তাঁর প্রথম করা কোর্সটি ছিল ডিজিটাল মার্কেটিংসংক্রান্ত।লিজা মাত্র ছয় মাসের মধ্যে ডিজিটাল মার্কেটিংয়ের কাজ রপ্ত করেন।এরপর আর তাঁকে পেছন ফিরে তাকাতে হয়নি। তাঁর বাবা একজন ক্ষুদ্র্র ব্যবসায়ী।মেয়ের আগ্রহ দেখে কম্পিউটার কিনে দেন।

তাঁর প্রথম কাজ ছিল মাত্র পাঁচ ডলারের।ক্লায়েন্ট যুক্তরাষ্ট্রের। সাত দিনে তিনি প্রথম কাজটি শেষ করে ক্লায়েন্টকে বুঝিয়ে দেন।বিনিময়ে ক্লায়েন্ট তাঁকে পাঁচ তারকা রিভিউ দেন।লিজা জানান,প্রথম কাজেই এই রিভিউ আমাকে অনুপ্রাণিত করে।

ফ্রিল্যান্সিং কেন?
ঘরে বসে কাজ করা যায়।বাইরে যাওয়ার ঝামেলা নেই, কোনো ফিক্সড টাইমটেবিল নেই,নিজের সময়মতো কাজ করার সুবিধা আছে বিধায় তিনি ফ্রিল্যান্সিং বেছে নিয়েছেন বলে জানান লিজা।ফ্রিল্যান্সিংয়ে চাকরির মতো নির্দিষ্ট আয়ের তো নিশ্চয়তা নেই—এমন প্রশ্নের জবাবে লিজা বলেন, নির্ধারিত পরিমাণ আয়ের নিশ্চয়তা না থাকলেও দক্ষতার সঙ্গে কাজ করতে পারলে আপনার কিছু রিপিট ক্লায়েন্ট হয়ে যাবে,তাঁরাই আপনাকে বারবার কাজ দেবেন।

যত চ্যালেঞ্জ:-
আর দশটা কাজের মতো ফ্রিল্যান্সিংয়েও আছে নানা রকম চ্যালেঞ্জ।লিজা নিজের অভিজ্ঞতার আলোকে বলেন,সঠিক গাইডলাইন,পরিবার থেকে যথাযথ সমর্থন না পাওয়া, যথাযথ ইংরেজি না জানা—এগুলোই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।কিভাবে নতুনরা এই চ্যালেঞ্জগুলো সফলভাবে ফেস করবে?লিজা বলেন,আসলে এটা নিজের ওপরই নির্ভর করবে।প্রথমত, একটা সঠিক গাইডলাইনের জন্য তাদের ভালোভাবে যাচাই-বাছাই করে কাজে নামতে হবে।দ্বিতীয়ত, ফ্রিল্যান্সিংয়ের ব্যাপার যেহেতু আমাদের অভিভাবকদের কাছে এখনো পরিষ্কার না, তাই তাঁদের বোঝাতে হবে।

লাখপতি লিজা:-
শুরু করার বছর তিনেকের মধ্যেই লিজার আয় লাখ টাকা ছাড়িয়ে যায়।সর্বনিম্ন দুই লাখ,সর্বোচ্চ মাসে চার লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি।গত মাসেই তাঁর আয় ছিল সাড়ে তিন হাজার ডলার।লিজা বলেন,আসলে আয় নির্ভর করে কাজের ওপর। কাজ বেশি করতে পারলে আয় বেশি হয়। জানুয়ারি ২০২১ সালে তিনি খোলেন ‘কিছু করতে চাই’।

কাজের ফিরিস্তি:-
২০১৯ সাল থেকে লিজা কাজ করেন ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে।তাঁর বেশির ভাগ ক্লায়েন্টই যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,জার্মানি, ফ্রান্স,অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশের।তাঁদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রমোশন,সোশ্যাল মিডিয়া ম্যানেজার হিসেবে তাঁদের সাইটগুলোর অ্যাড ক্রিয়েট করাই লিজার কাজ।বেশির ভাগ ক্লায়েন্টের সঙ্গে তিনি মাসিক চুক্তিতে কাজ করেন।বর্তমানে তিনি ‘ডার্মা ফার্ম ইউএস’ নামের একটি বিউটি কম্পানিতে তাদের মার্কেটার হিসেবে কাজ করছেন।এ ছাড়া মার্কেটপ্লেসে রেগুলার বিভিন্ন বায়ারের সঙ্গে তাঁর কাজ রয়েছে।

লিজার নিজস্ব প্রতিষ্ঠানের নাম ‘লিডিং লাইট’। তিনি শুধু মেয়েদের প্রশিক্ষণ দেন।ডিজিটাল মার্কেটিং নিয়ে তাঁর রয়েছে তিন মাস মেয়াদের কোর্স।কোর্স ফি পাঁচ হাজার টাকা।গুগল মিট বা জুমের মাধ্যমে সপ্তাহে তিন দিন ক্লাস নেওয়া হয়। শাকিলা ইসলাম তাঁর শিক্ষার্থীদের মধ্যে একজন।যিনি গত মাসে আয় করেছেন এক লাখ ৯৮ হাজার টাকা। ফারজানা কবীরের এক মাসে আয় ৮০ হাজার টাকা।তিনিও লিজার কাছে কাজ শিখেছেন।

মোবাইলে বাজিমাত:-
ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার ছাড়াও ফ্রিল্যান্সিং হয় নাকি? এমনটাই বেশির ভাগ মানুষের ধারণা।লিজা এমন ধারণার বাইরে কিছু করে দেখিয়েছেন।তিনি মোবাইল দিয়ে মেয়েদের কাজ শেখান।লিজা বলেন, আমার আইটি সেন্টারে শুধু মোবাইল দিয়ে মেয়েদের কাজ শিখাচ্ছি।ফ্রিল্যান্সিং মানে এখনো সেই গ্রাফিকস ডিজাইন,ওয়েব ডিজাইন নয়। ফ্রিল্যান্সিংয়ের অনেক শাখা-প্রশাখা আছে,যেমন—ডিজিটাল মার্কেটিং,রাইটিং অ্যান্ড ট্রান্সলেশন,ডাটা অ্যান্ট্রি—যেসব কাজের প্রায় ৮০ শতাংশ শুধু ফোন থেকেই করা যায়।আর আমার মেইন টার্গেট হলো, মেয়েরা যেন ফোন থেকে কাজ করে নিজের টাকায় ল্যাপটপ কিনতে পারে।’

লিজা আরো জানান,মোবাইল থেকে ফেসবুক মার্কেটিং অ্যান্ড অ্যাডভারটাইজিং,ইনস্টাগ্রাম মার্কেটিং অ্যান্ড অ্যাডভারটাইজিং, টুইটার,লিংকডিন,পিন্টারেস্ট, ইউটিউব মার্কেটিং অ্যান্ড অ্যাডভারটাইজিংয়ের সব কাজ করা যায়।খুব ভালো পরিমাণ আয় করাও সম্ভব।

লাখপতি হওয়ার সহজ উপায়:-
ধৈর্য আর কঠোর পরিশ্রম করতে হবে।বিশেষ করে একজন নারী যদি লাখপতি হতে চান তাঁকে সবচেয়ে বেশি ধৈর্য ধরতে হবে।কাজ শেখার পাশাপাশি চর্চায় অবহেলা করা যাবে না। শুরুতে হয়তো পাঁচ ডলার দিয়ে হতে পারে।তবে লেগে থাকলে এই পাঁচ ডলার থেকে ১০০ ডলার হতে সময় লাগবে না। মার্কেটপ্লেসে উত্থান-পতন হতেই পারে।তাই বলে কখনোই হাল ছেড়ে দেওয়া যাবে না।লিজার মতে,অবশ্যই সব ধরনের ক্লায়েন্টকে ভালোভাবে হ্যান্ডল করার যোগ্যতা থাকতে হবে।

প্রতারিত হওয়া থেকে যেভাবে বাঁচবেন:-
ব্যাঙের ছাতার মতো ফ্রিল্যান্সিং শেখার প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে। এক মাসেই লাখপতি,ওমুক কোর্স করলে লাখ লাখ টাকা আয়। এমন চটকদার বিজ্ঞাপনের ছড়াছড়ি। তুনরা যেন এসব বিজ্ঞাপনের মুখরোচক ভাষায় প্রতারিত না হন,সে উপায় লিজা বাতলে দিলেন।

তিনি বলেন, নতুন যাঁরা ফ্রিল্যান্সিং করতে আসবেন তাঁদের জন্য আমার একটাই কথা,তাঁরা যেন আগে ফ্রিল্যান্সিং কী, কিভাবে করতে হয়,ফ্রিল্যান্সিংয়ের যে ক্যাটাগরিগুলো আছে সেগুলো সম্পর্কে ইউটিউব এবং গুগল থেকে বিস্তারিত জেনে নেন। যদি কেউ এই বিষয়গুলো ভালোভাবে জেনে নেন, তাহলে প্রতারিত হওয়ার সুযোগ কম।

পড়াশোনা, সংসার, ফ্রিল্যান্সিং:-
লিজা একজন শিক্ষার্থী,স্ত্রী এবং ফ্রিল্যান্সার।সবকিছু সামলে ফ্রিল্যান্সিংয়ে তাঁর লাখ টাকা আয়।এত কিছু একসঙ্গে কিভাবে সম্ভব?লিজার মুখেই শোনা যাক,কিভাবে তিনি সব সামলাচ্ছেন। ‘পড়াশোনা,সংসার সামলে ফ্রিল্যান্সিং করা একটু কঠিন।যেহেতু আমার স্বামী খুব সাপোর্টিভ,তাই এ বিষয়ে আমাকে একেবারেই কষ্ট ভোগ করতে হয়নি।আমরা দুজন মিলেই সংসারের কাজ করি।’

নারী ফ্রিল্যান্সারদের যত ভুল:-
এ বিষয়ে লিজার মত হচ্ছে, নারী ফ্রিল্যান্সারদের একটি বিশেষ ভুলই আমি উল্লেখ করতে চাই,তা হলো অল্পতেই ধৈর্য হারিয়ে ফেলা।ধৈর্য না থাকলে এই সেক্টরে টিকে থাকা খুব মুশকিল।

ফ্রিল্যান্সিং সেক্টরে ভবিষ্যতে নিজের দেশকে উপস্থাপন করতে চান লিজা।পরিচিত হতে চান উদ্যোক্তা হিসেবে।খুব ইচ্ছা আছে, নিজের ব্যবসাকে বড় একটা ব্র্যান্ডে পরিণত করার।

আরও খবর

Sponsered content