শিক্ষা

জীবনের প্রথমবার বিসিএস দিয়েই ফারজানা প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন

  প্রতিনিধি ২১ জানুয়ারি ২০২৩ , ৪:৫৫:৩১ প্রিন্ট সংস্করণ

মাজহারুল ইসলাম।।অদম্য ইচ্ছা আর অধ্যবসায়ে তিনি এখন একজন সফল নারী।জীবনের প্রথমবার বিসিএস দিয়েই তিনি প্রশাসন ক্যাডারে সুপারিশপ্রাপ্ত হয়েছেন।তবে তার সেই বিসিএস জয়ের গল্পটা সহজ ছিল না। কঠিন সংগ্রামের মধ্যে দিয়ে যেতে হয়েছে তাকে।তিনি মাদারীপুর জেলা প্রশাসন কার্যালয়ে যোগ দিয়েছেন।

ফারজানার পৈত্রিক বাড়ি বরিশালের পিরোজপুরে।তবে বাবার চাকরিসূত্রে বেড়ে ওঠা চট্টগ্রামে।স্কুল ও কলেজ লাইফে বরাবরের মতো প্রথম সারিতে ছিলেন তিনি।নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে ২০০৫ সালে এসএসসি ও ২০০৭ সালে এইচএসসি পাশ করেন তিনি।

পরে তিনি ঢাবির সমাজবিজ্ঞান বিভাগে ভর্তি হন।তবে তার স্বপ্নগুলো বেড়ে ওঠার আগেই অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে মা-বাবার ইচ্ছায় বেসরকারি কর্মকর্তা মো: মনিরুল ইসলামের সঙ্গে বিয়ে বন্ধনে আবদ্ধ হন তিনি।এতে তার সফলতার পথে কিছুটা ছেদ পড়ে।স্বপ্নগুলো ফিকে হয়ে যেতে থাকে।তবে স্বপ্নভঙ্গের আগেই তিনি আবারও ঘুরে দাঁড়ান।সংসার সামলিয়েই তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা,সংসার, শ্বশুরবাড়ির সবকিছু সামলে উঠেছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী উম্মে হাবিবা ফারজানা। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হওয়ার পর স্বপ্নগুলো ডানা মেলে ধরার আগেই তাকে বিয়ের পিঁড়িতে বসতে হয়েছে।সংসার সামলে পড়াশোনাটা যেন যুদ্ধ জয়ের মতোই ছিল।চার বছর পড়ালেখা থেকে অনেকটা বিচ্ছিন্নও ছিলেন তিনি।এতোকিছুর পরেও তিনি ঘুরে দাঁড়িয়েছেন।

উম্মে হাবিবা ফারজানা বলেন,আমি নিজের ইচ্ছেতেই মূলত পড়াশোনা শুরু করেছি।প্রথম দিকে কেউ তেমন সহযোগিতা করেনি।অনেকে বলেছে স্বামী ভালো ইনকাম করে,আবার বউয়ের জব করার কি দরকার!আজ আমি সফল হয়েছি বলে তারা আমাকে নিয়ে গর্ব করেন,হয়ত সফল না হলে অন্যরকম বলতেন।আমার মেয়ের বয়স এখন ৬ বছর।

আমাদের নিয়ে আসলে তেমন কেউ স্বপ্ন দেখেননি,আমি নিজেই আমার স্বপ্নদ্রষ্টা ও স্বপ্নের বাস্তবায়নকারী।একজন্য আমি মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামিনের কাছে কোটি শুকরিয়া জ্ঞাপন করি।তিনি বলেন,আমার স্বামী আমাকে পড়াশোনার জন্য যাতে সময় পাই,এজন্য সহায়তা করেছেন অনেক।

মাস্টার্স ফাইনাল পরীক্ষার সময় আট মাসের গর্ভবতী ছিলেন ফারজানা।কন্যার জন্মের পরই শুরু হয় তার প্রকৃত জীবন সংগ্রাম।সন্তান হবার পর চার বছর তিনি পড়াশোনা থেকে দূরে সরে যান।এসময় বন্ধুদের ক্যারিয়ার দেখে তিনি আবার বিসিএস দেয়ার কথা চিন্তা করেন।মূলত বন্ধুদের বিসিএস ক্যাডার হওয়াই তাকে অনুপ্রাণিত করেছে নতুন করে পড়া শুরু করতে।

ফারজানা জানালেন,লিখিত পরীক্ষার আগে পড়ালেখার সুযোগ পেয়েছেন মাত্র দেড় মাস।সেসময় স্বামী-মা ও বোনের কাছ থেকে বেশ সহযোগিতা পেয়েছেন তিনি।লিখিত পরীক্ষায় সফলতার পর ভাইভাতেও সফল হন ফারজানা।সুপারিশপ্রাপ্ত হন বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারে। বর্তমানে তিনি মাদারীপুরে কর্মরত আছেন।

বিসিএসে কিভাবে সফল হওয়া যায়:-

সময়কে কাজে লাগাতে হবে প্রতি সেকেন্ড। যতক্ষণ পড়বে ডিভাইস থেকে দূরে থাকবে। আমি সব কাজ শেষ করে রাত ১১ টার পরে পড়া শুরু করতাম,রাতের পড়া মোবাইলে রেকর্ড করে রাখতাম,মেয়েকে স্কুলে নিয়ে গিয়ে হেডফোন কানে দিয়ে শুনতাম সেই পড়াগুলোই।এতে রিভিশন হয়ে যেত।

পড়া মনে রাখার জন্য বই না,পাশে খাতাও রাখতে হবে। লিখে লিখে পড়তে হবে।প্রতিদিন একটা টার্গেট ঠিক করতে হবে,আজ কতটুকু পড়বে।খুব চেষ্টা করতে হবে সেই টার্গেট পূরণ করার।অনেক বেশি বই না কিনে একটা বই ভালোভাবে বার বার পড়া উচিৎ।

আরও খবর

Sponsered content