প্রতিনিধি ২০ জানুয়ারি ২০২৩ , ৩:৩২:৪২ প্রিন্ট সংস্করণ
নিজস্ব প্রতিবেদক।।সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়স না থাকায় জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে বয়স কমিয়ে ভোটার আইডি কার্ড বানিয়ে সরকারি চাকরি করার অভিযোগ উঠেছে দেবর-ভাবির বিরুদ্ধে।

আর এমন ঘটনা ঘটিয়েছেন মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর গ্রামের মাইনদ্দিন হাওলাদারের স্ত্রী লাভলী বেগম ও তার ছোটভাই আনোয়ার হাওলাদার।জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে দেবর-ভাবির সরকারি চাকরিতে প্রবেশ করে অর্থ আত্মসাৎ করার ঘটনায় এলাকার জনমনে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। এই জালিয়াতির বিচার দাবি করেছেন স্থানীয় সুশীল সমাজের লোকেরা।
এলাকাবাসীর অভিযোগ ও স্থানীয় নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে,মাদারীপুরের রাজৈর উপজেলার কবিরাজপুর গ্রামের মাইনদ্দিন হাওলাদারের স্ত্রী লাভলী বেগমের প্রথম ভোটার আইডি কার্ডে (জাতীয় পরিচয়পত্র নং-৫৫৬৬০৯৫০৭) জন্ম তারিখ ১ মে ১৯৭০।২য় ভোটার আইডি কার্ডে (জাতীয় পরিচয়পত্র নং-২৮১৩২৬৬৮৭৭) তার জন্ম তারিখ ১ ফ্রেব্রুয়ারি ১৯৮৪।
লাভলী বেগমের ১৯৭০ সালে জন্ম হলে ২০১৩ সালে সরকারি চাকরিতে প্রবেশে বয়সসীমা না থাকায় প্রথম ভোটার আইডির কথা গোপন রেখে বয়স কমিয়ে পুনরায় ১ ফ্রেব্রুয়ারি ১৯৮৪ জন্ম তারিখ দেখিয়ে ভোটার আইডি বানান।আর সেই আইডি দিয়ে কবিরাজপুর সরকারি হাসপাতালের আয়া হিসেবে চাকরি নেন ২০১৩ সালে।
অপরদিকে লাভলী বেগমের দেবর আনোয়ার হাওলাদারও ভাবির মতো বয়স গোপন করে ভোটার আইডি কার্ড বানিয়ে একই উপজেলার কবিরাজপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে দপ্তরি কাম-নৈশপ্রহরী পদে চাকরি নিয়ে বহাল তবিয়তে চাকরি করছেন।
নির্বাচন কমিশনের সর্বশেষ ইস্যুকৃত ২য় ভোটার আইডি কার্ড অনুসারে লাভলী বেগমের জন্ম তারিখ ১ ফ্রেব্রুয়ারি ১৯৮৪ সঠিক হলে তার গর্ভজাত পুত্র আল-আমিনের আইডি কার্ডের জন্ম তারিখ ৩ জানুয়ারি ১৯৯১।সে মতে মাতা-পুত্রের জন্মের ব্যবধান ৭ বছর।তাহলে মাত্র ৭ বছরের শিশুকন্যা লাভলী কিভাবে পুত্রসন্তানের মাতা হতে পারেন-এ প্রশ্ন এলাকার সবার মুখে মুখে।
জানতে চাইলে লাভলী বেগম অসুস্থ জানিয়ে তার স্বামী মাইনদ্দিন হাওলাদার এবং দেবর আনোয়ার হাওলাদার জানান,ভোটার আইডি কার্ডের হালনাগাদ করার সময় আগের আইডি কার্ড হারিয়ে যাওয়ায় এবং নম্বর না থাকায় চলার জন্য দ্বিতীয়বার ভোটার আইডি বানিয়ে সরকারি চাকরি পেয়েছি।
লাভলী বেগমের কর্মস্থল কবিরাজপুর সরকারি হাসপাতাল নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ রাজৈর উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. প্রদীপ মণ্ডল বলেন,বিষয়টি সম্পর্কে আমি জানি না।তবে সরকারি বিধান লঙ্ঘন করলে যথাযথ কর্তৃপক্ষ তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেবে।
মাদারীপুর সিভিল সার্জন ডা. মুনীর আহমেদ খান বলেন, সরকারি চাকরিতে জালিয়াতি করলে প্রমাণ পেলে চাকরি থাকবে না।
আনোয়ার হাওলাদারের কর্মস্থল কবিরাজপর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. মোমিনুর ইসলাম (মিজান) বলেন,বিষয়টি আপনাদের মাধ্যমে শুনলাম।আনোয়ার হাওলাদার আউট সোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিয়োগ পেয়েছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নেবে।
দ্বৈত ভোটার আইডি কার্ড বহন ও ব্যবহার করা এবং সরকারি চাকরিতে যোগদানের বিষয়ে মাদারীপুর জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মো. আলাউদ্দিন আল-মামুন বলেন,বয়স কমিয়ে আইডি বানালে পরবর্তী আইডি কার্ড বাতিল করা হবে।এবিষয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ইতোমধ্যেই ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে।
তথ্য গোপন ও দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে সরকারি চাকরিতে প্রবেশের বিষয়ে মাদারীপুর জেলা প্রশাসক ড. রহিমা খাতুন বলেন,কারো ২টি ন্যাশনাল আইডি কার্ড থাকবে না,১টি আইডি কার্ড থাকবে এবং কোনো সরকারি কর্মকর্তার যদি ২টি আইডি কার্ড থাকে তাহলে তদন্ত করে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

















