সারাদেশ

জনগনের সাথে পরিকল্পিত প্রতারণার রহস্য রিপন নিজেই ফাঁস করে দিলেন

  প্রতিনিধি ৩১ ডিসেম্বর ২০২৩ , ৪:১৭:০৭ প্রিন্ট সংস্করণ

রবিউল ইসলাম রবি।।জনগণকে বলা প্রতিজ্ঞা ও প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করায় বরিশাল-৫ আসনে ট্রাক মার্কা স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপনকে নির্বাচনের আগেই অনেকে ভন্ড ও প্রতারক লোক বলে আখ্যায়িত করতে শুরু করেছে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০২৪ উপলক্ষে একাধিক জনসভায় সালাউদ্দিন রিপন জনগণকে বলেছেন ‘এক কথা, আর কর্মে ব্যতিক্রম করায়’ এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।গত ২৫, ২৭ ও ২৯ ডিসেম্বর পৃথক তিনটি ঘটনায় ট্রাক মার্কা সমর্থকদের মধ্যে টানটান উত্তেজনার পাশাপাশি মনে ক্ষোভ বিরাজ করছে।আর অতি উৎসাহিত যে সকল সমর্থক আশাবাদী ছিলেন,এই নির্বাচনে সালাউদ্দিন রিপন নির্বাচিত হবে তাদের মাঝে তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।রিপনের এমন কর্মকান্ডে স্বয়ং নিজ দলের কর্মীসহ তার এলাকার স্থানীয় জনমনে নানা প্রশ্নের দানা বেঁধে উঠেছে।একইসাথে জনমুখে উঠে এসেছে ‘এস আর সমাজকল্যাণ সংস্থা’ নামক সংগঠনের প্রতিষ্ঠাতা হয়ে কিছু মানুষকে সাহায্য সহযোগিতা করে ট্রাক মার্কা প্রার্থী রিপন পরিকল্পিত উদ্দেশ্যে নিয়ে এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠেছে।ঘটনাচক্রে বাস্তব প্রেক্ষাপটে ফুটে উঠেছে এ সব চিত্র।

গত ২৫ ডিসেম্বর বিকেল ৪ টায় বরিশাল কাশিপুর বিল্ববাড়ি বেকারির পুল সংলগ্ন মাঠে এক জনসভার জনগণের উদ্দেশ্যে সালাউদ্দিন রিপন বলেছিলেন, “আমি স্বতন্ত্র প্রার্থী, আমার কোন দল নেই,আমি সব দলের লোক,আর সব দলের লোকও আমার কাছে আসবে।তাই সকলের জন্য আমার দরজা উন্মুক্ত।” যা বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইন নিউজ পোর্টালে সংবাদ প্রকাশিত হয়।আবার ২৭ ডিসেম্বর বুধবার বেলা ১১টায় শহীদ আবদুর রব সেরনিয়াবাত বরিশাল প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে সালাউদ্দিন রিপন উপস্থিত সাংবাদিকদের উদ্দেশ্যে বলেছিলেন,আমি কোন রাজনৈতিক দলের পক্ষ নিয়ে নির্বাচন করি না। আমি নিরপক্ষ তাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হয়েছি।আমার কোন দলের সাথে সম্পৃক্ততা নেই। সংবাদ সম্মেলনে রিপন আরও বলেন,সদর উপজেলার চরমোনাই ইউনিয়নের বুখাইনগর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে মাঠে নির্বাচনী সভা শেষে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল ইসলাম তাকে অকথ্য ভাষায় গালাগালিসহ প্রাণনাশের হুমকি দিয়েছে।যা বিভিন্ন পত্রিকা ও অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হয়।

এর দু’দিন পর অর্থাৎ গত ২৯ ডিসেম্বর শুক্রবার দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রচারণা উপলক্ষে বরিশাল বঙ্গবন্ধু উদ্যানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভায় সালাউদ্দিন রিপন নিজে একটি শুভেচ্ছা ব্যানারের সামনে দাঁড়িয়ে নেতৃত্ব দিয়ে শত শত নারী-পুরুষ নিয়ে ওই সভায় অংশগ্রহণ করেন। স্বতন্ত্র প্রার্থীর তকমা লাগিয়ে জনগন ও সাংবাদিকদের বলা কথার উল্টো কাজ করে জনমনে সমালোচনার পাত্র হয়ে দাঁড়িয়েছেন সালাউদ্দিন রিপন। মুখে এক কর্মে আরেক হওয়ায় রিপনকে এখন অনেকে টাউট,বাটপার,ভন্ড ও প্রতারক বলতে শুরু করেছে।

কাশীপুর এলাকার স্থানীয় একাধিক ব্যক্তি বলেন,নাম ঠিকানা উল্লেখ করলে সমস্যা আছে।কারণ,রিপন ঢাকা থেকে অপরিচিত কিছু লোক এনে নির্বাচন কার্যক্রম পরিচালনা করছেন।আগত এ সব লোক নিরীহ,নাকি ভাড়া করা ক্যাডার,তা কিছুই বুঝে উঠতে পারছি না।তাই নাম ঠিকানা প্রকাশ হলে হিতে বিপরীত হতে পারে।তাছাড়া স্বাধীন দেশে বাস করে যে কোন ব্যক্তি তার পছন্দ মত রাজনৈতিক দল করার অধিকার রয়েছে।সালাউদ্দিন রিপন আ.লীগ দলের সমর্থক হলে তো দোষের কিছুই নয়।কেননা মুক্তিযুদ্ধ ও স্বাধীনতার স্বপক্ষের দল আ.লীগ।

এতাছাড়া আ.লীগের কেন্দ্রীয় ঘোষণানুযায়ী দলের পক্ষে স্বতন্ত্র প্রার্থী থাকতে পারবে বলে জানান দেয়া রয়েছে।সেখানে রিপনের রাজনৈতিক দল সমর্থন নিয়ে লুকোচুরি থাকবে কেন? তার সভায় আগত জনগণসহ সাংবাদিকদের কাছে রিপন একাধিকবার বলেছেন,সে কোন দলের নয়।কোন রাজনৈতিক দলের ব্যানারে নির্বাচন করেন না।তিনি নির্দলীয় লোক।তাই হয়েছেন স্বতন্ত্র প্রার্থী।কিন্তু কয়েক দিনের ব্যবধানে আ.লীগের জনসভায় অংশগ্রহণ করে পূর্বের সব কথাগুলোকে ওলট-পালট করে দিয়েছে রিপন।তার এমন কার্যকলাপে জনমনে নানা বির্তকিত প্রশ্নের জম্ম দিয়েছে।যে কারণে নিজ এলাকার সমর্থকদের মাঝেও প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।কেউ বলছে,গ্রাম অঞ্চলের সহজ-সরল জনগণকে সহয়তার নামে এমপি হওয়ার স্বপ্নে বিভোর হয়ে উঠেছেন।তিনি যাদের নিয়ে নির্বাচনী মাঠে কাজ করছেন তার অধিকাংশ কর্মী প্রচার-প্রচারণার সিংহভাগ খরচ নিজেদের পেটে ক্ষুধা নিবারণে ধান্ধায় ব্যস্ত থাকায় শেষ পর্যন্ত রিপনের পরিকল্পিত কার্যক্রমানুযায়ী পরিপূর্ণ হচ্ছে না। নির্বাচনী মাঠে হাকডাক দিলেও ক্ষুধার্থ কর্মীদের কারণে পরাজয়ের গ্লানি নিয়ে উঠতে হবে তাকে।

কয়েকজন হুজুর বলেন,মহান আল্লাহ তাআলা দুনিয়ার স্বার্থে ওয়াদা ভঙ্গকারীদের নিন্দা ও ধিক্কার জানিয়েছেন। দুনিয়ার সামান্য স্বার্থের কাছে পরাজয় বরণ করে ওয়াদা ভঙ্গ করলে এর ক্ষতিও মারাত্মক।তাই ওয়াদা ভঙ্গকারী ব্যক্তি সমাজ ও ইসলামে জঘন্য ব্যক্তি।রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা শপথ দিয়ে কোনো মুসলমানের অধিকার নষ্ট করলে,সে নিজের জন্য নরকের শাস্তিকে অপরিহার্য করে নেয়।বিষয়টি সামান্য হলেও ক্ষমা নেই।তাছাড়া কেয়ামতের দিন ওয়াদা ভঙ্গকারীর দিকে খোদা রহমতের দৃষ্টিতে তাকাবেন না।

স্থানীয়রা বাসিন্দারা আরও বলেন,বরিশাল- ৫ আসনে আ.লীগ সমর্থকরা ভাগে বিভক্ত রয়েছে।এ সুযোগে গোল দিতে চায় রিপন।কেননা আ.লীগের এক পক্ষ তার মার্কার উপর ভর করলেই জয়ের সম্ভবনা রয়েছে।আবার এ হিসেব পাল্টে যেতে পারে শেষ মূহুর্তে যদি আইনি মারপ্যাচের জটিলতা ভেঙ্গে সেরনিয়াবাত সাদিক আবদুল্লাহ প্রার্থীতা ফিরে পায়,তাহলে পেক্ষাপট বিপরীতে মোড় নিতে পারে।তাদের ধারণা,বরিশাল- ৪ আসনের আ.লীগের মনোনীত প্রার্থী শাম্মী আহমেদ প্রার্থীতা ফিরে পেলে বরিশাল-৫ আসনে সাদিকও পেতে পারে।তবে রিপনের পরাজয় হলেও লজ নেই।নিজের পরিচিতি জানান দেয়ার পাশাপাশি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে নিজের পূর্বের তুলনায় শক্ত পরিচয় দিতে পারবে।

গত ৭ বছরে জন সেবায় বরিশাল-৫ আসনে ১০০ কোটি টাকার বেশি ব্যয় করেছেন এমন বক্তব্য দিয়েছিলেন এস আর সমাজকল্যাণ সংস্থার সভাপতি মোঃ নজরুল ইসলাম আকন ও প্রধান সমন্বয়কারী মোঃ আব্দুল মালেক হাওলাদার।সোর্স মারফত এ তথ্যের বর্ণনাসহ প্রমাণ চাইলে কয়েক নেতাকর্মী নানা টালবাহানা শুরু করে।তারা বলেন,প্রতিষ্ঠানের সবকিছুই প্রতিষ্ঠাতা সালাউদ্দিন রিপনের ইশারায় সম্পন্ন হয়।

ট্রাক মার্কা স্বতন্ত্র প্রার্থী সালাউদ্দিন রিপনের কাছে গত ২৫, ২৭ ও ২৯ ডিসেম্বর পৃথক তিনটি ঘটনায় তার বক্তব্যের সাথে কার্যক্রমের মিল না থাকার বিষয় সম্পর্কে মুঠোফোনে জানতে চাইলে তিনি ব্যস্ততার কথা বলে এড়িয়ে যান।

আরও খবর

Sponsered content