সারাদেশ

চালের জন্য অপেক্ষা কমপক্ষে চার শতাধিক মানুষ!

  প্রতিনিধি ২৩ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ২:৩৯:৫০ প্রিন্ট সংস্করণ

চট্টগ্রাম প্রতিনিধি।।কেউ এসেছেন সকাল ছয়টায়,কেউ সাতটায়।বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে থাকে রোদের তেজ। সেই রোদ উপেক্ষা করে খোলাবাজারে পণ্য বিক্রির (ওএমএস) ট্রাকের সামনে চালের জন্য অপেক্ষা কমপক্ষে চার শতাধিক মানুষের। ভিড়ের মধ্যে একপর্যায়ে লেগে যায় হট্টগোল। গরমে ভিড় ছেড়ে পাশের ফুটপাতেও বসে পড়েন অনেকে।

গতকাল বুধবার সকাল সাড়ে ১০টায় এ চিত্র দেখা যায় চট্টগ্রাম নগরের সাগরিকার বিটাক মোড় এলাকায়।ভোগান্তি সয়ে হলেও চাল সংগ্রহে মরিয়া সারিতে থাকা লোকজন।ভিড় ঠেলে চাল নিয়ে বের হন পোশাকশ্রমিক আবেদুর রহমান (২৭)। ঘেমেনেয়ে একাকার তিনি।পরনের গেঞ্জি ঘামে জবজবে ভেজা।তিনি বলেন,চালের জন্য এমন যুদ্ধ দেখি নাই।ভিড়ের কারণে দম বন্ধ হয়ে আসছিল।অপেক্ষা করছি তিন ঘণ্টার বেশি হয়েছে।’

বিটাক মোড়ে গতকাল ওএমএসের চালের ট্রাক আসে সকাল ১০টার দিকে।আর মানুষের অপেক্ষা আরও তিন থেকে চার ঘণ্টা আগে থেকে।চাল বিক্রেতারা জানান,ট্রাক এলেই চালের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন লোকজন।সবাই প্রতিদিনের বরাদ্দের চাল শেষ হওয়ার আগেই চাল নিতে চান।ফলে হুড়োহুড়ি পড়ে যায়।দিন দিন মানুষ বাড়ার কারণে ভিড় সামাল দেওয়া কষ্টকর হয়ে পড়ছে।

এক ঘণ্টা অপেক্ষার পর সোয়া ১১টার দিকে বিটাক এলাকায় দায়িত্বে থাকা খাদ্য পরিদর্শকের সহায়তায় চাল নিয়েছেন ৯০ বছর বয়সী ঝুনু দে।কথা হলে তিনি বলেন,চাল নিতে এমন অবস্থা আগে দেখেননি তিনি।ভিড়ের ধাক্কায় সারি থেকে সরে যান তিনি।পরে খাদ্য পরিদর্শকের সহায়তায় চাল পেয়েছেন।

চাহিদা বাড়ার কারণে মূলত বিশৃঙ্খলা হচ্ছে।বাজারে চালের দাম বাড়ায় সব শ্রেণির মানুষই ওএমএসের চাল কিনতে আসছেন।তবে বরাদ্দ সীমিত থাকায় সবাই চাল পাচ্ছেন না।

সারিতে দাঁড়ানো লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তাঁরা আগেও ওএমএসের চাল কিনেছেন।গতকালের মতো বিশৃঙ্খলা আগে দেখেননি।গরম ও ভিড়ে ধাক্কাধাক্কি সহ্য করতে না পেরে অসুস্থ হয়ে পড়েন কয়েকজন।দুপুর ১২টার দিকে ভিড় থেকে ছিটকে মিনতি দাশ (৪৫) নামের এক নারী চলে যান।তিনি জানান,তিনবার সারিতে দাঁড়িয়েছেন,ধাক্কাধাক্কিতে তিনবারই ছিটকে গেছেন তিনি।রোদের তেজ সহ্য করতে পারছেন না আর। তাই ফেরত যাচ্ছেন।

চাল বিক্রির ট্রাকের কর্মীরা জানান,সারিতে দাঁড়ানোর লোকজন হাতাহাতির পর্যায়ে পর্যন্ত চলে যান।সবাই আগে চাল পেতে চান।ভিড়ের ধাক্কাধাক্কির কারণে অনেক সময় বিক্রেতারাও আহত হন।

সারিতে দাঁড়িয়েছেন আড়াই মাস থেকে আড়াই বছরের শিশু কোলে থাকা অন্তত ১৫ জন নারী।তাঁদের মধ্যে সাতজন শেষ পর্যন্ত চাল পেয়েছেন।ভিড়ে বাচ্চার ক্ষতির কথা ভেবে চাল না নিয়ে ফিরে গেছেন অন্তত আটজন।বৃদ্ধ,প্রতিবন্ধী ও বাচ্চা কোলে থাকা নারীদের অগ্রাধিকার দেওয়ার কথা রয়েছে ওএমএসের ট্রাকে।

বিটাক মোড়ের দায়িত্বে থাকা খাদ্য পরিদর্শক মো. আবদুর রহমান খান বলেন,এই এলাকা শ্রমিক-অধ্যুষিত।নিম্ন আয়ের মানুষ অনেক বেশি।তবে সুশৃঙ্খলভাবে চাল নিতে চান না তাঁরা।নারীদের সারি দুটি করতে হয়েছে।তারপরও তাঁরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়াননি।

বিটাক মোড় এলাকায় গতকাল চাল বিক্রি শেষ হয় পৌনে একটায়।শেষ পর্যন্ত খালি হাতে ফেরত গেছেন অন্তত ২৫ জন নারী-পুরুষ।

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, নগরে বর্তমানে ৪১ ওয়ার্ডে ওএমএসের ডিলার রয়েছেন ৩৬ জন।শুক্র ও শনিবার ছাড়া সপ্তাহে ৫ দিন ভিন্ন ভিন্ন স্থানে ১৪টি ট্রাকে করে চলে কার্যক্রম।একটি স্থানে ট্রাক যায় সর্বোচ্চ দুই থেকে তিনবার।এসব ট্রাকে ২ মেট্রিক টন করে প্রতিদিন ২৮ মেট্রিক টন চাল বিক্রি করা হয়।জনপ্রতি ৫ কেজি করে ৫ হাজার ৬০০ মানুষ ট্রাক থেকে চাল কিনতে পারেন।এ ছাড়া ২১টি ডিলার দোকানও রয়েছে।দোকানপ্রতি দেড় মেট্রিক টন করে প্রতিদিন মোট সাড়ে ৩১ মেট্রিক টন চাল ও ১ মেট্রিক টন করে ২১ মেট্রিক টন আটা বিক্রি করা হয়।প্রতিদিন প্রায় ১১ হাজার ৯০০ ক্রেতা ট্রাক ও ডিলারের দোকান থেকে ওএমএসের চাল কিনতে পারছেন।

এসব ট্রাক থেকে প্রতিদিন ঠিক কত মানুষ ফেরত যায়,তার নির্দিষ্ট কোনো তালিকা নেই চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে।তবে ডিলারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, প্রতিদিনই প্রতি ট্রাক থেকে ৩০ থেকে ৬০ জন চাল না পেয়ে ফেরত যান।সেই হিসাবে চাল কিনতে আসা লোকের ৭ থেকে ১৩ শতাংশ মানুষ ফেরত যান।এর মধ্যে নগরের বহদ্দারহাট পুকুর পাড়,আগ্রাবাদ সরকারি কমার্স কলেজ,ব্যাপারীপাড়া, বিটাক মোড় ও কর্নেল হাট এলাকায় ওএমএসের ট্রাক থেকে সবচেয়ে বেশি মানুষ খালি হাতে ফেরত যান।কারণ,এসব স্থানে সারিতে মানুষ থাকে বেশি।

চট্টগ্রাম জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আবদুল কাদের গতকাল সন্ধ্যায় বলেন,চাহিদা বাড়ার কারণে মূলত বিশৃঙ্খলা হচ্ছে। বাজারে চালের দাম বাড়ায় সব শ্রেণির মানুষই ওএমএসের চাল কিনতে আসছেন।তবে বরাদ্দ সীমিত থাকায় সবাই চাল পাচ্ছেন না।বরাদ্দ না বাড়লেও ওএমএস কর্মসূচি আগামী ৩০ এপ্রিল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে।

আরও খবর

Sponsered content