আন্তর্জাতিক

চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে-রাশিয়া

  প্রতিনিধি ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৪:৫৯:৪৩ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।। ড্রোন শিল্পে বিপ্লব ঘটিয়েছে ইরান। খোদ পশ্চিমা সংবাদমাধ্যমেই এ নিয়ে খবর প্রকাশিত হয়েছে। অভিযোগ রয়েছে,চলমান ইউক্রেন যুদ্ধে ইরানি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করছে রাশিয়া।

কিন্তু প্রশ্ন হলো— যুক্তরাষ্ট্র ও পশ্চিমা বিশ্বের নিষেধাজ্ঞা উপেক্ষা করে কারা কিনছে ইরানি ড্রোন?আসুন জেনে নিই কোন কোন দেশে যাচ্ছে ইরানের তৈরি ড্রোন—

এশিয়া টাইমস ও বার্তা সংস্থা রয়টার্সের প্রতিবেদন সূত্রে জানা যায়,শুরুর দিকে ইরানের তৈরি ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র মূলত ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী,লেবাননের হিজবুল্লাহ,ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ এবং ইরাক ও সিরিয়ার ইরানসমর্থিত যোদ্ধারা ব্যবহার করতো।

তবে সাম্প্রতিক সময়ে আফগানিস্তান,আজারবাইজান, তুর্কমেনিস্তান,কিরগিস্তান ও কাজখস্তানের মতো দেশগুলো ইরানের তৈরি ড্রোন সংগ্রহ করছে।তবে এসব দেশ তুরস্ক ও অন্যান্য দেশের ড্রোনও কিনছে।

গত বছরের অক্টোবরে ইরানের একজন শীর্ষ জেনারেল দেশটির রাজধানী তেহরানে ইমাম হোসেন মিলিটারি বিশ্ববিদ্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে বলেন,বিশ্বের অন্তত ২২টি দেশ ইরানের ড্রোন কেনার জন্য যোগাযোগ করছে।তবে নির্দিষ্ট কোনো দেশের নাম উল্লেখ করেননি তিনি।

নিজেদের ড্রোন শিল্পের উত্থান নিয়ে সেই সময় গর্ব প্রকাশ করেন মেজর জেনারেল ইয়াহইয়া রহিম সাফাভি নামের ওই কর্মকর্তা।ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির উপদেষ্টাও তিনি।

ইরানি ড্রোনের বৈশিষ্ট্য;ইরানি ড্রোন শাহেদ ১৩৬-এর প্রথম বৈশিষ্ট্য হলো— এটি বিস্ফোরক নিয়ে সরাসরি লক্ষ্যবস্তুতে গিয়ে নিজেই বিস্ফোরিত হয়।এতে যুদ্ধের কৌশল হিসেবে প্রতিপক্ষকে দ্রুত চাপে ফেলতে তাদের বিদ্যুৎকেন্দ্র,তেলক্ষেত্র ও গ্যাসক্ষেত্রের মতো স্থাপনাগুলোতে নিখুঁত হামলা চালানো যায়।অথচ আশপাশের কোনো কিছুর উল্লেখযোগ্য কোনো ক্ষতি হয় না।যেমনটি ইউক্রেনে করছে রাশিয়া।

ইরানি ড্রোনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো— এগুলো দামে সস্তা। ফলে যুদ্ধের ব্যয়ভার কমাতে ব্যাপক সহায়ক এসব ড্রোন। বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র কিংবা অন্য কোনো ড্রোন দিয়ে সেটি সম্ভব নয়।এ কারণেই ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহী,লেবাননের হিজবুল্লাহ,ফিলিস্তিনের হামাস ও ইসলামিক জিহাদ এবং ইরাক ও সিরিয়ার ইরানসমর্থিত যোদ্ধাদের পক্ষে ইরানি ড্রোন ব্যবহার করা সম্ভব হচ্ছে।

শুধু এসব যোদ্ধাই নয়,বরং সাম্প্রতিক সময়ে অনেক দেশই প্রকাশ্যে কিংবা অপ্রকাশ্যে ইরানি ড্রোন কিনছে।আফগানিস্তান, আজারবাইজান,তুর্কমেনিস্তান,কিরগিস্তান ও কাজখস্তানের মতো দেশগুলোও ইরানি ড্রোনের অন্যতম ক্রেতা।যদিও এসব দেশ তুরস্ক ও অন্যান্য দেশের ড্রোনও মজুত করছে।

ইরানি ড্রোন তথা সমরাস্ত্র শিল্পের সম্প্রসারণ নিয়ে ইসরাইল ও যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে একাধিকবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে।অস্ত্র শিল্পে দেশটির অগ্রগতি থামাতে তেহরানের ওপর একের পর এক নিষেধাজ্ঞা দিয়ে যাচ্ছেন পশ্চিমারা।কিন্তু তার পরও ইরানকে থামাতে পারছে না।

ইসরাইলি সাংবাদিক ইসরাইলের সাংবাদিক সেথ জে ফ্রাৎসম্যান তার বইয়ে লিখেছেন,২০১৭ সালের আগস্টে পারস্য উপসাগরে মার্কিন রণতরী ইউএসএস নিমিৎজের ওপর একটি সাদেঘ ড্রোন পাঠায় ইরান।এ ছাড়া ২০১৯ সালের এপ্রিলে একই ড্রোনকে পাঠানো হয় ইউএসএস আইসেনহাওয়ারের কাছাকাছি।একই বছর মার্চে ইরান ৫০টি ড্রোনের একটি মহড়া চালায়,যার নাম দেওয়া হয় ‘ওয়ে টু জেরুজালেম’।

২০২১ সালের জানুয়ারিতেও ইরান দুই দিনব্যাপী স্থানীয়ভাবে তৈরি ড্রোনের বড় একটি মহড়া চালায়।এসব ছিল ইরানের ড্রোন সক্ষমতা জানান দেওয়ার চেষ্টা।

ড্রোন নিয়ে ইরানের বিশেষ পরিকল্পনা;শুরু থেকেই ইরানের পরিকল্পনা ছিল একটি শক্তিশালী ড্রোন বহর তৈরি করা। ৮০-এর দশকে ইসরাইল যেভাবে ড্রোন শিল্পে এগিয়ে গেছে কিংবা তারও আগে যুক্তরাষ্ট্র যেভাবে ড্রোনের ক্ষেত্রে একক আধিপত্য বিস্তার করেছে-ঠিক সেই জায়গায় পৌঁছানোই ছিল ইরানের টার্গেট।

ইরানের পক্ষ থেকে ২০১৯ সালে ইউএস গ্লোবাল হক ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করা হয়।এ ছাড়া ইসরাইলি ড্রোন ভূপাতিত করার দাবিও করেছে দেশটি।যদিও ইসরাইল প্রকাশ্যে সেটি স্বীকার করেনি। মনে করা হয়,ইরানের ড্রোন,রকেট এবং স্বল্পপাল্লার মিসাইলের কারণে মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলো অর্থাৎ ইয়েমেন,সিরিয়া,ইরাক ও লেবাননে ব্যাপক চ্যালেঞ্জের মুখে রয়েছে মার্কিন বাহিনী।

সামরিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন,সর্বশেষ ইউক্রেন যুদ্ধ ইরানি ড্রোনের বৈশ্বিক স্বীকৃতি দিয়েছে।কারণ রাশিয়ার মতো শক্তিশালী দেশ এই ড্রোন ব্যবহার করায় ইরানের শক্তিমত্তার বিষয়টি মেনে নিচ্ছে বিশ্ব।

ইরান যেভাবে ড্রোন শিল্পে সফলতা পায়;সম্প্রতি এশিয়া টাইমসের প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়,ইরানে ড্রোন শিল্প শুরু হয় সেই ১৯৮০ এর দশকেই।তবে ড্রোন শিল্পে ইরানের মূল বিপ্লব শুরু হয় ২০১১ সালে।

ওই সময় ইরানের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা মার্কিন কোম্পানি লকহিড মার্টিনের তৈরি একটি গোয়েন্দা ড্রোন ভূপাতিত করে। ড্রোনটি গোয়েন্দাগিরি করতে ইরানের আকাশসীমায় প্রবেশ করেছিল।পরে ইরানের প্রকৌশলীরা ভূপাতিত ড্রোনের প্রযুক্তি হাতিয়ে নিতে সক্ষম হন।এর পর প্রথমে একটি সিমোর্গ ড্রোন তৈরি করে ইরান। তার পর শাহেদ-১২৯ এবং পরে শাহেদ-১৩৬ ড্রোন ডেভেলপ করেন দেশটির বিজ্ঞানীরা। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাপক আলোচনা পেয়েছে শাহেদ-১৩৬ কামিকাজে ড্রোন।

এর আগে ইরানের কুদস অ্যাভিয়েশন ইন্ডাস্ট্রি মোহাজের ড্রোন তৈরি করে,যা প্রথম আকাশে উড়ে ১৯৮৫ সালে।এর পর দেশটির ইঞ্জিনিয়াররা শত শত ছোট ও মাঝারি আকারের ড্রোন তৈরি করে।১৯৮৬ সালে দেশটির সমরাস্ত্র শিল্পে যুক্ত হয় আবাবিল ড্রোন।

আরও খবর

Sponsered content