আন্তর্জাতিক

যুদ্ধ রাশিয়ার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অধিকার-বাইডেন বলছেন,এটি মুক্তির লড়াই

  প্রতিনিধি ২২ ফেব্রুয়ারি ২০২৩ , ৪:০৭:৪৭ প্রিন্ট সংস্করণ

অনলাইন ডেস্ক রিপোর্ট।।মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন ইউক্রেনে গত এক বছরের পরিস্থিতি নিয়ে নিজেদের মূল্যায়ন তুলে ধরার ক্ষেত্রে যোজন যোজন দূরে ছিলেন।কারা দায়ী,কারণ ও পরিণতি নিয়ে এর চেয়ে বেশি ভিন্ন অবস্থান তাদের পক্ষে নেওয়া সম্ভব হত না। কিন্তু একটি জায়গায় তারা উভয়েই একমত হয়েছেন: এই যুদ্ধ ইউক্রেনের ভূখণ্ডে চললেও এর পরিধি আরও অনেক বিস্তৃত।এটি পশ্চিমা ও রাশিয়ার টিকে থাকার লড়াই।উভয় নেতাই তাদের ভবিষ্যতকে এই যুদ্ধের ফলাফলের সঙ্গে জড়িয়ে নিয়েছেন।তারা বলেছেন,প্রতিপক্ষকে অবশ্যই হারতে হবে। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক বিশ্লেষণে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

পুতিন ও বাইডেন উভয়েই নির্দিষ্টভাবে উল্লেখ করেননি প্রকৃত জয় আসলে কী হবে অথবা রণক্ষেত্রে লড়াই কেমন চলছে। পুতিন বলেছেন,এই যুদ্ধ রাশিয়ার অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার অধিকার,এবং বাইডেন বলছেন,এটি মুক্তির লড়াই।নিজের ভাষণে গণতন্ত্রের বদলে প্রায়ই মুক্তি শব্দটি ব্যবহার করেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট।

হোয়াইট হাউজ বলেছে,বাইডেনের ভাষণের লক্ষ্য কখনও পুতিনের ভাষণের পাল্টা হিসেবে আক্রমণাত্মক হওয়ার লক্ষ্য ছিল না যুক্তরাষ্ট্রের।কিন্তু পুতিন যখন বুঝতে পারলেন যে বাইডেন পোল্যান্ডে মঙ্গলবার ভাষণ দেবেন তখন শুক্রবারের নির্ধারিত ভাষণ ওই দিনেই দেন রুশ প্রেসিডেন্ট।

পুতিনের বিপরীত আয়োজন,ধারা ও ঘটনাপ্রবাহ হয়ত বাইডেনের পক্ষে ছিল।কিন্তু ঐতিহাসিক এই মুহূর্তে যেমন উচ্চমানের বক্তৃতা প্রয়োজন ছিল তা তিনি প্রদানে ব্যর্থ হয়েছেন।একমাত্র নাটকীয় মুহূর্ত ছিল যা ১৯৮৭ সালে সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট রিগ্যানের দাবির মতো দেয়াল গুঁড়িয়ে দাও’ এর কাছাকাছি বাইডেন বলেছেন,যুদ্ধের প্রতিটি দিন যাচ্ছে পুতিনের ইচ্ছার কারণে।তিনি চাইলে এক শব্দে যুদ্ধ বন্ধ করতে পারেন।এটি সহজ।

কিন্তু বাইডেনের সামনে সুযোগ ছিল পুতিনের অভিযোগের জবাব দেওয়ার।পুতিন দাবি করেছেন,এই যুদ্ধ পশ্চিমারা শুরু করেছে।বাইডেন শুধু বলেছেন,রাশিয়া আক্রমণের কোনও ছক পশ্চিমাদের ছিল না।এই যুদ্ধ ছিল পছন্দ,প্রয়োজন নয়।এক ব্যক্তি তা শুরু করেছেন।

যুদ্ধকালীন পরিস্থিতিতেও একটু বিনোদনের প্রতি বিমূখ ছিল না হোয়াইট হাউজ।নরওয়ের ডিজে কিগোর পর মুক্তির মঞ্চে প্রবেশ করেন বাইডেন এবং তার চলে যাওয়ার পর কোল্ড প্লে’র স্কাই ফুল অব টিয়ার্স বেজে ওঠে।

বাইডেনের ভাষণের সারমর্ম হলো,পশ্চিমারা পরীক্ষার মুখে পড়েছে এবং তারা অন্য কিছু বেছে নেয়নি।এর ফলে স্বৈরাচারীরা দুর্বল হয়েছে,শক্তিশালী নয় এবং ইউক্রেনে কখনও জয় পাবে না রাশিয়া।

যদিও বাইডেন পুতিনের বিরুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগ করেছেন।কিন্তু আগেরবারের পোল্যান্ড সফরের মতো ভুলের দিকে পা বাড়াননি।ওই সময় বলেছিলেন পুতিনের ক্ষমতায় থাকা উচিত না।

বিপরীতে পুতিনের প্রায় দুই ঘণ্টার স্টেট অব দ্য ইউনিয়ন ভাষণে সর্বজনীন মূল্যবোধের ওপর কম গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। জোর দেওয়া হয়েছে রাশিয়ার স্বার্থ ও দেশটির নিরাপত্তাকে। পশ্চিমা পারিবারিক মূল্যবোধের ওপর চিরাচরিত আক্রমণ ছিল যথারীতি।কিন্তু এটিকে পশ্চিমা মূল্যবোধ ও সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে জোট নিরপেক্ষ আন্দোলনের আহ্বান জানিয়ে ভাষণ বলা যায় না।বরং এটি ছিল রাশিয়া কৃষি উৎপাদনের পরিসংখ্যানে মহিমান্বিত করা।

কিং’স কলেজ লন্ডনের রুশ রাজনীতি বিষয়ক অধ্যাপক স্যাম গ্রিন এর আগে বলেছিলেন,পুতিনের ভাষণ সাধারণত তথ্যমূলক হয় না,এগুলো তিনটি লক্ষ্য অর্জনের জন্য প্রস্তুত করা হয়। এগুলো হলো,কৌশলগত বাগাড়ম্বরের সুযোগ তৈরি, দেশের শ্রোতাদের খুশি করা এবং বিদেশিদের বিভ্রান্ত করা।

এই অধ্যাপকরে দাবি,এই ধাঁচের মধ্যে পড়ে পুতিনের মঙ্গলবারের ভাষণ।এটি শুরু হয়েছে যুদ্ধকে ন্যায্যতা দিয়ে। অথচ নির্দিষ্ট কৌশলগত কারণ বলা হয়নি। মাঝে মধ্যে ডনেস্ককে সুরক্ষার কথা বলা হয়েছে।অগণতান্ত্রিক পশ্চিমা অভিজাতদের নিয়ন্ত্রণে থাকা পুরো ইউক্রেন দেশকে দখলের করা একবারও স্পষ্ট করে উল্লেখ করা হয়নি।

এতে রাশিয়ার অস্তিত্বের প্রতি ন্যাটোর হুমকির ভয় রুশদের মনে জাগিয়ে তোলার চেষ্টা করা হয়েছে।পুতিন তুলে ধরেছেন, পশ্চিমারা কীভাবে সর্বগ্রাসী মূল্যবোধের আবরণে উদার গণতন্ত্রের ভাষা ব্যবহার করে।

শেষে,পশ্চিমাদের মনে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ভয় ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হয়েছে ভাষণে।এটি করতে নিউ স্টার্ট চুক্তি থেকে রাশিয়ার অংশগ্রহণ বাতিল করেছেন পুতিন। এর মাধ্যমে তিনি শত্রুদের বার্তা দিতে চেয়েছেন দীর্ঘ মেয়াদে সংঘাতে প্রস্তুতির কথা।যেমনটি পরে বাইডেনও ভাষণে বলেছেন।

ভাষণে পুতিন প্রত্যাশার চেয়ে কম প্রবৃদ্ধির কথা তুলে ধরেছেন।কিন্তু ক্রমবর্ধমান বাজেট ঘাটতির কথা তুলে ধরেননি। প্রতিরক্ষায় বেশি ব্যয় এবং জ্বালানি আয় কমে যাওয়ার ফলে এই ঘাটতি তৈরি হয়েছে।যুদ্ধে নিহত সেনাদের পরিবারকে বিভিন্ন সুবিধা প্রদানের ঘোষণা দিয়েছেন।দেশের অতি ধনীদের দেশে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন।যুদ্ধের বিরোধিতাকারী রুশদের প্রতি নমনীয় হওয়ার ইঙ্গিত দিয়েছেন।কিন্তু বাস্তবে রাশিয়ায় রাজনৈতিক বন্দিদের সঙ্গে যে আচরণ করা হচ্ছে তাতে এই নমনীয়তা আকাশকুসুম কল্পনা বলে মনে হচ্ছে।

এমনকি নিউ স্টার্ট চুক্তি থেকে রাশিয়াকে প্রত্যাহারের ঘোষণাও একটি বিভ্রম।চুক্তিটিতে কোনও দেশের নিজেকে প্রত্যাহারের কোনও ধারাই নেই।আর যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র প্রতিযোগিতা শুরু করার মতো অবস্থায় নেই পুতিন।কিন্তু পারমাণবিক নিরাপত্তা অবকাঠামোর এটিই শেষ পদক্ষেপ।ফলে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সুবিধা পাওয়ার সুযোগ রয়েছে এবং পারমাণবিক হুমকি ফুলিয়ে রাখবে।

শেষ পর্যন্ত পুতিনের ভাষণ হলো মিথ্যাচার,অন্ধকার,আত্ম-করুণাময় বিচ্ছিন্নতায় ভরপুর।অপর দিকে বাইডেনের ভাষণে ছিল সর্বজনীন মূল্যবাধ,আশাবাদ ও মিত্রতার মূল্যবোধ।

আরও খবর

Sponsered content